সৌরভ মাহমুদ হারুন
কুমিল্লার-শাসনগাছা-বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়া-মীরপুর সড়কটি দিন দিন ভয়ংকর মৃত্যুর ফাঁদে রূপ নিচ্ছে। প্রায় ৩৭ কিলোমিটার দীর্ঘ এই ব্যস্ততম সড়কটি এক বছরের ব্যবধানে ভয়াবহ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বিশেষ করে বুড়িচং ও ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার অন্তর্গত ১৩টি ইউনিয়নের অভ্যন্তরীণ রাস্তাঘাট ও প্রধান সড়কের প্রায় ৭০ শতাংশই ভেঙে গেছে।
দুই উপজেলার প্রশাসন ও সড়ক ও জনপদ বিভাগ (সওজ) জরুরি ভিত্তিতে কিছু জোড়াতালি সংস্কার করলেও তা একেবারেই অস্থায়ী এবং ঝুঁকিপূর্ণ। সড়কজুড়ে ছোট-বড় অসংখ্য গর্ত, খানাখন্দ ও পানি জমে তৈরি হয়েছে মরণফাঁদ। বৃষ্টির সময় এসব গর্ত আরও ভয়ানক রূপ নেয়, যেন সড়ক নয়, খাল-বিল।
বিশেষভাবে বিপজ্জনক অবস্থায় রয়েছে— পালপাড়া ব্রিজ থেকে মহেষপুর, কালখেরপাড়া, ভরাসার সোনার বাংলা কলেজ হয়ে ব্রাহ্মণপাড়া-মীরপুর পর্যন্ত প্রায় ১০-১৫টি স্থানে সড়কে বড় বড় গর্ত তৈরি হয়েছে। ভরাসার বাজারের দক্ষিণ পাশে, দক্ষিণ কোরিয়ার প্রবাসী নাঈমের মার্কেটের সামনে ৫০-৬০ মিটার এলাকা বৃষ্টির সময় হাঁটু পরিমাণ পানিতে তলিয়ে যায়। একই অবস্থা বুড়িচংয়ের এরশাদ ডিগ্রি কলেজ গেইট থেকে উপজেলা আওয়ামী লীগের পুরনো কার্যালয় পর্যন্ত।
ব্রাহ্মণপাড়ার টাটেরা, উপজেলা পশু হাসপাতাল এলাকা, বাজারের ডাচ্ বাংলা ব্যাংকের উত্তর পাশসহ বেশ কিছু অংশে পানি জমে থাকায় যান চলাচল প্রায় অচল হয়ে পড়ে। প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনায় পড়ছে যাত্রীবাহী অটোরিকশা, সিএনজি, পণ্যবাহী গাড়ি।
চরম ভোগান্তির চিত্র উঠে এসেছে সাধারণ মানুষের মুখে— ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা বলেন, "৪০ মিনিটের রাস্তা পাড়ি দিতে এখন লাগে ৭০-৮৫ মিনিট। সময়মতো অফিসে পৌঁছাতে না পারলে কথা শুনতে হয়। এছাড়া ৬০ টাকার ভাড়া এখন চালকরা নিচ্ছে ১০০-১২০ টাকা।"
গোপালনগর আদর্শ কলেজের অধ্যক্ষ আনিসুর রহমান সোহেল বলেন, "পুরো সড়কজুড়ে বড় বড় গর্ত আর খানাখন্দে ভরা। বর্ষায় পানি জমে যানবাহন উল্টে দুর্ঘটনা ঘটছে। যাত্রীদের জামা-কাপড় ভিজে যাচ্ছে, পণ্য নষ্ট হচ্ছে, কেউ কেউ গুরুতর আহতও হচ্ছেন।"
শিবরামপুর গ্রামের সিএনজি চালক জাকির হোসেন বলেন, "প্রতিদিন প্যারাসিটামল খেয়ে ঘুমাতে হয়। সিএনজি প্রতিদিনই মেরামত করতে হচ্ছে। পানি জমে ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে যায়, প্রায়ই দুর্ঘটনা হয়। অনেক চালক এই রোডে আর চালায় না।"
বুড়িচং উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. কবির হোসেন বলেন, "এটি যেন আর সড়ক নয়, খাল-নালায় পরিণত হয়েছে। রোগী নিয়ে হাসপাতালে যাওয়ার পথে আরও অসুস্থ হয়ে পড়ে। গর্ভবতী মায়েদের ক্ষেত্রে দুর্ঘটনা ঘটার শঙ্কা রয়েছে। দ্রুত সংস্কার না হলে বড় বিপর্যয় ঘটবে।"
বুড়িচং ও ব্রাহ্মণপাড়াবাসীর একটাই দাবি— দ্রুত এই গুরুত্বপূর্ণ সড়কটির পূর্ণ সংস্কার কাজ শুরু করে দীর্ঘদিনের দুর্ভোগের অবসান ঘটানো হোক।
প্রশাসনের বক্তব্য:
বুড়িচং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তানভীর হোসেন বলেন, "সড়কের একটি টেন্ডার বাতিল হওয়ায় প্রক্রিয়া বিলম্বিত হয়। নতুন করে ওয়ার্ক অর্ডার হয়েছে, তবে বর্ষার কারণে কাজ শুরু করা যাচ্ছে না। সওজকে অনুরোধ করে ঝুঁকিপূর্ণ অংশগুলো আপাতত রিপেয়ার করার ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।"
সড়ক ও জনপথ বিভাগের কুমিল্লা অঞ্চলের নির্বাহী প্রকৌশলী খন্দকার গোলাম মোস্তফা বলেন, "টেন্ডার কিছুদিন আগে সম্পন্ন হয়েছে। ঠিকাদার দ্রুত কাজ শুরু করবে। পূর্বের সংস্কার ছিল সাময়িক, কারণ টেন্ডার বিলম্বিত হওয়ায় দীর্ঘ সময় ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় ছিল সড়কটি।
সম্পাদক ও প্রকাশক: কামরুজ্জামান জনি
Copyright © 2025 Muktirlorai | মুক্তির লড়াই. All rights reserved.