শাহিনুর রহমান পিন্টু, ঝিনাইদহ প্রতিনিধি :
ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে ক্লিনিকের অব্যবস্থাপনা ও চিকিৎসকের অবহেলায় এক নবজাতকের মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। ৪ জানুয়ারি উপজেলা শহরের নিমতলা বাসস্ট্যান্ডের পশ্চিম পাশে অবস্থিত কালীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে ওই নবজাতকের মৃত্যু হয়। যদিও ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ নবজাতক মৃত্যুর ঘটনাটি অস্বীকার করে আসছেন।অপরদিকে ভুক্তভোগী পরিবারটিকে ম্যানেজ করেছেন।এমনকি মৃত নবজাতকের পিতার নিকট থেকে লিখিত একটি অনাপত্তি পত্রও নিয়েছেন বলেও জানা গেছে। মৃত নবজাতকের পরিবার সূত্রে জানা যায় , ৪ জানুয়ারি সুমাইয়া খাতুন নামে এক প্রসূতি মা প্রাইভেটে এ হাসপাতালটিতে ভর্তি হন। এর কিছুক্ষণ পর ডাক্তার প্রতাপ কুমার বিশ্বাস অস্ত্রোপচারের পরপরই নবজাতকের মৃত্যু হয়। অস্ত্রোপচারে এনেসথেসিয়া ডাক্তার হিসেবে ছিলেন ডাক্তার তানভীর। প্রসূতি ঐ নারী উপজেলার কাদিরকোল গ্রামের ফয়সাল আহমেদের স্ত্রী। ভুক্তভোগী ফয়সাল ও সুমাইয়া দম্পতির অভিভাবক ইমদাদুল হক (প্রসূতি নারীর শশুর) কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, বাড়িতে নতুন অতিথি আসবে তাই আনন্দ নিয়ে বৌমাকে কালীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করি। ভালো করে পরীক্ষা নিরীক্ষা না করে, না দেখে তাড়াহুড়ো করে সিজার করার সিদ্ধান্ত নেয়। বৌমাকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে বাচ্চা বের করে সেলাই না করে ডাক্তার চলে যায়। বাচ্চা কান্না না করায় ক্লিনিকের নার্সরা বাচ্চার কান্না করানোর চেষ্টা করলে বাচ্চা কান্না করে। তারপর বাচ্চা পায়খানা করে ফেলে। এর কিছুক্ষণ পর বাচ্চাটি মারা যায়। আমি মনে করি ডাক্তার এবং ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের অবহেলায় আমার নাতি ছেলেটি মারা গেছে। এদের বিচার হওয়া উচিত।
তিনি আরো জানান, আমরা ক্লিনিক থেকে আসার সময় একটি ছাড়পত্র দেয় কিন্তু সেখানে বাচ্চার তথ্য বা মৃত্যুর কোনো কারণ উল্লেখ করা ছিল না। অভিযোগ রয়েছে, প্রাইভেট এই ক্লিনিকটি দীর্ঘদিন ধরে একটি আবাসিক ভবন ব্যবহার করে চিকিৎসার নামে অপচিকিৎসা দিয়ে আসছে। এমনকি মেয়াদ উত্তীর্ণ লাইসেন্স নিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করছে প্রতিষ্ঠানটি।শুধু তাই নয় ; প্রতিষ্ঠানটিতে নেই কোনো সার্বক্ষণিক ডাক্তার এবং ডিপ্লোমা ডিগ্রিধারী সেবিকা। এখানে চিকিৎসা প্রদানের ক্ষেত্রে মানা হয় না সরকারি কোনো নিয়ম নীতি।
সিজারিয়ান অস্ত্রোপচার করা ডাক্তার প্রতাপ কুমার বিশ্বাসের মুঠোফোনে এ ব্যাপারে কথা বলতে যোগাযোগ করা হলে, অপারেশন থিয়েটারে আছি, পরে কথা হবে বলে সংযোগটি কেটে দেন।
কালীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের স্বত্বাধিকারী মিজানুর রহমান বলেন, আমার ক্লিনিকে নবজাতক মারা যাওয়া কোন ঘটনায় ঘটেনি।
কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার আলমগীর হোসেন বলেন, অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করতে আমি ওই প্রতিষ্ঠান পরিদর্শনে যাব। অভিযোগের সত্যতা মিললে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দেদারুল ইসলাম বলেন, চিকিৎসার নামে অপচিকিৎসা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালানো হবে। ওই প্রতিষ্ঠানে নবজাতকের মৃত্যুুর ঘটনাটি অবশ্যই খতিয়ে দেখা হবে। ঝিনাইদহ জেলা সিভিল সার্জনের দায়িত্বে থাকা ডাক্তার মিথিলা ইসলাম জানান,নবজাতকের মৃত্যুর ঘটনাটি দুঃখজনক। তবে ডাক্তার এবং ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের অবহেলা বা অব্যবস্থাপনায় যদি এমন ঘটনা ঘটে থাকে তাহলে অবশ্যই তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সম্পাদক ও প্রকাশক: কামরুজ্জামান জনি
Copyright © 2025 Muktirlorai | মুক্তির লড়াই. All rights reserved.