কুমিল্লায় ২ লাখ টাকা চাঁদা না দেওয়ায় হারুন উর রশিদ (৫০) নামের এক টেলিকম ব্যবসায়ীর ওপর হামলা চালিয়ে তাকে হাতুড়ি, চাইনিজ কুড়ালসহ বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে আহত করার অভিযোগ ওঠেছে ওমর ফারুক (৩৮) নামের এক সন্ত্রাসীর বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগীর পরিবার মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
সোমবার (৬ মার্চ) সকাল ১০টায় জেলার মনোহরগঞ্জ উপজেলার বাইশগাঁও ইউনিয়নের কেয়ারী টেক মার্কেট এলাকায় এ হামলা চালানো হয়। হামলায় মারাত্মক আহত হয়ে ব্যবসায়ী হারুন উর রশিদ কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।
ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী হারুন উর রশিদ মনোহরগঞ্জ উপজেলার বাইশগাঁও ইউনিয়নের কেয়ারী নতুন বড় বাড়ির মৃত রুস্তম আলীর ছেলে।
অভিযুক্ত হামলাকারীরা হলেন, কেয়ারী এলাকার দেলোয়ার হোসেনের ছেলে ওমর ফারুক (৩৮), হাউড়া এলাকার দুলাল মিয়ার ছেলে বাইশগাঁও ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রাসেল হোসেন, কেয়ারী এলাকার মফিজুর রহমান বাবুলের ছেলে ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সভাপতি আরাফাত হোসেন এবং কেয়ারী এলাকার বাচ্চু মিয়ার ছেলে আব্দুর রাজ্জাক ওরফে আব্দুল্লাহ (২৩)।
বুধবার (৮ মার্চ) রাতে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ক্যাজুয়ালিটি বিভাগের পুরুষ ওয়ার্ডের বেডে এসব তথ্য জানান ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী হারুন উর রশিদ।
তিনি জানান, অভিযুক্ত ওমর ফারুক একজন চিহ্নিত সন্ত্রাসী। তার বিরুদ্ধে হত্যাসহ ১৭টির মত মামলা রয়েছে। তার ভয়ে এলাকার মানুষ নাস্তানাবুদ। দাদঘর বাজারের সকল ব্যবসায়ীরা তার জ্বালায় অতিষ্ঠ। সকল ব্যবসায়ীদের কাছে চাঁদা দাবি করেন ফারুক। কেউ চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তার ওপর নেমে আসে দুর্বিষহ অত্যাচার।
ভুক্তভোগী বলেন, আমি একজন টেলিকম ব্যবসায়ী। স্থানীয় দাদঘর বাজারে আমার একটি টেলিকম দোকান রয়েছে। পাশাপাশি আমি বুরো মৌসুমে মানুষের ধানী জমিতে শ্যালো মেশিন দিয়ে পানি দিয়ে আয় রোজগার করে থাকি। গত ১৫ ফেব্রুয়ারি সন্ত্রাসী ফারুক আমার কাছে এসে ২ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। আমি চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে ওমর ফারুক তার দলবল নিয়ে রাতের বেলা আমার বাড়িতে হামলা চালায়। পরে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ নম্বরে ফোন করলে পুলিশ এলে সন্ত্রাসী ফারুক তার সাঙ্গপাঙ্গদের নিয়ে পালিয়ে যান। পরে পুলিশ চলে যাওয়ার পর তারা আবার হামলা চালায়, আমি আবার ৯৯৯ নম্বরে ফোন করলে আবার পুলিশ আসে। পরে রাত ৩টা পর্যন্ত পুলিশ আমার বাড়িতে অবস্থান নিলে তারা আর আসেনি।
এরপর আমি মনোহরগঞ্জ থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করি। থানায় অভিযোগ দেওয়ার পর আরও বেশি বেপরোয়া হয়ে ওঠেন ফারুক। বিভিন্ন সময় আমাকে হুমকি ধমকি দিতে থাকেন।
গত সোমবার (৬ মার্চ) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে আমি দাদঘর বাজার থেকে দোকান বন্ধ করে বাড়ি আসার পথে কেয়ারী টেক মার্কেট এলাকায় এসে পৌঁছুলে সন্ত্রাসী ফারুক ছাত্রলীগ নেতা রাসেল, হৃদয় আরাফাত এবং আব্দুল্লাহ আমার গতিরোধ করে সামনে দাঁড়ায়। এসময় তারা আমাকে হাতুড়ি, এসএস পাইপ, চাইনিজ কুড়াল দিয়ে এলোপাতাড়ি আঘাত করতে থাকে। এতে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে আমি জ্ঞান হারাই। পরে শুনি হামলায় বাধা দিতে এলে আমার ছোট ছেলে ইমরান এবং ভাতিজা শাহাদাতও আঘাতপ্রাপ্ত হয়।
রক্তাক্ত অবস্থায় আমাকে উদ্ধার করে মনোহরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক আমাকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। বর্তমানে আমি কুমিল্লা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন আছি। আমার চিকিৎসার উন্নতি হলে আমার পরিবার মামলা করবে।
তিনি বলেন, আমি এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই। সন্ত্রাসী ফারুক ওই এলাকার সকল ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদা দাবি করেন। ওই এলাকার মানুষ তার নিষ্ঠুরতার কাছে জিম্মি। আমি মাননীয় মন্ত্রী তাজুল ইসলাম মহোদয়, কুমিল্লার জেলাপ্রশাসক মহোদয় এবং কুমিল্লার পুলিশ সুপার মহোদয়ের কাছে এর বিচার চাই।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত ওমর ফারুককে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ না করায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
মনোহরগঞ্জ থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিউল আলম বলেন, আমি ছুটিতে ছিলাম কয়েকদিন। এ বিষয়ে এখনও কোনও লিখিত অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কুমিল্লা জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) খন্দকার আশফাকুজ্জামান বলেন, ঘটনাটি খোঁজ নিয়ে জেনে বিস্তারিত জানাতে পারব।
সম্পাদক ও প্রকাশক: কামরুজ্জামান জনি
Copyright © 2025 Muktirlorai | মুক্তির লড়াই. All rights reserved.