চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং ৩১আগস্ট রোববার, দুপুরে থিয়েনচিনের ইংবিন হোটেলে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সাথে সাক্ষাৎ করেছেন। ২০২৫ সালের শাংহাই সহযোগিতা সংস্থার শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী চীন সফরে এসেছেন।
প্রেসিডেন্ট সি উল্লেখ করেন যে, গত বছর আমরা কাজানে সফলভাবে সাক্ষাৎ করেছি, চীন-ভারত সম্পর্ক পুনরায় গতিশীল হয়ে নতুন যাত্রা শুরু করেছে, এবং দুই দেশের মধ্যে যোগাযোগ ও সহযোগিতা অবিচ্ছিন্নভাবে নতুন অগ্রগতি অর্জন করছে। চীন ও ভারত হল দুটি বিশিষ্ট প্রাচ্য সভ্যতা, বিশ্বের দুটি সর্বাধিক জনবহুল দেশ এবং গ্লোবাল সাউথের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য, যা দুই দেশের জনগণের কল্যাণ সাধন, উন্নয়নশীল দেশগুলোর ঐক্য ও উন্নতি প্রচার এবং মানব সমাজের অগ্রগতি এগিয়ে নেওয়ার গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব বহন করে। সুপ্রতিবেশী বন্ধু এবং পারস্পরিক সাফল্যের অংশীদার হওয়া, ‘ড্রাগন ও হাতির একসাথে নাচ’ বাস্তবায়ন করা চীন ও ভারত উভয়পক্ষের সঠিক সিদ্ধান্ত হওয়া উচিত।
তিনি জোর দিয়ে বলেন যে, এই বছর হচ্ছে চীন-ভারত কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ৭৫তম বার্ষিকী। উভয়পক্ষের কৌশলগত উচ্চতা ও দীর্ঘমেয়াদী দৃষ্টিকোণ থেকে চীন-ভারত সম্পর্ক দেখতে ও মোকাবেলা করা উচিত, থিয়েনচিনে সাক্ষাতের মাধ্যমে এ সম্পর্কের আরও উন্নতি করা উচিত, এবং দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ধারাবাহিক, সুস্থ ও স্থিতিশীল উন্নয়ন এগিয়ে নেওয়া উচিত। প্রথমত, কৌশলগত যোগাযোগ শক্তিশালী করতে হবে, এবং পারস্পরিক আস্থাকে গভীর করতে হবে। যতক্ষণ পর্যন্ত এই বড় দিক সঠিক থাকে যে, আমরা অংশীদার, প্রতিদ্বন্দ্বী নই, এবং একে অপরের উন্নয়নকে সুযোগ মনে করে, হুমকি নয়, ততক্ষণ চীন-ভারত সম্পর্ক সঠিক পথে চলতে এবং স্থিতিশীল ও দূরপ্রসারী হতে পারে। দ্বিতীয়ত, যোগাযোগ ও সহযোগিতা প্রসারিত করতে হবে, এবং পারস্পরিক উপকারিতা ও জয়-জয় নীতি বাস্তবায়ন করতে হবে। চীন ও ভারত উভয়ই উন্নয়ন ও উন্নতির গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে রয়েছে, এবং দু’পক্ষের উচিত উন্নয়ন এই সবচেয়ে বড় সাধারণ বিষয়ের উপর ফোকাস করা, একে অপরকে সমর্থন করা, একে অপরকে উত্সাহিত করা এবং একে অপরের সাফল্য অর্জনে সাহায্য করা। তৃতীয়ত, একে অপরের উদ্বেগের বিষয়ের প্রতি খেয়াল রাখতে হবে, এবং শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান বজায় রাখতে হবে। ৭০ বছরেরও বেশি আগে চীন ও ভারতের সে সময়কার নেতাদের গৃহীত শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের পাঁচটি নীতিকে লালন ও প্রচার করা প্রয়োজন। সীমান্ত অঞ্চলের শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষায় সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে, এবং সীমান্ত সমস্যা দিয়ে সমগ্র চীন-ভারত সম্পর্ককে সংজ্ঞায়িত করা উচিত নয়। চতুর্থত, বহুপক্ষীয় সমন্বয় শক্তিশালী করতে হবে, এবং সাধারণ স্বার্থ রক্ষা করতে হবে। ঐতিহাসিক দায়িত্ব যৌথভাবে প্রদর্শন করতে হবে, বহুপক্ষীয়তা দৃঢ়ভাবে সমর্থন করতে হবে, গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক এবং আঞ্চলিক বিষয়ের উপর যোগাযোগ ও সমন্বয় জোরদার করতে হবে, আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার রক্ষা করতে হবে, এবং হাতে হাত মিলিয়ে বিশ্বের বহুমুখীকরণ এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের গণতন্ত্রকরণ এগিয়ে নিতে হবে, এশিয়া তথা বিশ্বের শান্তি ও সমৃদ্ধি রক্ষায় অবদান রাখতে হবে।
মোদি বলেন যে, সি চিনপিংয়ের সাথে আমার কাজান সাক্ষাৎ ভারত-চীন সম্পর্কের উন্নয়নের জন্য দিকনির্দেশনা দিয়েছে, ভারত-চীন সম্পর্ক ইতিবাচক ট্র্যাকে ফিরে এসেছে, সীমান্তে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রয়েছে, এবং শিগগিরই সরাসরি ফ্লাইট পুনরায় চালু হবে, এই ফলাফল কেবল ভারত ও চীনের জনগণই নয়, বিশ্বও উপকৃত হবে। ভারত ও চীন হচ্ছে অংশীদার, প্রতিদ্বন্দ্বী নয়, ঐকমত্য বিভেদের চেয়ে অনেক বেশি, এবং ভারতীয় পক্ষ দীর্ঘমেয়াদী দৃষ্টিকোণ থেকে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক দেখতে ও বিকাশ করতে ইচ্ছুক। বিশ্ব অর্থনীতির অত্যন্ত অনিশ্চয়তার মুখোমুখি হচ্ছে, ভারত ও চীন বৈশ্বিক গুরুত্বপূর্ণ অর্থনীতি হিসেবে, সহযোগিতা শক্তিশালী করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভারতীয় পক্ষ চীনের সাথে ন্যায্য ও যুক্তিসঙ্গত সমাধান খুঁজতে ইচ্ছুক যা উভয়পক্ষের কাছে গ্রহণযোগ্য। ভারত ও চীন উভয়ই কৌশলগত স্বায়ত্তশাসন ও স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি দৃঢ়ভাবে সমর্থন করে, দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক তৃতীয় পক্ষ দ্বারা প্রভাবিত হয় না, দুই দেশের সহযোগিতা ২১ শতককে সত্যিকারের এশীয় শতাব্দী বানাবে, এবং উভয়পক্ষের উচিত হাতে হাত মিলিয়ে আন্তর্জাতিক বিষয়গুলোতে বহুপক্ষীয়তার শক্তি বৃদ্ধি করা। শাংহাই সহযোগিতা সংস্থায় সফল সভাপতিত্বের জন্য চীনকে অভিনন্দন, এবং থিয়েনচিন শীর্ষ সম্মেলনের সাফল্য কামনা করছি।
সূত্র:স্বর্ণা-হাশিম-লিলি,চায়না মিডিয়া গ্রুপ।
সম্পাদক ও প্রকাশক: কামরুজ্জামান জনি
Copyright © 2025 Muktirlorai | মুক্তির লড়াই. All rights reserved.