লালমনিরহাট প্রতিনিধিঃ বিভিন্ন কর্মসুচির মধ্য দিয়ে ৬ ডিসেম্বর লালমনিরহাট জেলা মুক্ত দিবস পালিত হয়েছে। দিবসটি পালনে জেলা প্রশাসনের আয়োজনে সকাল ৯টায় সরকারি হাইস্কুল খেলার মাঠ থেকে একটি বর্ণাঢ্য র্যালি শুরু হয়ে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে জেলা পরিষদ মিলনায়তন প্রাঙ্গণে এসে শেষ হয়।পরে জেলা পরিষদ মিলনায়তনে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক টি.এম.এ মমিনের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মোহাম্মদ উল্যাহ।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অ্যাড. মতিয়ার রহমান,সাবেক সংসদ সদস্য ও কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের সদস্য সফুরা বেগম রুমি, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম, সিভিল সার্জন ডা. নির্মলেন্দু রায়,ক্যাপ্টেন (অবঃ) আজিজুল হক বীর প্রতীক,জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ প্রমুখ।
অনুষ্ঠানের শুরুতে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযোদ্ধা সন্তান স্মৃতিচারণ করে বক্তব্য রাখেন।
প্রসঙ্গত,১৯৭১ সালের এই দিনে লালমনিরহাট জেলা প্রথম শত্রুমুক্ত হয়। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মরণপন লড়াই আর মুক্তিগামী জনগনের দূর্বার প্রতিরোধে লালমনিরহাটে পতন হয় পাক হানাদার বাহিনীর। একপর্যায়ে চূড়ান্ত বিজয়ের পূর্ব মুহূর্তে মুক্তিযোদ্ধারা লালমনিরহাট ঘিরে ফেললে অবস্থা বেগতিক দেখে এইদিন ভোর ৬ টায় লালমনিরহাট রেলওয়ে স্টেশন থেকে পাক সেনা, রাজাকার আলবদর ও তাদের দোসর অবাঙ্গালীরা দুটি স্পেশাল ট্রেনে করে রংপুর ক্যান্টনমেন্টে পালিয়ে যায়। তিস্তা নদী পার হওয়ার পরে পাক সেনারা তিস্তা রেল সেতুতে বোমা বর্ষণ করে সেতুর মারাত্বক ক্ষতি সাধন করে।
লালমনিরহাটে ৭১ সালের এই দিনে সর্বত্রই ছড়িয়ে পড়ে মুক্তির উল্লাস। লালমনিরহাট শত্রুমুক্ত হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে চারিদিক থেকে লোকজন ছুটে আসতে থাকে শহরের দিকে। সন্ধ্যার মধ্যে শহরের প্রাণকেন্দ্র মিশন মোড় এলাকায় লোকে পূর্ণ হয়ে যায়। শ্লোগানে মুখরিত হয়ে উঠে শহর ও আশপাশের গ্রাম। আনন্দে উদ্বেলিত কন্ঠে স্বদেশের পতাকা নিয়ে ছুটাছুটি করতে থাকে তরুণ, যুবক, আবাল বৃদ্ধ বনিতা সকলেই। এদিন সকাল থেকে দারুণ উত্তেজনা নিয়ে লালমনিরহাট শহর, জনপদ ও লোকালয়ের মানুষ জড়ো হতে থাকে। শহরের বিভিন্ন রাস্তায় বেড়িয়ে পড়ে আনন্দ মিছিল।
৬ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিরোধের মুখে পাক বাহিনীর হাত থেকে মুক্ত হয় এ জেলা। স্বাধীন বাংলা পতাকা উত্তোলন করে লালমনিরহাট জেলাকে শক্রমুক্ত ঘোষণা করা হয়। পরদিন ৭ ডিসেম্বর বাঁধ ভাঙ্গা জোয়ারের মতো মানুষ জয় বাংলা ধ্বনি দিয়ে ও বিজয়ের পতাকা নিয়ে ঢুকে পড়ে শহরে। মিলিটারি ফোর্স, সশস্ত্র গেরিলা বাহিনীর সদস্যরা স্বাধীনতাকামী মানুষদের নিয়ে উল্লাসে মেতে উঠেন।