গাজীপুর মহানগরীর কাশিমপুরের রুপাইতলি মৌজায় প্রাধনমন্ত্রী আত্মীয় পরিচয়ে বিশাল বাশঁঝাড়সহ জমি দখলের অভিযোগ পাওয়া গেছে গোপালগঞ্জ টুঙ্গিপাড়ার আলমগীর হোসেন নামে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে। সাড়ে ৭ একর জমি তিনি খোলাবায়না সূত্রে মালিক দাবি করে প্রভাব খাটিয়ে দখলের চেষ্টা করছেন।
দখলদারীত্বে ওই জমিতে যে সাইনবোর্ড লাগিয়েছেন তাতে সাত জনের নাম উল্লেখ্য করা হয়েছে। যাদের কাউকেই ওই এলাকায় স্থানীয়রা চিনেন না। এছাড়া যে দাগ নাম্বার লেখা হয়েছে তাও ভুল। এমনকি একটি মোবাইল নাম্বার ব্যবহার করা হয়েছে তা ১২ ডিজিটের। এবিষয়ে থানা পুলিশসহ স্থানীয়ভাবে মিমাংসার চেষ্টা করলে দখলকারী আলমগীর ভয় ভীতি প্রদর্শন করে। বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর নজরে আসার জন্য পরবর্তীতে এলাকাবাসী মাববন্ধন করেছে।
সরেজমিনে কাশিমপুর সরুপাইতলি গিয়ে দেখা গেছে, গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ার শিন্নি পাড়া এলাকার রফিক নামে এক ব্যক্তিসহ ১০-১৫ বহিরাগত দখলদার আলমগীরের আত্মীয় পরিচয় দিয়ে ওই জায়গা দুটি টিনের ছাপড়াঘর তৈরি করে বসবাস করছেন। তাদের সাথে কয়েকজন নারীও রয়েছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, একটি ঘরের ভেতর বেশ কয়েকজন নারী ও দেশীয় অস্ত্র সস্ত্র রয়েছে।
রফিকের সাথে কথা হলে তিনি জানান, তার বন্ধু আলমগীর ওই জায়গা ক্রয় করেছেন। আলমগীরের পক্ষে ওই জায়গা পাহারা দিতে তিনি সেখানে গিয়েছেন। আলমগীর গোপালগঞ্জ টুঙ্গিপাড়া আওয়ামী লীগের নেতা।
জমির মূল মালিক দাবিকারী বৃদ্ধ মহিউদ্দিন জানান, তার পিতা কলিম উদ্দিন জীবদ্দশায় সমস্ত সম্পত্তি তাদের চার ভাইকে দলিলমূলে হস্তান্তর করে যান। পরবর্তীতে তার এক ভাই গিয়াস উদ্দিনের অংশ তিনি কিনে নেন। তার পিতা কলিম উদ্দিন ও ভাই গিয়াস উদ্দিন সমস্ত সম্পত্তি বিক্রি করে নিঃস্বত্ববান হওয়ার পরও গিয়াস উদ্দিনের ছেলে হারুন সস্প্রতি সাড়ে ৭ একর জমির মালিকানা দাবি করছেন। নিঃস্বত্ববান কলিম উদ্দিনকে দাতা দেখিয়ে ১৯৮৫ সালের ৩০ অক্টোবর ঢাকা সদর সাবরেজিস্ট্রি অফিসে একটি দলিল (নং-২৪০৪০) নিবন্ধনও দেখানো হয়।
মহিউদ্দিনের ছেলে অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম বলেন, আইন অনুযায়ী ওই দলিলের কোনো কার্যকারিতা নেই। কারণ, ওই জমি গাজীপুরের, আর দলিল হয়েছে ঢাকায়। তাছাড়া বিতর্কিত ওই দলিলের দাতা কলিম উদ্দিন আরো আগেই সমস্ত জমি হস্তান্তর করে নিঃস্বত্ববান হয়েছেন। দীর্ঘ প্রায় ৩৮ বছর যাবত তারা শান্তিপূর্ণভাবে এসব জমি ভোগদখল করছেন। জমির নামজারি জমাভাগও (খারিজ) তার পিতার নামে। তাদের সম্পূর্ণ নিষ্কণ্টক মালিকানার বিষয়টি জেনেও প্রধানমন্ত্রীর আত্মীয় পরিচয়ে জনৈক আলমগীর নিঃস্বত্ববান গিয়াস উদ্দিনের ছেলে হারুনের কাছ থেকে কথিত বায়নামূলে উক্ত জমির মালিকানা দাবি করছেন এবং তাদেরকে মিথ্যা মামলায় জেলে দেওয়ার ভয়ভীতি দেখিয়ে দলবল নিয়ে প্রকাশ্যে জমিতে টিনের ছাপড়াঘর উঠিয়ে জবরদখলের চেষ্টা করেন। জবরদখলের সময় তিনি কাশিমপুর থানার সহযোগিতা চাইলে থানার ওসি ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠাতে অপারগতা প্রকাশ করে তাকে জানান, তিনি অন্যত্র বদলি হয়ে যাবেন তবুও সেখানে পুলিশ পাঠাতে পারবেন না।
এব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর আত্মীয় পরিচয়দানকারী আলমগীরের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, জমিটি আমি বায়নাসূত্রে কিনেছি। মহিউদ্দিন ওই জমির মালিক না, মহিউদ্দিনের ভাই গিয়াস উদ্দিন জমির প্রকৃত মালিক।
তিনি প্রধানমন্ত্রীর আত্মীয় কিনা জানতে চাইলে বলেন, আমরা প্রধানমন্ত্রীর পাড়া প্রতিবেশী, হ্যালিপ্যাডের কাছে বাড়ি।
এবিষয়ে গাজীপুর মেট্রোপলিটন কাশিমপুর থানা ওসি সৈয়দ রাফিউল করিম বলেন, জমি দখলের বিষয়টি আমার জানা নেই। কেউ এ বিষয়ে আমার কাছে অভিযোগ করেননি। হয়তোবা এমন হতে পারে আমাদের কাছে এসেছে যেহেতু জমি সংক্রান্ত বিষয়ে পুলিশ হস্তক্ষেপ করে না তাই আদালতের মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের কথা বলা হয়েছে।