মোহাম্মদ আজগার আলী, ফুলবাড়ী (দিনাজপুর)
শীতরে আগমনরে সাথে সাথে গ্রাম-বাংলার ঐতহ্যি খজেুর রস সংগ্রহ ও রস থেকে গুড় তৈরীতে ব্যস্ত সময় পার করছেন মৌসুমী গাছিরা। শীতের ভরা মৌসুমে রস সংগ্রহের জন্য শীতের আগমনের শুরু থেকেই খজেুর রস সংগ্রহে মেতে উঠে তারা। অযত্ন আবহেলায় পড়ে থাকা খেজুর গাছরে কদর বেড়েছে। তেমনি দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে রেল লাইনের দুই পাশে মালিক বিহীন শতশত খেজুরের গাছ বর্তমানে অর্থ উপার্যনের মাধ্যম হয়ে দাড়িয়েছে।
সরজমিনে দেখা যায়, ফুলবাড়ী ও বিরামপুর উপজেলার মধ্যবর্তী এলাকা বারোকোনা ও চক সাহাবাজপুর গ্রামের দক্ষিণে রেল লাইনের দুই পাশে থাকা মালিবিহীন শত শত খেজুরের গাছ। সেই গাছকে পরিচর্চা করে খেজুরের রস ও গুড় তৈরী করে লাভবান হচ্ছেন রাজশাহী থেকে আসা গাছিরা। খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহের উদ্দেশ্যে শীত শুরু হওয়ার এক মাসে পূর্বেই এই এলাকায় আসেন গাছিরা। তারা ফাঁকা নির্জন জায়গায় বসবাসের মতো একটি ঘর নির্মান করে সেখানে থেকে রেলের মালিক বিহীন খেজুর গাছ গুলো পরিচর্চা শুরু করেন। বর্তমানে সেই গাছ থেকে তারা দৈনিক দুই থেকে আড়াই শত লিটার রস নামান এবং সেই রস জাল দিয়ে গুড়ে রুপান্তর করে বিক্রয় শুরু করেছেন। প্রতি কেজি গুড় দুই শত টাকা ও রস প্রতি লিটার ৫০ টাকা দরে বিক্রয় করছেন তারা। এই অঞ্চলে খেজুরের তেমন কোন বাগান বা চাষি নেই। ফলে এখানকার মনুষ খেজুরের গুড় তৈরী দেখতে অভস্থ্য নয়। তাই প্রথমবারের মতো গাছিদের খেজুর গুড় তৈরী করা দেখতে ভিড় করছেন সব বয়সী মানুষ। এদিকে প্রতিদিন গাছ থেকে রসের হাড়ি চুরি হওয়ায় বিপাকে আছেন গাছিরা।
খেজুরের রস খেতে ও খেজুরের গুড় তৈরী দেখতে আসা আশরাফুল ইসলাম বলেন, আমরা সাধারণত আঁখ চাষ করে থাকি এবং আঁখের গুড় তৈরী দেখেছি। আমাদের এই অঞ্চলে সরকারী ও বেসরকারী ভাবে কোন খেজুরের বাগান নাই বললেই চলে। তবে অনেক বছর আগে স্থানীয়রা রেল লাইনের দুই পাশে খেজুরের গাছ লাগিয়েছিলো যার সুফল বর্তমানে আমরা পাচ্ছি। এমন কথা বলেন কবির সরকার, রায়হানুল হক, আরিফ হোসেনসহ অনেকে।
খেজুরের রস ও গুড় বিক্রেতা গাছি রেজাউল ইসলাম জানান, আমরা প্রতিবছর রাজশাহী নাটর থেকে দল বেঁধে রস সংগ্রহের উদ্দেশ্যে এই এলাকায় আসি। আমরা এই পরিত্যাক্ত গাছ গুলোকে যত্নসহকারে পরিস্কার করে রস আসার মতো উপযোগী করে তুলি। একটি খেজুর গাছ আট থেকে ১০ বছর পর্যন্ত রস দেয়। প্রতিবছরে তিন থেকে চার মাস খেজুর গাছ থেকে মিস্টি রস সংগ্রহ করা যায়। যত বেশি শীত পড়বে তত বেশী মিষ্টি রস পওয়া যাবে । আমরা প্রতিদিন সংগ্রহ করা রস জাল দিয়ে পাঠালী ও বাটি গুড় তৈরী করে থাকি। যা বর্তমান বাজারে ২০০ থেকে ২২০ টাকা কেজি দরে বিক্রয় হচ্ছে। আমরা কঠোর পরিশ্রম ও সময় ব্যয় করে এই গুড় তৈরী কাজ চলমান রেখেছি। রাত তিনটা থেকে কাজ শুরু করতে হয় এবং দুপুর পর্যন্ত চলে গুড় তৈরির কার্যক্রম। গুড় তৈরীর কাজ চলমান রাখতে প্রতিদিন আমাদেরকে কঠোর পরিশ্রম করতে হয়।