মোঃ রফিকুল ইসলাম রাফিক, গাইবান্ধা
জেলার বিভিন্ন স্থানে মাটি ও বালুদস্যুদের দাপটে নদী ও সমতল ভূমি গভীর খাদের সৃষ্টি হচ্ছে এবং পানি ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন মানা হচ্ছে না।
নদীর খননের রক্ষিত বালু একশ্রেণীর প্রভাবশালী বসের উপর বছর লুট করে বিক্রি করছে। কারো কোন মাথা ব্যথা নেই।
বালু দস্যুরা বিশ্বরোডের লিকট, স্কুল ,মসজিদ এবং বসতবাড়ির নিকটে ড্রেজার মেশিন এবং স্যালো মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলন করা হলেও কারো কোন মাথা ব্যাথা নেই বলে অভিযোগ রয়েছে।
সম্প্রীতি গাইবান্ধা জেলার গোবিন্দগঞ্জ ,সাঘাটা, ফুলছড়ি, সাদুল্লাপুর ,সুন্দরগঞ্জ, পলাশ বাড়ী , সদর এলাকায় দুর্দান্ত দাপটে বালু দস্যুরা নদী ও কৃষি আবাসি জমি থেকে ড্রেজার মেশিনের সাহায্যে বালু উত্তোলন ও বিক্রি করছে।
এতে করে গ্রামীণ রাস্তা ও কৃষি আবাদি জমি নষ্ট হচ্ছে।
বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন, ২০১০-এর ধারা ৫-এর উপধারা ১ অনুযায়ী, পাম্প বা ড্রেজিং বা অন্য কোনো মাধ্যমে ভূগর্ভস্থ বালু বা মাটি উত্তোলন করা যাবে না। ধারা ৪-এর (খ) অনুযায়ী, সেতু, কালভার্ট, বাঁধ, সড়ক, মহাসড়ক, রেললাইন ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ও বেসরকারি স্থাপনা অথবা আবাসিক এলাকা থেকে এক কিলোমিটারের মধ্যে বালু উত্তোলন নিষিদ্ধ। আইন অমান্যকারীকে দুই বছরের কারাদণ্ড ও সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করার বিধান রয়েছে।
তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এসব আইনের কোনো প্রয়োগ দেখা যায় না।
গাইবান্ধা সদর, গোবিন্দগঞ্জ ও ফুলছড়ি, পলাশবাড়ী, সাদুল্যাপুর, সাঘাটা, সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন পয়েন্টে প্রতিদিন অবৈধভাবে প্রায় দেড় লক্ষাধিক ঘনফুট বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। বালু ব্যবসায়ীরা প্রতি ঘনফুট ২৩ টাকা হারে বিক্রি করে থাকে। এতে প্রতিদিন প্রায় ৩৬ লক্ষ টাকার কারবার হয়ে থাকে। উল্লেখিত পরিমাণ বালু পরিবহনে প্রতিদিন ডামট্রাক, ট্রাক্টর ও পাওয়ার ট্রিলার সহ শতাধিক মোটরযান ব্যবহার হয়ে থাকে।
একটি মহলের দাবি মহাসড়ক উন্নয়ন কাজের জন্য স্থানীয় নির্মাণের এই বায়ু গুলি ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার স্থানীয় হওয়ায় তার নেতৃত্বে চায়না কোম্পানিতে দেওয়া হচ্ছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে চায়না কোম্পানির কয়েকজন ব্যক্তি বলেন আলামীন স্যার সব কাজের দায়িত্ব রয়েছে উনি যা বলবেন তাই হবে। ওনার নেতৃত্বে কাটাখালি নদী এবং বিভিন্ন চর থেকে বালু উত্তোলন করে চুক্তিভিত্তিক ভাবে বালু চায়না কোম্পানির কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে।
অবাধে বালু উত্তোলনের কারণে নদিপথ পরিবর্তন, কৃষি আবাদী জমি বিলীন সহ পরিবেশের উপর মারাত্মক বিরুপ প্রভাব পরেছে।
অভিযোগ রয়েছে ম্যানেজ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বালু দস্যুরা তাদের কর্মকান্ড জোড়ছে চালিয়ে যাচ্ছে।
সাধারণ জনগণের আহাজারিতে ভারি হচ্ছে যে, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, ইউনিয়ন উপ-সহকারী কর্মকর্তা ভূমি, ইউনিয়ন উপ সহকারী কর্মকর্তা কৃষি, স্থানীয় হোমরা চোমড়া সহ সংশ্লিষ্ট সকল কে ম্যানেজের মাধ্যমে বালু দস্যুরা মাসের পর মাস বালু উত্তোলন বিক্রি ও পরিবহনের মাধ্যমে আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ হলেও কারো কোন মাথা ব্যাথা নেই।
