ঢাকা ০১:৫৬ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৩, ২১ অগ্রহায়ণ ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
Logo চাঁপাইনবাবগঞ্জে পৃথক অভিযানে হেরোইন ও ফেন্সিডিল উদ্ধার সহ আটক ৩ Logo হারানো মোবাইল উদ্ধারে তৎপরতা বাড়ানোর নির্দেশ Logo পাবনা-২ আসনে প্রার্থিতা ফেরত পেতে ডলি সায়ন্তনীর আপিল Logo নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্গনের অভিযোগে ফেনী-১ আসনের আ.লীগ প্রার্থীকে তলব Logo সুন্দরগঞ্জে বোরো বীজ ও সার বিতরণ Logo গুলশানের নিধি ট্রেড ইন্টারন্যাশনালকে ৪ লাখ টাকা জরিমানা Logo সিংড়ায় মেয়রের গাড়ি, ২টি অ্যাম্বুলেন্সসহ ১১টি যানবাহন আগুনে Logo ২৮ অক্টোবর থেকে সারা দেশে ২৫৩টি স্থানে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা Logo কিউবার প্রধানমন্ত্রী সফর চীন-কিউবার মধ্যে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্কে প্রভাব ফেলবে Logo বেলারুশ-চীন সর্বজনীন সার্বিক কৌশলগত অংশীদারিত্বের সম্পর্কের বিকাশ ঘটাবে; লুকাশেঙ্কো

