সাজ্জাদ হোসেন শিমুল ও মাগফুজুর রহমান রুবেল, মুরাদনগর থেকেঃ কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নসহ বিভিন্ন জায়গায় থেকে খননযন্ত্র (এক্সকাভেটর) দিয়ে ৩ ফসলি জমির মাটি কেটে ইটভাটায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এ বিষয়ে কোন প্রকার ব্যবস্থা গ্রহণ না করে কর্মকর্তারা দায় চাপাচ্ছেন একে অন্যের উপর। কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা বলেছেন, এভাবে মাটি কেটে নিলে ফসলি জমির উর্বরতা শক্তি কমে গিয়ে ফসল উৎপাদনে বিপর্যয় দেখা দিবে।
ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন—২০১৩—এর ৫ নম্বর ধারায় উল্লেখ আছে, ইট তৈরি করার
জন্য পতিত জমি, খাল, বিল, নদ—নদী, হাওর—বাঁওড় বা চরাঞ্চল থেকে মাটি কেটে নেওয়া যাবে না।
কিন্তু এই আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে মুরাদনগর উপজেলায় গড়ে ওঠা ৪৬টি ইটভাটায় যাত্রাপুর,
পায়র, দারোরা, বড় আলীরচর, সোনাপুর, চাপিতলা, কোড়াখাল, বাবুটিপাড়া, ছালিয়াকান্দি,
বোরারচর, চন্দনাইল, রোয়াচালা, শ্রীকাইল বিলের কৃষিজমি, গোচারণ ভূমি, জলাশয় ও গোমতী
নদের পাড়ের গুঞ্জুর, ত্রিশ, দক্ষিণ ত্রিশ ও ধামঘর এলাকা থেকে মাটি কেটে নেওয়া হচ্ছে। প্রতিবছর
একেকটি ভাটায় প্রায় ৫০—৬০ লাখ ইট উৎপাদন (পোড়ানো) হয়।
৪৬টি ইটভাটার মাটি কাটার জন্য বিলে রয়েছে ২৭ টি খননযন্ত্র ও প্রায় ৩২২টি ট্রাক্টর।
প্রতিদিন ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মাটিভর্তি ট্রাক্টরগুলো ফসলি জমির উপর দিয়ে জোর পূর্বকরাস্তা তৈরি করে চলাচল করছে। এতে ধুলাবালুতে দুই পাশের জমির ফসল বিনষ্ট হচ্ছে। এর বিরুদ্ধে কিছু বলতেও পারছেন না নিরীহ কৃষকেরা। আবার কেউ কেউ লিখিত অভিযোগ দিয়েও পাচ্ছে না প্রতিকার।
যাত্রাপুর ইউনিয়নের কৃষক ছোবাহান মিয়া বলেন, যাত্রাপুর বিলের ৩ ফসলি জমির মাটি কেটে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে চয়নিকা ব্রিকসে। অথচ সেই মাটি ট্রাক্টর দিয়ে নিয়ে যেতে খোদ স্থানীয় চেয়ারম্যান আবুল কালাম সাহেব নিজে ফসলি জমির মাটি কেটে নিয়ে রাস্তা তৈরি করে
দিয়েছে। বর্তমানে আমরা কৃষকরা খুব অসহায় হয়ে পরেছি। যদি কোন ভাবে একজন কৃষকের জমির মাটি তারা ক্রয় করতে পারে তাহলে পাশের জমির মালিকও বাধ্য হয়ে মাটি বিক্রি করতে হয়।
এভাবে পুরো বিলের চিত্র বদলে এখন হাওড়ে রূপ নিচ্ছে।
এ বিষয়ে যাত্রাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ বলেন, আমি স্থানীয়
কৃষকদের অনুরোধে কাবিখার আওতায় রাস্তাটি করেছি। কৃষকরা আমাকে বলেছিলো জমি থেকে ফসল আনতে তাদের খুব কষ্ট হয়। এখন যদি কেউ সেই রাস্তা ব্যবহার করে কৃষি জমির মাটি আনে আমার সেখানে কি করার থাকে বলেন? হ্যা তারপরেও বিষয়টি আমি জানতে পেরে কৃষকদের
দিয়ে উপজেলা প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ পাঠিয়েছি। এখন এটা প্রশাসন যদি না দেখে আমার কথাতো আর তারা শোনেনা।
যাত্রাপুর বিলের মধ্যে গড়ে তোলা চয়নিকা ব্রিকসের মালিক নেছার আহম্মেদ রাজু বলেন, যেখান থেকে আমরা মাটি আনতেছি সেই জমিটি আমাদের নিজের। আর এ বিষয়ে আমরা প্রশাসনকে জানিয়েই সব করি। এসিল্যান্ড স্যার কে জানানো আছে তিনি সব জানেন।
মাটি কাটার বিষয়টি জানতে চাইলে মুরাদনগর উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) নাজমূল হুদা বলেন, এ বিষয়ে আমি কিছুই জানি না, এটা সম্পূর্ণরূপে মিথ্যা, আমার সাথে কথা বলবে
কেন! আর আপনারা থানাকে বলেন পুলিশ পাঠাইতে আমাদেরকে ফোন দিয়ে বলেন! থানাকে বলেন পুলিশ পাঠাইয়া বন্ধ করতে।
মুরাদনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ কামরুজ্জামান তালুকদার বলেন, মনে হয় না এটা আমাদের কাজ! যদি কোন বিষয়ে আমাদেরকে ডাকে অথবা জানায় তখন সাথে সাথে আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকি।
এ বিষয়ে মুরাদনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আলাউদ্দিন ভূইয়া জনী আমতা আমতা করে বলেন, ‘কৃষকের নিজের জমি হলে মাটি কাটা বা শ্রেণী পরিবর্তন?
আসলে বেশি গভির করা হলে শ্রেণী পরিবর্তনের ক্ষেত্রে আমাদের কাছ থেকে অনুমতি নিতে হবে।
দেখি বিষয় গুলো নিয়ে আমরা বসে চিহ্নিত করে অচিরেই আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’