জানা গেছে, প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে দীর্ঘদিন থেকে বালু খেকো সিন্ডিকেট অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে কোটি কোটি টাকা কামিয়ে নিচ্ছে।
মাঝে মধ্যে প্রশাসনিক তৎপরতা দেখা গেলেও অদৃশ্য কারণে বালু সিন্ডিকেটের কর্মকান্ড বন্ধ হচ্ছে না।
গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি উপজেলার গজারিয়া ইউনিয়নের নীলকুঠি-কাতলামারী বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধের বাঙ্গাপাড়া সুইসগেট সংলগ্ন এলাকায় ড্রেজার দিয়ে ভু‚গর্ভস্থ থেকে বালু উত্তোলন ও বিক্রি অব্যাহত রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নীলকুঠি-কাতলামারী বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধের বাঙ্গাপাড়া সুইসগেট সংলগ্ন এলাকায় সারাদিন একটি খাল থেকে বোরিং ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করছে। ড্রেজার দিয়ে সমতল মাটির তলদেশ থেকে বালু উত্তোলনের ফলে ফসলি জমি দেবে যাওয়াসহ আশপাশের পরিবেশেরও মারাত্মক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন।
এলাকাবাসী জানান, খাল থেকে বালু তোলার কারণে খালের আশপাশের সমস্ত জমি ধসে যাচ্ছে।
উত্তোলনকারী শহিদুল ইসলাম বলেন, বালু উত্তোলন করতে গেলে শুধু আপনারা (সাংবাদিক) ঝামেলা বাঁধান। প্রশাসন তো কখনো নিজেরা অভিযানে আসেন না।
এ ব্যাপারে গজারিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. খোরশেদ আলী খান বলেন, বোরিং ড্রেজার পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।
পরিবেশ রক্ষায় প্রশাসনের এসব ড্রেজার দ্রুত বন্ধ করা উচিত। এছাড়াও উপজেলার বেলকা ইউনিয়নের ভেড়ামারা খেয়া ঘাটের দক্ষিণ পাশ (মেট্রোসিন রাস্তা ও বাঁধের মাথায় তিস্তা নদীর পাড়ে আবাদি জমি) থেকে বালু ও মাটি উত্তোলন করে ট্রাক্টর যোগে মাটি কেটে পরিবহন করছে। ফলে হরিপুর ও বেলকা ইউনিয়নের কমপক্ষে পাঁচ হাজার মানুষের চলাচলের রাস্তা ভেঙ্গে গর্ত ও খানা খন্দের সৃষ্টি করেছে।
ফুলছড়ি উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভুমি) তানজিলা তাসনিম বলেন, বিষয়টি আমার জানা ছিলনা। খোঁজ নিয়ে ড্রেজার মালিক ও বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে, কিন্তু বালু উত্তোলন বন্ধ না হয়ে দ্বিগুণ আকারে বৃদ্ধি হয়েছে।
এদিকে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার কাটাখালী নদীর তীরবর্তী খানসাপাড়া, শাকপালা, দিঘলি ফুলবাড়ী, হাতিয়াদহ, তাজপুর, সমসপড়া শিক শহর, সাপমারা ইউনিয়নের চক রহিমাপুর উত্তরপাড়া ও নরেঙ্গাবাদ, তরক মনু, চক রহিমাপুর গ্রামের কয়েকজন ব্যক্তি দীর্ঘদিন যাবত প্রভাব খাটিয়ে উল্লেখিত এলাকায় বালু উত্তোলন ও বিক্রি করছে।
এলাকার গুচ্ছগ্রাম হুমকির মুখে ও সেখানকার সুইসগেটটি নদীগর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। এছাড়া সাহেবগঞ্জ মেরী ও চক রহিমাপুর উত্তরপাড়ায় শহিদুল ইসলাম, মিঠু মিয়া, সানোয়ার হোসেন, সাজু মিয়া, আয়তাল সহ একটি গ্রুপ অবৈধ বালু উত্তোলন ও বিক্রি করে আসছে।
অপরদিকে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার ঐতিহ্যবাহী সরবড়দিঘী শুখিয়ে ভেকুদ্বারা মাটি কেটে বিক্রির মহোৎসবে মেতে উঠেছে। ঐতিহ্যবাহী সরবড়দিঘী অস্তিত্ব সংকটে বিলিন হতে চলেছে।
সম্পাদক ও প্রকাশক: কামরুজ্জামান জনি
Copyright © 2025 Muktirlorai | মুক্তির লড়াই. All rights reserved.