ঢাকায় ঐতিহ্যবাহী নৌকার হাট

দেবাশীষ সরকার, খিলগাঁও, ঢাকা: ঢাকা দক্ষিন সিটির ৭৫ নং ওয়াড়ের বালুরপাড় গ্রামের কায়েতপাড়া বাজারের নৌকার হাট।শুভ সরকার রাজধানীর খিলগাঁও থানার নাসিরাবাদ ইউনিয়নের ইদারকান্দি গ্রামের বাসিন্দা। শুকনো মৌসুমে সড়ক দিয়ে এলাকায় চলাফেরা করতে পারলেও বর্ষা মৌসুমে নৌকাই তাঁর পরিবারের একমাত্র ভরসা। তাঁর পুরোনো নৌকা নষ্ট হয়ে যাওয়ায় তিনি বৃহস্পতিবার গিয়েছিলেন নাসিরাবাদ ইউনিয়নের বালুরপার গ্রামের কায়েতপাড়া বাজারের নৌকার হাটে।ঢাকার নিম্নাঞ্চলের বাসিন্দাদের জন্য প্রতি বৃহস্পতিবার কায়েতপাড়া বাজারে বসে নৌকার হাট। সকাল ছয়টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এই হাট চলে। বৃহস্পতিবার ছাড়াও প্রতিদিন সেখানে নৌকা বেচাকেনা হয়। নৌকা কেনার পর নৌকায় করেই সেটি পরিবহন করতে হয়।দূরদূরান্ত থেকে ক্রেতারা এই হাটে আসেন নৌকা কিনতে।কায়েতপাড়া বাজারের নৌকা তৈরির সময় তিন-চারজন কারিগরের সঙ্গে কথা হয়। তাঁরা বলেন, ১০০ বছরের বেশি সময় ধরে এখানে নৌকার হাট বসছে। এটিই ঢাকার সবচেয়ে পুরোনো নৌকার হাট।নৌকার কারিগরেরা জানান, বর্ষা মৌসুমে ঢাকার বিভিন্ন নিচু এলাকা ডুবে হয়ে যায়। সে সময় নৌকাই হয়ে ওঠে সেসব এলাকার বাসিন্দাদের যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম। এ ছাড়া অনেকে ঢাকার আশপাশে বাড়ি বানিয়েছেন, কিন্তু এখনো রাস্তা হয়নি। তাঁরাও বর্ষাকালে নৌকার ওপর নির্ভরশীল। আবার নিম্নাঞ্চলের অনেক লোক মাছ ধরার জন্যও নৌকা কেনেন। তাছাড়া নদী বা পুকুর থেকে গরুর জন্য কচুরি পানা কাটার জন্যও অনেকে নৌকা কেনেন ৷নৌকা ব্যবসায়ীরা বলেন, কায়েতপাড়া বাজারে মূলত ৮ থেকে ১১ হাত মাঝারি আকারের নৌকা বেশি তৈরি হয়। এই আকারের প্রতিটি নৌকা তৈরি করতে তিন-চার ঘণ্টা সময় লাগে। প্রতিটি নৌকা বানাতে দুজন কাজ করেন। একজন শ্রমিক একটি নৌকা তৈরিতে পারিশ্রমিক পান ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা। অনেকে শুধু বর্ষাকালে চার-পাঁচ মাসের জন্য মৌসুমি ব্যবসা করেন। বর্তমানে ১৫-২০ জন শ্রমিক কায়েতপাড়া বাজারে নৌকা তৈরির কাজ করেন। প্রদিপ সরকার নামের একজন নৌকার ব্যবসায়ী বলেন, আগে সপ্তাহে হাটে প্রায় দেড় শ নৌকা বিক্রি হতো। এখন বিভিন্ন জায়গা ভরাট করে ফেলায় নৌকার বিক্রি কমেছে।কারিগর ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নৌকা তৈরির জন্য কাঠ আসে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের তারাব থেকে। নৌকার মূল কাঠামো তৈরি করা হয় কেরোসিন কাঠ দিয়ে। আর গজারি কাঠ দিয়ে তৈরি করা হয় বইঠা। ১৬ ফুটের একটি নৌকা বানাতে প্রায় আট হাজার টাকা খরচ হয়। ভালো মানের একটি নৌকার দাম পড়ে ১২ থেকে ১৪ হাজার টাকা। বর্ষাকালে প্রতি সপ্তাহে ৫০-৬০টি নৌকা বিক্রি হয়। নৌকা কেনার পর ক্রেতাদের বাজারের ইজারাদারকে প্রতি হাজারে ১০০ টাকা করে দিতে হয়। চন্দন নামের একজন নৌকা ব্যবসায়ী বলেন, ‘৪০-৫০টি নৌকা বিক্রি করে মাসে ২০-২৫ হাজার টাকা আয় হয়। এই নৌকার হাটে বাড্ডা, সাতারকুল, ডেমরা, মুড়াপাড়া ও রূপগঞ্জ থেকে ক্রেতা আসেন। তবে এখন হাট আগের মতো জমে না। আগে নৌকা তৈরির জন্য অনেক শ্রমিক ছিলেন। এখন তাঁরা বিভিন্ন দিকে চলে গেছেন।

আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

চাঁপাইনবাবগঞ্জে পৃথক অভিযানে হেরোইন ও ফেন্সিডিল উদ্ধার সহ আটক ৩

ঢাকায় ঐতিহ্যবাহী নৌকার হাট

আপডেট সময় ০৫:৩২:৪৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৪ মে ২০২৩

