
মাহফুজুর রহমান, মুরাদনগর (কুমিল্লা) প্রতিনিধি:
# শুধুমাত্র এক উপজেলায় প্রতিদিন প্রায় ৫ কোটি টাকা মূল্যের চিনি আসছে ভারত থেকে।
# প্রশাসনের নাকের ডগায় বিক্রি হচ্ছে এসব চিনি।
# ১৭ সদস্য বিশিষ্ট জামাল বাহিনী চোরাকারবারির মূল সিন্ডিকেট।
কুমিল্লার মুরাদনগরে অবৈধ পথে প্রতিদিন প্রায় ৫ কোটি টাকা মূল্যের চিনি আসছে ভারতীয় সিমান্তবর্তী এলাকা ব্রাহ্মনবাড়ীয়া জেলার কসবা ও ব্রাহ্মনপাড়া উপজেলার নয়নপুর এলাকা দিয়ে। আর সেসব চিনি মুরাদনগর উপজেলার কোম্পানীগঞ্জ বাজার ও বাঙ্গরা বাজার এলাকা থেকে বিক্রি হচ্ছে পার্শবর্তী দেবিদ্বার, তিতাস, হোমনা, নবীনগর ও বাঞ্ছারামপুর উপজেলার বিভিন্ন বাজারের পাইকারী ব্যবসায়ীদের কাছে। অবৈধ পথে এসব চিনি আসার ফলে সরকার যেমন হারাচ্ছে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব, তেমনি দেশের চিনি শিল্পে ঘটছে ব্যাপক ক্ষতি। বাজারে তুলনামূলকভাবে দেশিয় চিনির দাম বেশি হওয়া, প্রতিনিয়ত বেড়েই চলছে অবৈধ পথে আসা ভারতীয় চিনির চাহিদা। এতে এক শ্রেণির মানুষ লাভবান হলেও দেশীয় চিনিশিল্প পড়ছে হুমকির মুখে।
সরেজমিনে খোজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলার বাঙ্গরা বাজার থানা সদরের প্রয়াত বিএনপি নেতা হাজী শুক্কুর আলীর ছোট ছেলে জামাল বাহিনীর ১৭ সদস্য বিশিষ্টি একটি চোরাকারবারি চক্র নিয়ন্ত্রণ করছে এসব চিনি ক্রয়-বিক্রয়।
চক্রটি প্রতিদিন কমপক্ষে শতাধিক পিকআপে করে অবৈধ পথে নিয়ে আসা এসব ভারতীয় চিনি বিক্রয় করছে প্রশাসনের নাকের ডগায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছিুক এক পাইকারি ব্যবসায়ী জানান, চোরাকারবারীর প্রধান জামাল উদ্দিন বিজিবির ভূয়া অকশেনের কাগজ তৈরী করে থানা এবং হাইওয়ে পুলিশসহ আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদেরকে ধোঁকা দিয়ে মূলত এসব চিনির বস্তা পরির্বতন করে বাজারে বিক্রি করছে। বিভিন্ন সময় পুলিশ এসব চিনির পিকআপ আটক করলেও বিজিবির ভূয়া কাগজ দেখিয়ে পার পেয়ে যায় জামাল।
ব্যবসায়ী মানিক পোদ্দার বলেন, বাজারের চিনির তুলনায় ভারতীয় চিনির প্রতি বস্তায় ৭-৮শত টাকা ব্যবধান হওয়ায় দেশীয় চিনি কেউ এখন আর কিনতে চায় না। কেউ কেউ আবার ভারতীয় চিনির বস্তা পরিবর্তন করে দেশীয় চিনি বলে বেশি দামে বিক্রয় করছে। মূলত প্রশাসনের কোন ধরনের তৎপরতা না থাকায় বাজারে খোলামেলাই মিলছে এসব চিনি। বর্তমানে মুরাদনগর উপজেলার সকল বাজারের চিনি মানেই ভারতীয় চিনি, দেশীয় চিনির কোন অস্তিত্বিই নেই এখন বাজারে।
আরেক ব্যবসায়ী সমন ভৌমিক বলেন, আমরা যারা মিষ্টির ব্যবসা করি তাদের প্রতিদিন প্রচুর পরিমাণে চিনি লাগে। কারণ আমাদের প্রতিটি জিনিস তৈরি হয় চিনি দিয়ে। ভারতীয় চিনিটা একটু লাভজনক তাই বর্তমানে সকল ব্যবসায়ী এ চিনিটাই ব্যবহার করি। তবে এর একটা সমস্যাও রয়েছে, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে চিনি শেষ না হলে এর স্বাদ নষ্ট হয়ে লবনাক্ত হয়ে যায়।
কোম্পানীগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা জিসান আহম্মেদ বলেন, ‘বাজারে চিনি আনতে গেলে আমদানীকৃত চিনি পাওয়া যাচ্ছে না। ব্যবসায়ীরা বস্তা পরিবর্তন করে দেশিয় চিনির কথা বলে বিক্রয় করছে ভারতীয় চিনি। নিরুপায় হয়েই এসব চিনি কিনতে হচ্ছে।’
চিকিৎসকদের মতে, নির্দিষ্ট সময় শেষে যেসব চিনির স্বাদ পরিবর্তন হয়ে যায় সেগুলো গ্লুকোজ মেশানো চিনি না। এগুলো কেমিক্যাল দ্বারা চিনির স্বাদ দেয়া হয়। যা মানব দেহের জন্য খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। তাদের পরামর্শ যারা বাজার মনিটরিং করে তারা যদি এসব চিনি সংগ্রহ করে ল্যাবে পাঠিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে এর গুণগত মান যাচাই বাছাই করে বিক্রির অনুমতি দেয়। তাহলেই ভোক্তারা নিরাপদে চিনি ক্রয় করা সম্ভব।
অভিযুক্ত চোরাকারবারি সিন্ডিকেটের প্রধান জামাল উদ্দিন বলেন, ভারতীয় চিনি এসব কোম্পানীগঞ্জ বাজারে পাওয়া যায় আমি বিক্রি করি না। আগে অকশনে ভারতীয় কিছু চিনি পেতাম সেগুলো আমি বিক্রি করতাম এখন আর অকশনে পাই না তাই বিক্রিও করি না। আর আমার যে গোডাউন গুলো রয়েছে সেগুলোতে চাল রাখি, চিনি না।
মুরাদনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজিজুল বারী ইবনে জলিল ও বাঙ্গরা বাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ রিয়াজ উদ্দিন চৌধুরী দুজনেই একসুরে গলা মিলিয়ে বলেন, ভারতীয় সীমান্ত দিয়ে অবৈধ পথে আসা চিনির ব্যাপারে আমরা কিছুই জানি না।