ঢাকা ০৫:১২ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ০৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
Logo চান্দিনা পৌরসভার জন্ম নিবন্ধনে প্রায়ই বন্ধ থাকে সার্ভার, ভোগান্তিতে সেবা গ্রহীতারা Logo মহেশখালীতে গভীর সমুদ্রে ডাকাতের কবলে পড়া ১১ জন জেলে উদ্ধার Logo শাহরাস্তিতে ২ শিক্ষার্থীকে যৌন হয়রানির অভিযোগে শিক্ষক আটক Logo লালমনিরহাটে বৈষম্যমুলক নিয়োগ প্রক্রিয়া ও নিয়োগ পরিক্ষা বাতিল চেয়ে মানববন্ধন Logo বুড়িচংয়ে পরকীয়া প্রেমের জেরে প্রবাসীর কবজি কেটে দিল প্রেমিক ও তার ভাই Logo সুনামগঞ্জে গানে গানে বাউল কামালের ১২৪ তম জন্মবার্ষিকী পালিত Logo মুরাদনগরে বিএনপি’র দোয়া মাহফিল থেকে সাংবাদিকের মোটরসাইকেল চুরি Logo বরুড়ায় ৭ ডিসেম্বর হানাদারমুক্ত দিবস পালিত Logo বেগমগঞ্জে কবর থেকে বস্তাবন্দি একনলা বন্দুক-পাইপগান উদ্ধার Logo আইএসইউর মানবিক উদ্যোগ বরুড়ায় শীতবস্ত্র বিতরণ

২০ লাখ টাকা বকেয়া

চান্দিনা পৌরসভার জন্ম নিবন্ধনে প্রায়ই বন্ধ থাকে সার্ভার, ভোগান্তিতে সেবা গ্রহীতারা

টি.আর দিদার, চান্দিনা (কুমিল্লা)

কুমিল্লার চান্দিনা পৌরসভার জন্ম নিবন্ধন বিভাগে দীর্ঘদিন ধরে অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনা চরমে পৌঁছেছে। শুরু থেকে এ পর্যন্ত নাগরিকদের জন্ম নিবন্ধন বাবদ আদায়কৃত ২০ লক্ষাধিক টাকা সরকারি হিসেবে জমা হয়নি বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। পৌরসভার সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও কর্মচারীদের যোগসাজশে এই অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে।

জানা যায়, ১৯৯৭ সালে প্রতিষ্ঠিত চান্দিনা পৌরসভায় ২০০৬ সাল থেকে হাতে লেখা জন্মনিবন্ধন কার্যক্রম শুরু হয়। ডিজিটাল বাংলাদেশের অংশ হিসেবে ২০১২ সালের শেষ দিক থেকে জন্ম নিবন্ধন অনলাইন কার্যক্রম শুরু হয়।

জন্মনিবন্ধন বিধি অনুযায়ী, ০ থেকে ৪৫ দিন পর্যন্ত বিনা পয়সায়, ৫ বছরের নিচে শিশুর জন্ম নিবন্ধনের সরকারি ফি ২৫ টাকা ও ৫ বছরের বেশি বয়সের ক্ষেত্রে ফি ৫০ টাকা নির্ধারিত। কিন্তু বাস্তবে সেবা গ্রহীতাদের কাছ থেকে এর চেয়ে বহুগুণ বেশি টাকা আদায় করা হলেও নূন্যতম সেই ফি সরকারি অ্যাকাউন্টে জমা রাখা হয়নি। অভিযোগ রয়েছে পৌরসভার সচিব থেকে শুরু করে জন্মনিবন্ধন কাজে নিয়োজিত কিছু অসাধু কর্মচারী ওই অর্থ ভাগ-বাটোয়ারা করে আত্মসাৎ করে আসছেন।

২০০৬ সাল থেকে হাতে লেখা জন্মনিবন্ধন ফি ২৫-৫০ টাকার স্থলে কমপক্ষে একশ এবং সর্বোচ্চ পাঁচশ টাকা পর্যন্ত আদায় করেছে সংশ্লিষ্ট কাজে নিয়োজিতরা। সেই মোতাবেক বর্তমান পর্যন্ত জন্মনিবন্ধন বাবদ আদায় করা কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে সংশ্লিষ্টরা।

এদিকে জন্মনিবন্ধন সেবার সার্ভার প্রায়ই অচল থাকায় সেবা নিতে এসে ভোগান্তিতে পড়ছেন সাধারণ মানুষ। দিনের পর দিন পৌরসভায় ঘুরে ঘুরেও কাঙ্খিত সেবা পাচ্ছেন না অনেক আবেদনকারী।

সেবা গ্রহীতারা জানান, সার্ভার সমস্যা ও অতিরিক্ত টাকা আদায়ের কারণে তারা চরম হয়রানির শিকার হচ্ছেন। কেউ কেউ দাবি করছেন, ২৫ বা ৫০ টাকার পরিবর্তে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত দিতে হয়েছে। তবুও সময় মতো সেবা মিলছে না।