দেবাশীষ সরকার, খিলগাঁও, ঢাকা: ঢাকা দক্ষিন সিটির ৭৫ নং ওয়াড়ের বালুরপাড় গ্রামের কায়েতপাড়া বাজারের নৌকার হাট।শুভ সরকার রাজধানীর খিলগাঁও থানার নাসিরাবাদ ইউনিয়নের ইদারকান্দি গ্রামের বাসিন্দা। শুকনো মৌসুমে সড়ক দিয়ে এলাকায় চলাফেরা করতে পারলেও বর্ষা মৌসুমে নৌকাই তাঁর পরিবারের একমাত্র ভরসা। তাঁর পুরোনো নৌকা নষ্ট হয়ে যাওয়ায় তিনি বৃহস্পতিবার গিয়েছিলেন নাসিরাবাদ ইউনিয়নের বালুরপার গ্রামের কায়েতপাড়া বাজারের নৌকার হাটে।ঢাকার নিম্নাঞ্চলের বাসিন্দাদের জন্য প্রতি বৃহস্পতিবার কায়েতপাড়া বাজারে বসে নৌকার হাট। সকাল ছয়টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এই হাট চলে। বৃহস্পতিবার ছাড়াও প্রতিদিন সেখানে নৌকা বেচাকেনা হয়। নৌকা কেনার পর নৌকায় করেই সেটি পরিবহন করতে হয়।দূরদূরান্ত থেকে ক্রেতারা এই হাটে আসেন নৌকা কিনতে।কায়েতপাড়া বাজারের নৌকা তৈরির সময় তিন-চারজন কারিগরের সঙ্গে কথা হয়। তাঁরা বলেন, ১০০ বছরের বেশি সময় ধরে এখানে নৌকার হাট বসছে। এটিই ঢাকার সবচেয়ে পুরোনো নৌকার হাট।নৌকার কারিগরেরা জানান, বর্ষা মৌসুমে ঢাকার বিভিন্ন নিচু এলাকা ডুবে হয়ে যায়। সে সময় নৌকাই হয়ে ওঠে সেসব এলাকার বাসিন্দাদের যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম। এ ছাড়া অনেকে ঢাকার আশপাশে বাড়ি বানিয়েছেন, কিন্তু এখনো রাস্তা হয়নি। তাঁরাও বর্ষাকালে নৌকার ওপর নির্ভরশীল। আবার নিম্নাঞ্চলের অনেক লোক মাছ ধরার জন্যও নৌকা কেনেন। তাছাড়া নদী বা পুকুর থেকে গরুর জন্য কচুরি পানা কাটার জন্যও অনেকে নৌকা কেনেন ৷নৌকা ব্যবসায়ীরা বলেন, কায়েতপাড়া বাজারে মূলত ৮ থেকে ১১ হাত মাঝারি আকারের নৌকা বেশি তৈরি হয়। এই আকারের প্রতিটি নৌকা তৈরি করতে তিন-চার ঘণ্টা সময় লাগে। প্রতিটি নৌকা বানাতে দুজন কাজ করেন। একজন শ্রমিক একটি নৌকা তৈরিতে পারিশ্রমিক পান ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা। অনেকে শুধু বর্ষাকালে চার-পাঁচ মাসের জন্য মৌসুমি ব্যবসা করেন। বর্তমানে ১৫-২০ জন শ্রমিক কায়েতপাড়া বাজারে নৌকা তৈরির কাজ করেন। প্রদিপ সরকার নামের একজন নৌকার ব্যবসায়ী বলেন, আগে সপ্তাহে হাটে প্রায় দেড় শ নৌকা বিক্রি হতো। এখন বিভিন্ন জায়গা ভরাট করে ফেলায় নৌকার বিক্রি কমেছে।কারিগর ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নৌকা তৈরির জন্য কাঠ আসে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের তারাব থেকে। নৌকার মূল কাঠামো তৈরি করা হয় কেরোসিন কাঠ দিয়ে। আর গজারি কাঠ দিয়ে তৈরি করা হয় বইঠা। ১৬ ফুটের একটি নৌকা বানাতে প্রায় আট হাজার টাকা খরচ হয়। ভালো মানের একটি নৌকার দাম পড়ে ১২ থেকে ১৪ হাজার টাকা। বর্ষাকালে প্রতি সপ্তাহে ৫০-৬০টি নৌকা বিক্রি হয়। নৌকা কেনার পর ক্রেতাদের বাজারের ইজারাদারকে প্রতি হাজারে ১০০ টাকা করে দিতে হয়। চন্দন নামের একজন নৌকা ব্যবসায়ী বলেন, ‘৪০-৫০টি নৌকা বিক্রি করে মাসে ২০-২৫ হাজার টাকা আয় হয়। এই নৌকার হাটে বাড্ডা, সাতারকুল, ডেমরা, মুড়াপাড়া ও রূপগঞ্জ থেকে ক্রেতা আসেন। তবে এখন হাট আগের মতো জমে না। আগে নৌকা তৈরির জন্য অনেক শ্রমিক ছিলেন। এখন তাঁরা বিভিন্ন দিকে চলে গেছেন।