
নিজস্ব প্রতিবেদক
এবার বিএসইসি’র ডিরেক্টিভস (নির্দেশনা) লঙ্ঘন করে বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) করার অভিযোগ উঠেছে বীমা খাতের প্রতিষ্ঠান প্রাইম ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের বিরুদ্ধে। প্রতিষ্ঠানটি ধারাবাহিকভাবে ‘এ’ ক্যাটাগরিতে না থাকা সত্ত্বেও ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে এজিএম করে এই নির্দেশনা লঙ্ঘন করেছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
বিএসইসি‘র গত ২৭ মার্চ ঢাকা ও চট্রগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই-সিএসই) বরাবর পাঠানো নির্দেশনা দেখা যায়, তালিকাভুক্ত ‘এ’ ক্যাটাগরির যেসব কোম্পানি টানা সর্বশেষ পাঁচ বছর বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) ও বিশেষ সাধারণ সভা (ইজিএম) করেছে, সেসব কোম্পানিগুলোই শুধুমাত্র সশরীরে উপস্থিত না হয়ে অনলাইন ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে এজিএম ও ইজিএম করতে পারবে। কিন্তু প্রাইম ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি ২০১৯ সালে বিনিয়োগকারীদের জন্য কোন লভ্যাংশ ঘোষণাই করতে পারেনি। সে সময় তাদের জেড ক্যাটাগরিতে অবনমনের ঝুঁকিতে ছিলো। পরবর্তীতে ২০২০ সালে এসে কোম্পানি লভ্যাংশ দিলেও বিএসইসি’র সর্বশেষ ৫ বছরের নির্দেশনা পূরণ করতে পারেনি। প্রাইম ইসলামী লাইফ ধারাবাহিকভাবে ‘এ’ ক্যাটাগরিতে ছিলো না। তারপরও তারা কিভাবে বিএসইসির নির্দেশনা উপেক্ষা করে ‘এ’ ক্যাটাগরির কোম্পানির সুবিধা ভোগ করে তা বোধ্যগম্য নয় বলে মত দিয়েছেন বিনিয়োগকারীরা। এই বিষয়ে তারা বিএসইসির হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
এ বিষয়ে কোম্পানির বিনিয়োগকারীরা আরো বলেন, কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদনের উপর কোন কথা বলার সুযোগ না দেয়ার জন্যই কোম্পানির কিছু সুযোগসন্ধানী কর্মকর্তা ডিজিটাল প্ল্যাটফম ব্যবহার করে এর অপব্যবহার করছে। তারা বলেন, বিএসইসি’র স্পষ্ট নির্দেশনাকে অবজ্ঞা করে কোম্পানিতে তাদের একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তারের লক্ষ্যে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মুখ বন্ধ করে দিচ্ছে। এখন ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে কোম্পানি সম্পর্কে যেসব বিনিয়োগকারী প্রশ্ন করেন তার বেশিরভাগই প্রশ্নই এড়িয়ে যান কোম্পানির কর্মকর্তারা। তাই এর প্রতিকার চান বিনিয়োগকারীরা।
এদিকে, বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, বিএসইসি’র নির্দেশনা লঙ্গনের মূলহোতা হিসেবে কাজ করছেন প্রতিষ্ঠানটির কোম্পানি সচিব মাহমুদুল হাসান। যিনি ইতিপূর্বে ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের প্রাক্তন চেয়ারম্যান মো. নজরুল ইসলামের সহযোগী হিসেবে কাজ করেছেন। তিনি ফারইস্ট ইসলামী লাইফের সকল অনিয়ম, দুর্নীতির সাথে সম্পৃক্ত থেকেও পরবর্তীতে নজরুল ইসলামের আস্থাভাজন হিসেবে প্রাইম ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সে এসে সকল কলকাঠি নাড়ছেন। নজরুল ইসলামের নানা অপকর্মের খবর জাতীয় পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত হলেও ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছেন মাহমুদুল হাসান। তার নিদের্শেই বিএসইসির এই নির্দেশনা লঙ্গনের অভিযোগ তোলেন সংশ্লিষ্ট সূত্র।
এদিকে বিশ্বস্ত সূত্রে আরো জানা যায়, প্রাইম ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের প্রাক্তন চেয়ারম্যান নজরুল ইসলামের নির্দেশনা মেনে এখনো কাজ করে যাচ্ছেন মাহমুদুল হাসান। নজরুল ইসলাম এখনো প্রাইম ইন্স্যুরেন্সে ছায়া চেয়ারম্যানের ভূমিকা পালন করে যাচ্ছেন। যার নির্দেশেই সকল পরিচালকদের মতামত উপেক্ষা করে মাহমুদুল হাসান নজরুল ইসলামের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছেন।
বিএসইসি’র এজিএম ও ইজিএম সম্পর্কে নির্দেশনায় আরো জানা যায়, শুরুতে গত ১০ মার্চ ২০২১ এজিএম ও ইজিএম সংক্রান্ত নির্দেশনা জারি করেছিল বিএসইসি। ওই নির্দেশনায় বলা হয়, দেশের উভয় শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) ভ্যানুতে হাইব্রিড সিস্টেম ও শেয়ারহোল্ডারদের স্বশরীর উপস্থিতিতে করতে হবে। এছাড়া যেসব বিনিয়োগকারী ভ্যানুতে সরাসরি উপস্থিত থাকতে পারবেন না তারা যাতে এজিএমের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকতে পারেন সেজন্য অলাইন বা ডিজিটাল পদ্ধতি রাখার কথাও বলা হয়। কোম্পানির ঘোষিত সভায়, স্ব স্ব কোম্পানির চেয়ারম্যান, ম্যানেজিং ডিরেক্টর (এমডি) অথবা চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার ও কোম্পানি সেক্রেটারিকে স্বশরীরে উপস্থিত থাকতেও বলা হয় ওই নির্দেশনায়। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) কমপক্ষে দুইজন করে সিনিয়র অফিসিয়ালকে এজিএমের ভোটের পুরো সিস্টেম পর্যবেক্ষণ করতে নির্দেশনা দেয় বিএসইসি।
নির্দেশনায় আরও বলা হয়, কোম্পানির এজিএমে নির্বাচনের পদ্ধতি ও ভোটের ফলাফল স্টক একচেঞ্জ থেকে অথেনটিকেটেড হতে হবে। একই সঙ্গে কোম্পানির নিয়োগকৃত একজন স্বাধীন স্ক্রটিনাইজার থেকেও অথেনটিকেটেড হতে হবে। ওই অথেনটিকেটেড রিপোর্ট এজিএম হওয়ার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে বিএসইসিতে জমা দিতে হবে।
এর আগে মহামারি করোনা শুরু হওয়ার পর ২০২১ সালের ২৩ মার্চ বিনিয়োগকারীদের স্বশরীরে উপস্থিতির পরিবর্তে হাইব্রিড পদ্ধতি বা ডিজিটাল পদ্ধতিতে এজিএম করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল।