মো: নাজমুল হোসেন ইমন, স্টাফ রিপোর্টার
চাঁপাইনবাবগঞ্জের ইসলামপুর ইউনিয়নের গোপীনাথপুর গ্রামের মনিরুল ইসলাম ও নুরজাহান বেগম দম্পতির ছোট ছেলে আবিদ রাইয়ান সোহাগ। তিনি ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির (ডিআইউ) ইনোভেশন অ্যান্ড এন্টারপ্রিনিউরশিপ বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। করোনা ভাইরাস দুর্যোগে লেখাপড়া একদম বন্ধ। তাই অলস ভাবে বসে না থেকে অনেকটাই শখের বসে সোহাগ শুরু করেন অনলাইনভিত্তিক আমের ব্যবসা। ফেসবুকে খুলেছেন 'গ্রামীণগ্রো’ নামে গ্রুপ ও পেজ। সফলও হয়েছেন তিনি।
আবিদ রাইয়ান সোহাগ বলেন, করোনা ভাইরাসের কারণে যখন সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। তখন নিজ এলাকায় চলে আসি। পরিবারের অবস্থাও তেমন ভালো যাচ্ছিল না। বেকার বসে ছিলাম। ভাবলাম কিছু একটা করা দরকার। হঠাৎ একদিন আম বিজনেসের আইডিয়া মাথায় এলো। কারণ আমার বাবার বেশ কয়েকটি আম বাগান আছে। আবার জানতে পারলাম আমার এক মামা তার ৪টি আম বাগান বিক্রি করবেন। ভাবলাম একটা ঝুঁকি নিয়েই দেখি। যেই ভাবনা সেই কাজ। কষ্ট হলেও কিনে নিলাম তার আমের বাগান।
অনলাইনভিত্তিক বিজনেস সোহাগের ব্যবসা সম্পূর্ণ অনলাইনভিত্তিক। গ্রাহকরা অনলাইনে অর্ডার করেন। এক্ষেত্রে ফেসবুকেই প্রচারণা চালান সোহাগ। তিনি বলেন, ফেসবুকে আমাদের নিজস্ব পেইজ এবং গ্রুপ রয়েছে। আমার ব্যবসার মূল জায়গা হলো সিলেট, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা আর ঢাকা। এছাড়াও সারাদেশের প্রায় ৩৫টি জেলায় আম সাপ্লাই দিয়েছি। তবে, সর্বাধিক আম গিয়েছে ঢাকাতে। গ্রাহকদের সম্পূর্ণ নিরাপদ ও ফ্রেশ, কার্বাইড মুক্ত আম সরবরাহ করেন সোহাগ । তিনি বলেন, আমার প্রজেক্টে ১৫ ধরনেরও অধিক আম রয়েছে। লক্ষণভোগ, গোপালভোগ, আম্রপালি, হিমসাগর, ল্যাংড়া।
বর্তমানে আশ্বিনা, বারি-৪, কাটিমন, গৌরমতি, ফজলি আমও আছে। আমার প্রজেক্টের আম পুরোপুরি কার্বাইড মুক্ত। বাগান থেকে সংগ্রহ করে ওজন দিয়ে প্যাকিং করা হয়। বিভিন্ন ধরনের প্যাকেট হয়। ১০, ১২, ২০, ২৪, কেজির প্যাকেট।
আম বাগানে অনেক পরিচর্যার প্রয়োজন হয়। এসব আমি নিজে উপস্থিত থেকে করিয়ে নিয়েছি। প্রতিদিন দুইবেলা আম মনিটরিং করতে হয়। আম ফেটে যায়, দাগ পড়া, পোঁকা ধরা এগুলোর দেখাশুনা করতাম।
শুরুর বছর প্রতি চালানে ৩০০-৪০০ কেজি আর এই বছর আম ডেলিভারি দিয়েছি ১-২টন আলহামদুলিল্লাহ। আম এখন শেষের দিকে। মোটামুটি শেষই বলা যায়। এখন শুধু বারি-৪, আম্রপালি, গৌড়মতি, ফজলি, আশ্বিনা আমটা আছে। এটাও শেষ হয়ে যাচ্ছে দ্রুত। আমার কোনো গুদাম ঘর নেই। সব নিজে বাগান থেকে বাড়িতে এনে প্যাকেট করে পাঠিয়েছি, আবার কোনো কোনো দিন বাগান থেকেই প্যাকেট করে পাঠিয়েছি।
পরিবার ও বন্ধুদের সাপোর্ট - আম ব্যবসায় আসার ক্ষেত্রে পরিবার ও সহপাঠীদের উৎসাহ পেয়েছেন সোহাগ। পরিবার এবং বন্ধুদের সহযোগিতার কথা বলতে গিয়ে সোহাগ বলেন, আমার পরিবারের সহোযোগিতার কথা বলে বোঝানো যাবে না। বিশেষ করে আমার বোন জামাই এর অবদানের কথা। বোন জামাই সবসময় সাপোর্ট দিয়েছেন। অনলাইনে আমের বিজনেসে আসাতে আমার বন্ধুদের অবদান সীমাহীন। আমার বন্ধুরা প্রচারণা চালাতে সহায়তা করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেও আমার বিভাগের শিক্ষক, বন্ধু, বড় ভাই ও আপুরা সেই সঙ্গে জুনিয়ররাও অনেক সহযোগিতা করেছে। আমি তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ।
আম বেপারি বলে ট্রল পড়াশোনার পাশাপাশি সোহাগের এই উদ্যোগ খারাপ চোখে দেখেছেন অনেকে। কিংবা মজা করেছেন তাকে নিয়ে। অনেক ট্রলের শিকারও হয়েছেন সোহাগ । তবে ট্রলকেও পজিটিভ দৃষ্টিতে দেখেন সোহাগ।
তিনি বলেন, পড়াশোনারত হঠাৎ ব্যবসা শুরু করায় অনেকেই আমাকে ‘আম বেপারি’ বলে ট্রল করেছে। আমি সমালোচনাকে ইতিবাচকভাবে দেখি। আমি চাই আমাকে ফলো করে আরও ১০ জন না হলেও একজন অন্তত স্বাবলম্বী হোক।
বড় উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন সোহাগের। সোহাগ তার ব্যবসায় ধীরে ধীরে যুক্ত করেছেন লিচুঁ, আখ ও খেঁজুর গুড়, কুমড়ো বড়ি, মধু, ঘি, ড্রাই ফুড ইত্যাদি। সোহাগ গড়ে তুলেছেন গ্রামীণ পণ্যের বিশ্বস্ত প্রতিষ্ঠান গ্রামীণগ্রো। তিনি আমাদের জানিয়েছেন, ভবিষ্যতে মৎস্য চাষ,গবাদি পশু পালন সহ বেশ কিছু পরিকল্পনার কথা। স্বপ্ন দেখেন বড় উদ্যোক্তা হওয়ার। নিজে উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্নের কথা জানিয়ে সোহাগ বলেন ।
আলহামদুলিল্লাহ, আমরা যথেষ্ট এগিয়ে গেছি। দোয়া চাই সবার কাছে যেন সততা দিয়ে ভালো একজন উদ্যোক্তা হতে পারি। আমার এই ব্যবসা আগামীতেও চলবে। আমি ভবিষ্যতেও এই ই-কমার্স ব্যবসা চালিয়ে যাব।
তরুণ উদ্যোক্তাদের উদ্দেশ্যে সোহাগ বলেন, ব্যবসায়ে উন্নতির একমাত্র চাবিকাঠি হলো সততা। যে যেই খাতেরই উদ্যোক্তা হোন না কেনো আপনাকে সৎ, বিনয়ী ও পরিশ্রমী হতে হবে। তাহলে সাফল্য পাবেন। উদ্যোক্তা হতে চাইলে রিস্ক নেওয়ার সাহসও থাকতে হবে।
সম্পাদক ও প্রকাশক: কামরুজ্জামান জনি
Copyright © 2025 Muktirlorai | মুক্তির লড়াই. All rights reserved.