এম এ মাইকেলঃ
অবৈধ গ্যাস সংযোগ উচ্ছেদে আবারও কঠোর অবস্থানে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন পিএলসি। সংস্থাটি একযোগে ঢাকাসহ নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর ও আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে শত শত অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছে। জব্দ করেছে বিপুল পরিমাণ পাইপ, চুলা, রেগুলেটর ও অন্যান্য সামগ্রী। অভিযানের অংশ হিসেবে আদায় করা হয়েছে লাখ টাকার জরিমানাও।
তিতাস গ্যাসের পক্ষ থেকে জানানো হয়, গত ২২ জুলাই ২০২৫ (মঙ্গলবার) দিনব্যাপী জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের নিয়োজিত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের নেতৃত্বে একাধিক টিম অভিযান পরিচালনা করে।
ঢাকার কামরাঙ্গীরচরে অভিযান: কারখানায় অবৈধ গ্যাস সংযোগে জরিমানা ঢাকা বিক্রয় বিভাগ-৫ এর আওতাধীন কামরাঙ্গীরচর এলাকায় পরিচালিত অভিযানে মনিজা খাতুন, সিনিয়র সহকারী সচিব ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ‘শাহজালাল মেটাল’ নামের একটি খানাডুলি কারখানায় বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে আবাসিক গ্যাস ব্যবহারের প্রমাণ পাওয়া যায়।
অভিযানে ওই কারখানার অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন এবং কিলিং করা হয়। এ সময় ৩/৪’’ জিআই পাইপ ১০ ফুট, পিভিসি পাইপ ৩০ ফুট, বুস্টার ১টি, হুইজ পাইপ ১০ ফুট ও পাইপ বার্নার ২টি জব্দ করা হয়। কারখানা মালিককে তাৎক্ষণিকভাবে ৫০,০০০ টাকা জরিমানা করা হয়।
একই দিনে জোবিঅ-বন্দর এর আওতাধীন নারায়ণগঞ্জ জেলার জাঙ্গাল, বারপাড়া ও বন্দর এলাকায় এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট হাসিবুর রহমানের নেতৃত্বে অভিযান চালানো হয়। প্রায় ৬ কিলোমিটার এলাকার আনুমানিক ১০০০টি চুলার সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়।
এ সময় ২৩০ ফুট বিভিন্ন ব্যাসের লাইন পাইপ, ২৪টি রেগুলেটর ও ৬টি লকউইং কক জব্দ করা হয়।
গাজীপুরের চন্দ্রায় অভিযান: ৩২টি বাড়িতে ৩০০ চুলার সংযোগ বিচ্ছিন্ন, জরিমানা ২,৭৫,০০০ টাকা চন্দ্রা আঞ্চলিক বিক্রয় বিভাগের আওতায় গাজীপুরের পূর্ব বারেন্ডা ও কাশিমপুর এলাকায় দুইটি স্থানে অভিযান পরিচালিত হয়। নেতৃত্বে ছিলেন গাজীপুর জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার মো. শহীদ উল্লাহ। অভিযানে ৩২টি বাড়িতে থাকা ৩০০টি ডাবল চুলার সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়।
জব্দ করা হয় প্রায় ৪৫০ ফুট পাইপলাইন। পুরোপুরি অবৈধভাবে সংযোগ নেওয়া ৪টি বাড়ির মালিকদের কাছ থেকে মোট ২,৭৫,০০০ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়।
ডেমরায় ওয়াশিং কারখানাগুলোতে গ্যাস চুরি, জরিমানা ১.৫ লাখ টাকা
মেট্রো ঢাকা বিক্রয় বিভাগ-১ এর আওতাধীন ঠুলঠুলিয়া, ডেমরা এলাকায় ৩টি স্পটে অভিযান পরিচালনা করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সিমন সরকার। অভিযানে ‘শ্রাবণ ওয়াশিং’, ‘ব্রাদার্স ওয়াশিং’, ‘নিউ কালার ওয়াশিং’ ও ‘নিউ জিন্স ওয়াশিং’ নামের ওয়াশিং কারখানায় আবাসিক গ্যাসকে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে ব্যবহারের অভিযোগে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়।
জব্দ করা হয় ৫৯০ ফুট লাইন পাইপ, ১১টি রেগুলেটর, ২টি কম্প্রেসার, ২টি আবাসিক চুলা, ৪টি পাইপ বার্নার, ১০০ ফুট হোস পাইপ এবং ৬০ ফুট ১ ইঞ্চি প্লাস্টিক পাইপ। ‘নিউ কালার ওয়াশিং’ ও ‘নিউ জিন্স ওয়াশিং’ মালিকদের কাছ থেকে মোট ১,৫০,০০০ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়।
অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন ও বকেয়ার কারণে সংযোগ বিচ্ছিন্ন ,এই অভিযানে ২০টি সম্পূর্ণ অবৈধ আবাসিক গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে কিল করা হয়। এছাড়া, বকেয়ার কারণে গ্রাহক আজিজুল হক (গ্রাহক সংকেত: ১০১২৪৭১৪) এর সংযোগও বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে।
তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিসন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন পিএলসি -এর মিডিয়া ও জনসংযোগ বিভাগের ব্যবস্থাপক মো. আল আমিন বলেন, “অবৈধ গ্যাস সংযোগ ও গ্যাস চুরি রোধে আমাদের নিয়মিত অভিযান অব্যাহত থাকবে। যারা নিয়ম ভেঙে সংযোগ নিচ্ছেন বা অপব্যবহার করছেন, তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।”
দেশের গ্যাস সম্পদ সুরক্ষা ও অপচয় রোধে তিতাস গ্যাসের এই অভিযানের ধারা প্রশংসনীয়। অবৈধ সংযোগের মাধ্যমে বছরে যে পরিমাণ গ্যাস অপচয় হয়, তা দেশের অর্থনীতির উপর গুরুতর প্রভাব ফেলে। তাই এ ধরনের অভিযান যেন নিয়মিত ও আরও ব্যাপক পরিসরে পরিচালিত হয়—এটাই জনস্বার্থে সময়ের দাবি।
সম্পাদক ও প্রকাশক: কামরুজ্জামান জনি
Copyright © 2025 Muktirlorai | মুক্তির লড়াই. All rights reserved.