মোঃ ইলিয়াছ আহমদ, বরুড়া
কুমিল্লার বরুড়া শহীদ স্মৃতি সরকারি ডিগ্রি কলেজ থেকে এবার এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েছেন মাহি। ২৮ নভেম্বর ২৩ এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হওয়ার কথা রয়েছে। মেধাবী ছাত্র মাহী (১৯) জানবে না আর তার এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফলের কথা। বিজ্ঞানে পড়তো মাহি। পলিট্যাকনিকেলে পড়ার ইচ্ছে ছিলো তার। স্বল্প আয় দিয়ে পরিবারের চলা। স্বপ্ন থেমে গেছে মাহির পরিবারের। ২ ভাই ১ বোন, মাহি দ্বিতীয়। ১০ নভেম্বর ২৩ ইং রাত আনুমানিক ২ টার দিকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গেছেন এক বন্ধুর আত্বীয় সিজারিয়ান অপারেশনের রোগী কে রক্ত দিতে। রক্ত দান করে রাতে মাহি ও আদি নামে দুই বন্ধু এবং শিফাত ও পিন্টু নামে অপর দুই বন্ধু দুটো মোটরসাইকেল দিয়ে বরুড়া বাড়ির উদ্দেশ্য চলে আসে। একেবারে বাড়ির কাছাকাছি লতিফপুর নামক স্হানে এসে আদি মোটরসাইকেলের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাছের সাথে ধাক্কা মেরে দু’জনই মোটরসাইকেল থেকে ছিটকে পড়ে যায়। পেছনে মোটরসাইকেলে থাকা শিফাত ও পিন্টু নামে দু বন্ধু তাদের কে উদ্বার করে বরুড়া সরকারী হসপিটাল নিয়ে আসে।।
১২ নভেম্বর ২৩ ইং তার পরিবার এক্স – রে করলে ডাক্তার জানান তার পা দুটো ভেঙ্গে গেছে। অপারেশন এর জন্য পরিবার প্রথমে ট্রমা হসপিটাল কুমিল্লা, পরে নিউ ভিশন হসপিটাল নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে রাতে আইসিওতে মাহির মৃত্যু হয়।
শিফাত জানান, দুটো মোটরসাইকেল করে আমরা ৪ বন্ধু রোগী কে রক্ত দিয়ে রাতে বাড়িতে আসছিলাম। লতিফপুর গ্রামের এসে হঠাৎ আদির মোটরসাইকেল টি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাছের সাথে ধাক্কা লেগে দুজনে ছিটকে পড়ে যায়। আমি ও পিন্টু, মাহি ও আদি কে উদ্বার করে বরুড়া সরকারী হসপিটাল নিয়ে আসি। মাহির পা দুটো ভেঙ্গে যায়। আদির মুখে সেলাই লাগে ও চোখে আঘাত পেয়েছে। মাহির পরিবার মাহি কে অপারেশন করার জন্য প্রথমে ট্রমা হসপিটাল নিয়ে যায়। সেখানে অপারেশন ফি বেশী মনে হওয়ায় পরে ভিশন হসপিটাল ট্রমা ইউনিটে নিয়ে যাওয়া হয়। রাতে মাহির শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে আইসিওতে।নেওয়া হয়। রাতে মৃত্যুর কবলে চলে যায় মাহি।
জিসান (আদি) মুখে ও চোখে আঘাত লেগেছে। মুখে কয়েকটি সেলাই লেগেছে। সে বাসায় চিকিৎসারত অবস্থায় আছে।
মানবিক সামাজিক ছেলে মাহির মৃত্যুর সংবাদ এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে শোকের ছায়া নেমে আসে বরুড়ায়। মাহি সাথে বরুড়া হাজী নোয়াব আলী পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের জিপিএ ৫ পাওয়া ১৩৪ জন শিক্ষার্থী তাদের গ্রুপে মৃত্যুর খবর জানালে ঢাকা, চট্টগ্রাম কুমিল্লা সহ বিভিন্ন জেলা থেকে অবরোধ দিয়ে চলে আসে অনেক শিক্ষার্থী। ১৩ নভেম্বর ২৩ ইং সকাল ১০ টার বরুড়া পুরাতন মাদরাসায় প্রথম জানাজার দৃশ্য ছিলো যেন উর্তি যুবকদের মিলন মেলা। সকলের চোখে পানি, মুখে কান্না। এ দৃশ্য আগত জানাজা আসা লোকজনের মাঝে ও কান্নার রোল পড়ে।
দুপর ১২ টায় দ্বিতীয় জানাজা শেষে পৈত্রিক বাড়ি উপজেলার ভাউকসার স্কুল মাঠে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করে তাঁকে।
মাহি চলে গেছে ক্লাস মিট বন্ধুদের কান্না থামেনি।
এ দৃশ্য যারা দেখেছে তাঁরাই বলতে পারবে এটা কেমন দৃশ্য। সবাই কান্না করছে। চোখে পানি পড়ছে। কোন শব্দ নেই। দৃশ্য টি দেখে নিজের ও মনের অজান্তে চোখের পানি আসে। জানাজা শেষে একটি শব্দ কানে আসে হে আল্লাহ তাঁকে জান্নাত বাসী করিও।
মাহির বন্ধু কুমিল্লা থেকে আসা ইশতিয়াক আহমদ তকি বলেন, আমি আর মাহি প্রাথমিক বিদ্যালয়, হাই স্কুল ও কলেজে এক সাথে একই প্রতিষ্ঠানে লেখা পড়া করেছি। সে আমার বাল্য বন্ধু। তাঁর মৃত্যু টি আমাকে অনেক কষ্ট দিচ্ছে। সে ধার্মিক ছিলো। মুখে দাঁড়ি ছিলো। আমি আল্লাহ তায়ালার কাছে তার রুহের মাগফেরাত কামনা করি।
মাহির বাবা আতিকল ইসলাম প্রবাস জীবন কাটিয়ে বরুড়া গ্রামে ১৩ শতক জমি কিনে টিন সেট বাড়ি বানিয়ে ভাড়া দিয়ে জীবন যাপন করছে। সল্প আয় দিয়ে স্বপ্ন ছিলো মাহি কে পলিট্যাকনিকেলে পড়াবে। স্বপ্ন স্বপ্নই রয়ে গেলো পিতা আতিকুল ইসলামের।পড়া হলো না আর মাহির পলিট্যাকনিকেলে।