উৎপল ঘোষ, যশোর: যশোরে পিতলের বার দেখিয়ে খাঁটি সোনা বলে প্রতারণার ঘটনায় আটক টগর মীর নামে এক যুবক আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। এ প্রতারণার ঘটনায় আরও তিনজন জড়িত আছে বলে তিনি জানিয়েছেন।
সোমবার আসামির জবাবনবন্দি গ্রহণ শেষে জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক ইমরান আহমেদ তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন। টগর মীর খুলনা চবনচরার নিজখামার পিপড়ামারীর ইউসুফ মিয়ার বাসিন্দা ও ডুমুরিয়ার আংগারদাহ গ্রামের ফারুক মীরের ছেলে।
টগর মীর জানিয়েছে, পেশায় সে একজন রিক্সা-ভ্যান গ্যারেজের মালিক। ইঞ্জিন চালিত ভ্যান ভাড়া দিত বিভিন্ন চালকদের কাছে। আলমগীর তার ইঞ্জিনচালিত ভ্যান ভাড়া নিয়ে চালাতো। আলমগীর ভ্যান চালানোর পাশাপাশি তার দুই সহযোগীকে সাথে নিয়ে পিতলের বার দেখিয়ে খাঁটি সোনা বলে যাত্রীদের সাথে প্রতারণা করে সর্বস্ব লুটে নিত বলে সে জানতো। আলমগীর তাই তাকে ভ্যানের ভাড়া হিসেবে প্রতিদিন ৬-৭শ’ টাকা দিতো। আলমগীর ও তার দুই সহযোগী ওই যাত্রীর সাথে প্রতারণা করে সর্বস্ব লুটে নিয়েছে বলেও আলমগীরের নিকট শুনেছে।
মামলার অভিযোগে জানা গেছে, গত ৮ অক্টোবর মণিরমাপুরের ফেদাইপুর গ্রামের সিদ্দিকুর রহমানের স্ত্রী আসমা বেগম তার বাবার বাড়ি যাওয়ার সময় কেশবপুর হয়ে মণিরামপুরের বাজে চালুয়াটি যাচ্ছিলেন। দুপুরে তিনি কেশবপুর গাজীর মোড় থেকে অপরিচিত ইঞ্জিনচালিত ভ্যানে ওঠেন। পথিমধ্যে অপরিচিত দুইজন ভ্যানে ওঠেন। ভোগাতী নরেন্দ্রপুর হাজীর পুকুর নামক স্থানে পৌঁছালে ভ্যান চালক হঠাৎ একটি চিঠির মধ্যে থেকে সোনার বার সাদৃশ্য বস্তু কুড়িয়ে নিয়ে আসে এবং চিঠি আসমা বেগমকে পড়তে দেয়। অপরিচিত দ্ইু যাত্রী ভ্যানচালককে ওই সোনা আসমা দিয়ে দিতে বলে। এরমধ্যে তারা আসমার গায়ের গহন খুলে নিয়ে তাকে ফেলে রেখে চলে যায়। ওই গহনা দাম প্রায় ৬০ হাজার টাকা।
ওই ঘটনায় গত ১১ ডিসেম্বর কেশবপুর থানায় অপরিচিত ব্যক্তিদের আসামি করে মামলা করা হয়। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে টগর মীরকে আটক করে ডিবি পুলিশ। গতকাল তাকে আদালতে সোপর্দ করা হলে ঘটনার সাথে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দেয় সে।
এদিকে, আরেকটি প্রতারণার মামলায় আলমগীর হোসেন নামে আরও এক যুবককে আটক করে আদালতে সোপর্দ করেছে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। আলমগীরকে আদালত চত্বর থেকে আটক করা হয়েছে বলে তার আইনজীবী সোমবার আদালতে একটি আবেদন করেন। বিচারক আবেদন গ্রহণ করে আগামী ১৪ ডিসেম্বর মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার উপস্থিতিতে শুনানীর দিন ধার্য করেছেন।
গত ২৭ অক্টোবর একটি প্রতারণা মামলায় আলমগীর হোসেন পুলিশের হাতে আটক হয়। পরদিন ২৮ অক্টোবর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কেশবপুর থানার এসআই লিখন কুমার সরকার তাকে আদালতে সোপর্দ করেন। আর ওইদিনই তিনি আদালত থেকে জামিনে মুক্ত হন। এরপরেই মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পান যশোর ডিবি পুলিশের এসআই মফিজুল ইসলাম। এসআই মফিজুল ইসলাম জামিনপ্রাপ্ত আসামি আলমগীর হোসেনের রিমান্ডের চেয়ে আদালতে আবেদন করেন। ১১ ডিসেম্বর রিমান্ড শুনানী শেষে বিচারক তদন্ত কর্মকর্তাকে আদালতে ভেতর জিজ্ঞাসাবাদের আদেশ দেন। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আলমগীর হোসেন আদালত ভবন থেকে নিচে পালানোর চেষ্টা করে। এরপর আদালত চত্বর থেকে আলমগীরকে আটক করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা।
এই ঘটনায় আলমগীরের আইনজীবী রুহিন বালুজ আদালতে একটি আবেদন করে বিষয়টি অবহিত করেন। ফলে বিচারক ইমরান আহমেদ আবেদনটি গ্রহণ করে তদন্তকারী কর্মকর্তার উপস্থিতিতে আজ দিনধার্য করে শুনানির আদেশ দিয়েছেন।