
“দাম্পত্য কলহ চৈব”
অরবিন্দ সরকার
বহরমপুর, মুর্শিদাবাদ।
ভোম্বল দাস এবছর জানুয়ারি মাসে বিয়ে করেছিলো সুদর্শনা নামক একটি মেয়েকে। নাম শুনেই বিয়েতে সম্মতি জানাই ভোম্বল তার বাবাকে। ঘটা করে বিয়ে সম্পন্ন হয়েছিলো কিন্তু বিয়ের আসরে সত্যি সত্যিই সুদর্শনার চেহারা ফুটে উঠেছিলো বিউটি পার্লারের সহায়তায়। বাসর ঘরে যখন ভোম্বল ঢুকেছিলো তখনও মেক আপে বুঝতে পারেনি তাকে। সকাল বেলায় বিধ্বস্ত এলোমেলো সুদর্শনা মুখ ধুয়ে বাথরুম থেকে বেরোতেই,ঝুলি থেকে বেড়াল বেরিয়ে পড়লো। ভোম্বল তখন অনুভব করছে তার দেহে বিড়ালের আঁচড়।
বাবাকে সম্মতি যখন দিয়েছে তখন এ গেলা ছাড়া উপায় নেই তাঁর। বারবার মনে প্রশ্ন জাগছে মনে, কেন একবার আগে দেখে এলাম না?
সুদর্শনা বলেছিলো ,কি ভাবছো কি? শুধু বিড়বিড় করছো মনে মনে? আমাকে বলো দেখি সুরাহা করতে পারি কিনা?
ভোম্বল উত্তরে বলেছিলো,যার ভাবনা সেই ভাবতে পারে, অন্যজন বৃথা?
সুদর্শনা বলেছিলো – তোমার তো নামের সঙ্গে অমিল? ভোম্বল মানে মোটাসোটা কিন্তু তুমি তো তালপাতার সেপাই?
সারাবছর কেটে গিয়ে এবার বছর শেষ হ’তে চলেছে! সুদর্শনা বললো , পুরোনো অতীত, তাকে ভুলে গিয়ে সামনের বছরের নতুন দিনগুলো ভাবতে হবে আমাদের!
ভোম্বল বললো, নতুন আর পুরোনো কোনো তফাত নেই? তুমি কি হেমা মালিনী হতে পারবে?
সুদর্শনা বললো তুমি মনে করলেই আমি হেমা মালিনী হতে পারবো! শুধু কল্পনায় এগুলো আঁকতে হয় মনে।
ভোম্বল বললো, তুমি ঠিক বলেছো, হ্যারিকেন নিভিয়ে যদি ভাবি তাহলে সত্যিই তুমি হেমা মালিনী।আর সব নারীর শরীর তো এক?
সুদর্শনা বললো – এইতো বুঝতে পেরেছো! তাহলে সামনের বছর থেকে পিছন ফিরে শোবে না বলো? সব জায়গায় আমাকে সঙ্গী করে নিয়ে যাবে বলো? শ্বশুরবাড়ি তুমি যাওনা, একা একা আমি যাই আবার একা একাই ফিরে আসি। না হয় তোমার জন্য আবার কোথাও গেলে মেক আপ করেই যাবো! তাহলে তো অসুবিধা হবে না?
ভোম্বল – মেকআপ করে বেরিয়ে, সেই মেকআপ থাকবে এমন গ্যারান্টি কোথায়? দেওয়ালের পলেস্তারা খসে পড়লে বাড়ীর জীর্ণদশা দেখতে পাওয়া যায়। তাই রাস্তায় ঝড় বৃষ্টি হলে তুমি একেবারেই উদোম হয়ে যাবে। বৃষ্টিতে তোমার মুখখানা ভূগোলের গ্লোবের মানচিত্র হয়ে যাবে? তার চেয়ে বলো,আগামী বছরে কোনো কলহ নয়! যে যার রূপ নিয়েই অগ্রসর হবো! কাক কখনো ময়ূর হয়না সাজলে?
সুদর্শনা – আমাকে কাকের সঙ্গে তুলনা করলে? তুমি তো কাকতাড়ুয়া? আলে বিলে খালে গড়াগড়ি খাওয়া মাল। শুধু বাতাসে পতপত শব্দ তোমার? এমনি তোমার কোনো ক্ষমতাই নেই? শেয়াল যতোই ধূর্ত হোক ,সে কি বনের বাঘ হ’তে পারবে?
ভোম্বল – আমাকে শেয়ালের সঙ্গে তুলনা করছো? আমি কি হুক্কাহুয়া করি? না কারো বাড়ীর আঙ্গিনায় হাঁস মুরগি ছাগল ভেড়া খেতে যাই? আমি তোমার সঙ্গেই থাকি মুখ ফিরিয়ে শুয়ে থাকি কিন্তু পরকীয়া করতে যাইনা?
সুদর্শনা – পরকীয়া করতে গেলে গ্যাঁটের কড়ি লাগবে? তোমার মর্দানি আছে যে ফুটানি করবে?
আমাকে কতোজন কতো ভাবে চেষ্টা করেছে! আমি সব কিছু উপভোগ করতাম।বেশ ভালোই লাগতো ওদের প্রেম নিবেদনের ছিঁড়ি দেখে!
ভোম্বল – তুমি তো তাহলে পাকা খেলোয়াড়? সব গিলে খেয়ে আমার কাছে রোমন্থন করছো? আর তোমার সঙ্গে একসঙ্গে থাকার মতো আমার যোগ্যতা নাই। তুমি বাজারের মেয়ে?
সুদর্শনা – আবার শুরু করলে? তাহলে তো আর আগামীবর্ষেও শেষ হবে না?
ফুল ফুটলে সবাই তাকায়,গন্ধ শুঁকে! তোমার হয়তো ভাগ্য হয়নি ফুল ফোটা দেখার অথবা গন্ধ শুঁকে দেখার। হয়তো তোমাকে কেউ তেমন পাত্তাই দেইনি? তুমি গোবর গনেশ তাই নাম শুনেই মতামত দিয়েছো! কোথায় ঝাঁপ মারছো তার মাপ জানা নেই তোমার? জলে নেমে দেখতে হয় কতোটা জল। কুয়োর ব্যাঙ তাকে সমুদ্রের কথা বলা মূর্খতা?
ভোম্বল – আমি কুয়োর ব্যাঙ? জানো আমার কতো সুনাম। সবাই বলে এমন ভালো ছেলে মেলা ভার?
সুদর্শনা – সে ঠিক কথা, তুমি কার্তিক কিন্তু কার্তিককেও কেউ বলে,কেলো কার্তিক, কেউ বলে ধলো কার্তিক, আবার কারো বাড়ি ঢুকলে শালো কার্তিকও বলে?
কি ভুল করেছি তোমার মতো ছেলেকে বিয়ে ক’রে? এর চেয়ে গলায় কলসী বেঁধে ডুবে মরা অথবা গলায় দড়ি বেঁধে ঝুলে পরা ভালো ছিলো?
ভোম্বল – তোমাদের গুষ্টির মনে হয় কুষ্টি নাই? তোমার রাক্ষসগন, আমার দেবগন! দেখি পঞ্জিকাটা খুলে! ও মা এযে চলতেই থাকবে “দাম্পত্য কলহ চৈব”! দেবতার সঙ্গে রাক্ষস অসুরের যুদ্ধ লেগেই থাকবে? এ আইনের পথে এফিডেভিট করে মুক্ত হওয়ার জো নেই।