নিজস্ব প্রতিবেদক
রাজধানীর গুলশান-বনানী এলাকায় প্রায় অর্ধশতাধিক বৈধ/অবৈধ স্পা সেন্টার রয়েছে। অভিযোগ আছে, এসব স্পা সেন্টারে বেশিরভাগের আড়ালে চলে দেহব্যবসা আর মাদকের রমরমা আয়োজন। যেখানে তরুণ থেকে শুরু করে সব বয়সী পুরুষদের টার্গেট করে হরেক রকম অনৈতিক আয়োজনে ঠাসা থাকে। এতেই স্পা মালিকরা অল্পদিনে টাকা আয়ে ফুলে ফেলে উঠে।
কিন্তু এই পথে বাধা আসে প্রশাসন থেকে। তাই তারা প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে অবৈধ এই ব্যবসা চালানোর জন্য ফাঁদ ফোকর খুঁজতে থাকে। আর তাদের এক কাজে যারা সহায়তা করে তাদের মধ্যে অন্যতম ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তা হারুন। তিনি প্রশাসনের কিছু কতিপয় অসাধু কর্মকর্তার সাথে যোগসাজশে এসব অবৈধ স্পা সেন্টারের রক্ষাকর্তা হিসাবে কাজ করেন। আর এর বিপরীতে গুলশান-বনানীর প্রতিটি স্পা সেন্টার আদায় করেন অর্ধ লক্ষাধিক হারে চাঁদা।
অনুসন্ধানের জানা যায়, হারুরকে প্রতি মাসে টাকা দিলেই স্পা সেন্টারগুলো অবাধে ব্যবসা করার সুযোগ পায়। আরও জানা যায়, তার এই কাজে অন্যতম সহযোগী কথিত হলুদ সাংবাদিক জাফর। এই কথিত সাংবাদিক সম্প্রতি ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গুলশান বিভাগের উপকমিশনারের (ডিসি) ‘নাম ভাঙিয়ে’ চাঁদা নেওয়ার অভিযোগ উঠে। এ বিষয়ে ডিএমপি কমিশনার বরাবর তথ্য জানা শর্তে একটি অভিযোগ জমা দেওয়া হয়েছে।
পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে এক স্পা মালিক বলেন, মাসে পুলিশকে দিতে হয় প্রায় সাড়ে ৪ লাখ টাকা। এরপর হলুদ সাংবাদিক জাফরকে দিতে হয় ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা, রাজনৈতিক দল, এলাকার লোকজনসহ নানা সময়ে দিতে হয় বিভিন্ন অঙ্কের চাঁদা। চাঁদা না দিলে ব্যবসা বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দেয় হলুদ সাংবাদিক জাফর ও সিটি কর্পোরেশনে হারুন, আবার রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে কেউ কেউ লুটপাটে উঠেপড়ে লেগেছে। নতুন করে এ ব্যবসায়ও জড়াচ্ছে অনেকে।
সম্প্রতি ডিএমপির গুলশান বিভাগের উপকমিশনারের (ডিসি) নাম ভাঙিয়ে চাঁদা নেওয়ার অভিযোগ ওঠে হলুদ সাংবাদিক পরিচয় দেওয়া জাফর নামে এক বিরুদ্ধে। সাংবাদিক পরিচয় দেওয়া জাফর একটি স্পা সেন্টারে বসে টাকা গুনছেন, এমন একটি ভিডিও আমাদের মাতৃভূমির হাতে এসেছে।
আরেক স্পা সেন্টারের মালিক অভিযোগ করে বলেন, জাফর স্পা সেন্টারের মালিক হয়েও নিজেকে সাংবাদিক পরিচয় দেন এবং সে পরিচয়ে বিভিন্ন মানুষকে ফাঁদে ফেলে প্রতারণা করে টাকা হাতিয়ে নেন।
একসময় আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকলেও গত ৫ আগস্টের পর হঠাৎ সাংবাদিক বনে যান জাফর। তার নামে গুলশানসহ ঢাকার বিভিন্ন থানায় বেশ কিছু প্রতারণার জিডিও রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট আরেক ব্যবসায়ী বলেন, মোবাইল ফোনে জাফর বলেন, তোমাদের স্পা সেন্টারে দেহব্যবসা হয়। আর এ ব্যবসা অবৈধ। তুমি যদি গুলশানে স্পা ব্যবসা করতে চাও, তাহলে ডিসি-ওসি থানা-ফাঁড়িসহ ও সিটি কর্পোরেশনের টাকা হারুনকে আমার মাধ্যমে দিতে হবে।
এই বিষয়ে জাফরকে ফোন দিলে তিনি বলেন স্পা থেকে চাঁদা নেওয়ার বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন উল্লেখ করে জাফর বলেন, ‘ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের অভিযানে কয়েকটি স্পা সেন্টার বন্ধ হয়ে যায়। স্পা সেন্টার বন্ধের পেছনে আমার হাত রয়েছে এমনটা মনে করে ব্যবসায়ীরা তাই আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ দিচ্ছেন।’
টাকা নেওয়ার একটি ভিডিও ভাইরাল হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি দৈনিক আমাদের মাতৃভূমিকে বলেন, একটি স্পা সেন্টার নিয়ে নিউজ করায় আমি মীমাংসা করতে যাই। কিন্তু মীমাংসা করতে না পাড়ায় পরবর্তীকালে আবার টাকা ফেরত দেওয়া হয়।”
এদিকে পুলিশের নাম ভাঙিয়ে চাঁদা নেওয়া ও ডিএমপি কমিশনার বরাবর অভিযোগের বিষয়ে জানতে গতকাল সন্ধ্যা ৬টায় গুলশান বিভাগের ডিসি তারিক মাহমুদকে একাধিকবার মোবাইলে ফোন ও এসএমএস দিলেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
অভিযোগে বলা হয়েছে, জাফরের সঙ্গে ডিসির বডিগার্ড মেহেদীর গভীর সম্পর্ক রয়েছে। গত নভেম্বরের ১৯ তারিখে বিকেলে বনানীর ‘টাইম আউট’ রেস্টুরেন্টে মেহেদী ও জাফর ও সিটি কর্পোরেশনের হারুন বনানীর স্পা সেন্টারের মালিকদের সঙ্গে মিটিং করেন। ওই মিটিংয়ে মাসিক চাঁদার হার নির্ধারণ করা হয়।
সম্পাদক ও প্রকাশক: কামরুজ্জামান জনি
Copyright © 2025 Muktirlorai | মুক্তির লড়াই. All rights reserved.