
মোঃ শরিফুল ইসলাম রাজু
ষ্টাফ রিপোর্টার, ফেনী
ভুক্তভোগী ধর্ষিতা ভিকটিম একজন গৃহিনী ও জীবিকার তাগিদে তার স্বামী ঢাকায় থাকেন। ভিকটিম তার সন্তানাদি নিয়ে নিজ বাড়ি ফেনী জেলার ফেনী সদর থানাধীন অলিপুর গ্রামে বসবাস করেন। ধর্ষিতা ভিকটিমের স্বামীর আপন ছোট ভাই অর্থাৎ ভিকটিমের আপন দেবর জয়নাল আবেদীন @ রুবেল (৩২) এর নিকট ৫০ হাজার টাকা ধার দেয়া বাবদ পাওনা আছে। গত ২৫ মে ২০২৩ খ্রিঃ তারিখ বিকাল আনুমানিক ১৭০০ ঘটিকায় ভিকটিম তার দেবরের নিকট স্বামীর দেয়া পাওনা টাকা আনতে ফেনী সদর থানাধীন ৮নং ধলিয়া ইউনিয়ন বোর্ড অফিসের সামনে গেলে তাকে টাকা দিবে বলে জানায়। ভিকটিম সরল বিশ্বাসে তার দেবরের কথা মত উক্ত স্থানে যাওয়ার পর তার দেবর বলে আর একটু সামনে গিয়ে টাকা দিবে বলে সিএনজি যোগে ফেনীর সদর থানাধীন পূর্ব ধলিয়া এলাকায় একটি টিনের ঘরে নিয়ে গিয়ে বলে ‘পাওনা টাকার স্বাধ আজকে তোকে বুঝাইয়া দিমু’। তখন ভিকটিম কোন কিছু বুঝে উঠার আগেই তার দেবর জয়নাল আবেদীন @ রুবেল এর পরিকল্পনা মোতাবেক উক্ত ঘরে পূর্ব থেকে অপেক্ষমান থাকা আরো ৫/৬ জন বন্ধু মিলে সংঘবদ্ধভাবে ভিকটিমকে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে পালাক্রমে জোরপূর্বক ধর্ষণ ও ধর্ষণের ভিডিও মোবাইলে ধারণ করে। ধর্ষণের পরবর্তীতে ভিকটিমের দেবর জয়নাল আবেদীন @ রুবেলসহ অন্যান্যরা উক্ত ঘটনা সংক্রান্তে আইনের আশ্রয় নিলে কিংবা কাউকে জানালে ধর্ষণের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছেড়ে দিবে বলে ভিকটিমকে হুমকি প্রদান করে। এছাড়াও পাওনা টাকা আর দাবী করবে না মর্মে অলিখিত স্টাম্পে স্বাক্ষর নিয়ে ভিকটিমকে ছেড়ে দেয়। পরবর্তীতে গত ২৭ মে ২০২৩ খ্রিঃ দুপুর আনুমানিক ১৪০০ ঘটিকায় ভিকটিমকে তার বিশ্বাসঘাতক দেবর ফোন করে ২ লক্ষ টাকা দাবী করে এবং টাকা না দিলে ধর্ষণের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছেড়ে দিবে বলে পুনরায় হুমকি প্রদান করে।
পরবর্তীতে উক্ত ঘটনায় ভুক্তভোগী ভিকটিম বাদী হয়ে ০৪ নামীয় এবং ২/৩ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে ফেনী জেলার ফেনী মডেল থানায় একটি গণধর্ষণের মামলা দায়ের করেন। যার মামলা নং-৫৮/৩০০, তারিখ- ২৮ মে ২০২৩ ইং, ধারা- ৯(৩) নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ (সংশোধিত ২০২০), তৎসহ ৮ (১)/৮(২) পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১২ তৎসহ ৩৮৬/৫০৬ পেনাল কোড ১৮৬০।
উক্ত অমানবিক, পাশবিক ও নিকৃষ্ট ঘটনার প্রেক্ষিতে মামলা রুজু হওয়ার পর থেকে র্যাব-৭, চট্টগ্রাম মামলার এজাহারনামীয় ও অজ্ঞাতনামা পলাতক আসামীদের গ্রেফতারের লক্ষ্যে ব্যাপক গোয়েন্দা নজরদারি এবং ছায়াতদন্ত অব্যাহত রাখে। নজরদারীর এক পর্যায়ে র্যাব-৭, চট্টগ্রাম গোপন সংবাদের মাধ্যমে জানতে পারে যে, বর্ণিত মামলায় পুলিশী তদন্ত অনুযায়ী অন্যতম আসামী মোঃ আরিফ @ সোহাগ ফেনী জেলার ফেনী মডেল থানাধীন দক্ষিণ অলিপুর এলাকায় অবস্থান করছে। উক্ত তথ্যের ভিত্তিতে র্যাব-৭, চট্টগ্রামের একটি আভিযানিক দল গত ০৪ অক্টোবর ২০২৩ খ্রিঃ বর্ণিত এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে আসামী মোঃ আরিফ @ সোহাগ (২৮), পিতা- মৃত শরতউল্ল্যাহ, সাং- দক্ষিণ অলিপুর, থানা ও জেলা- ফেনী’কে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। পরবর্তীতে উপস্থিত সাক্ষীদের সম্মুখে আটককৃত আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, সে এবং তার অন্যান্য সহযোগী আসামিদের সহায়তায় ভিকটিমকে জোরপূর্বক পালাক্রমে গণধর্ষণ ও ভিডিও ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছেড়ে দেওয়ার হুমকি প্রদানসহ পাওনা টাকা না দেওয়ার শর্তে জোড়পূর্বক স্টাম্পে স্বাক্ষর গ্রহণ করেছে মর্মে স্বীকার করে এবং মামলার রুজু হওয়ার পর হতেই আইন শৃংখলা বাহিনীর নিকট থেকে গ্রেফতার এড়াতে আত্মগোপন করে ছিল। উল্লেখ্য, গত ০৭ জুলাই ২০২৩ খ্রিঃ তারিখ বর্ণিত মামলার এজাহারনামীয় ০২নং আসামী রাজু (৩০), পিতা- হাফেজ আহাম্মদ, সাং- পূর্ব ধলিয়া, থানা- ফেনী সদর, জেলা -ফেনী’কে র্যাব-৭, চট্টগ্রাম কর্তৃক গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনতে সক্ষম হয়েছে।
গ্রেফতারকৃত আসামি সংক্রান্তে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের নিমিত্তে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।