নাম প্রকাশ না করা শর্তে পৌরসভার একাধিক কর্মচারী বলেন- ২০১৩ সাল থেকে চান্দিনা পৌরসভার কাছে জন্মনিবন্ধন অনলাইন ফি বাবদ জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন রেজিস্টার জেনারেলের কার্যালয় ২৮ লাখ টাকা পাওনা হয়। কয়েক দফায় প্রায় ৮ লাখ টাকা পরিশোধ করলেও এখনও প্রায় ২০ লাখ টাকা বাকি। ওই বকেয়া পরিশোধ করতে না পারায় আমাদের চান্দিনা পৌরসভা থেকে বদলী হওয়া পৌর নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইউসুফ আলী’র আইডি এখনও ব্যবহার করা হচ্ছে। টাকা পরিশোধ না করা হলে ওই আইডিও পরিবর্তন করা যাচ্ছে না।

চান্দিনা পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা মো. জাকির হোসেন জানান- ২০১৩ সাল থেকে ২৫ থেকে ৫০ টাকার হিসেবে যদি রেজিস্টার জেনারেলের কার্যালয় ২০ লাখ টাকা পাওনা হয় তাহলে ২০০৬ সাল থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত গ্রাহকদের কাছ থেকে সর্বনিম্ন ১শ থেকে সর্বোচ্চ ৫শ টাকা পর্যন্ত যে টাকা আদায় করা হয়েছে তাতে কত কোটি টাকা আত্মসাৎ হয়েছে?

স্থানীয় নাগরিকদের দাবি অনিয়মের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক এবং জন্ম নিবন্ধন সেবা স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক করা হোক।

চান্দিনা পৌরসভার জন্মনিবন্ধন কাজে নিয়োজিত টিকাদান সুপার ভাইজার মো. আব্দুল ওয়াদুদ জানান- জন্মনিবন্ধনের মাসিক টার্গেট পূরণ জন্য মেয়রগণ বিনামূল্যে অনেক জন্মনিবন্ধন করেছে। ২০২২ সাল থেকে বকেয়াটা আরও বৃদ্ধি পায়। এখানে আমি বা আমার দপ্তর কোন টাকা আত্মসাৎ করেনি।

এ ব্যাপারে পৌর প্রশাসক ও চান্দিনা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মোহাম্মদ আশরাফুল হক জানান- পৌরসভা থেকে জন্মনিবন্ধন বিনা মূল্যে দেয়া হয়না, তাহলে কেন বকেয়া থাকবে সেটা আমারও প্রশ্ন। বিষয়টি আমি জানার পর কোন অর্থ বছর কত টাকা বকেয়া সেই হিসাব চেয়ে মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে। সেখান থেকে উত্তর আসার পর তদন্ত সাপেক্ষে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তবে বকেয়ার কারণে সার্ভার বন্ধ থাকার বিষয়টি সঠিক না। মূলত সার্ভার জটিলতায় মাঝে মধ্যে বন্ধ থাকে।

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

চান্দিনা পৌরসভার জন্ম নিবন্ধনে প্রায়ই বন্ধ থাকে সার্ভার, ভোগান্তিতে সেবা গ্রহীতারা

SBN

SBN

২০ লাখ টাকা বকেয়া

চান্দিনা পৌরসভার জন্ম নিবন্ধনে প্রায়ই বন্ধ থাকে সার্ভার, ভোগান্তিতে সেবা গ্রহীতারা

আপডেট সময় ১০:২৮:০৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ৭ ডিসেম্বর ২০২৫

টি.আর দিদার, চান্দিনা (কুমিল্লা)

কুমিল্লার চান্দিনা পৌরসভার জন্ম নিবন্ধন বিভাগে দীর্ঘদিন ধরে অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনা চরমে পৌঁছেছে। শুরু থেকে এ পর্যন্ত নাগরিকদের জন্ম নিবন্ধন বাবদ আদায়কৃত ২০ লক্ষাধিক টাকা সরকারি হিসেবে জমা হয়নি বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। পৌরসভার সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও কর্মচারীদের যোগসাজশে এই অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে।

জানা যায়, ১৯৯৭ সালে প্রতিষ্ঠিত চান্দিনা পৌরসভায় ২০০৬ সাল থেকে হাতে লেখা জন্মনিবন্ধন কার্যক্রম শুরু হয়। ডিজিটাল বাংলাদেশের অংশ হিসেবে ২০১২ সালের শেষ দিক থেকে জন্ম নিবন্ধন অনলাইন কার্যক্রম শুরু হয়।

জন্মনিবন্ধন বিধি অনুযায়ী, ০ থেকে ৪৫ দিন পর্যন্ত বিনা পয়সায়, ৫ বছরের নিচে শিশুর জন্ম নিবন্ধনের সরকারি ফি ২৫ টাকা ও ৫ বছরের বেশি বয়সের ক্ষেত্রে ফি ৫০ টাকা নির্ধারিত। কিন্তু বাস্তবে সেবা গ্রহীতাদের কাছ থেকে এর চেয়ে বহুগুণ বেশি টাকা আদায় করা হলেও নূন্যতম সেই ফি সরকারি অ্যাকাউন্টে জমা রাখা হয়নি। অভিযোগ রয়েছে পৌরসভার সচিব থেকে শুরু করে জন্মনিবন্ধন কাজে নিয়োজিত কিছু অসাধু কর্মচারী ওই অর্থ ভাগ-বাটোয়ারা করে আত্মসাৎ করে আসছেন।

২০০৬ সাল থেকে হাতে লেখা জন্মনিবন্ধন ফি ২৫-৫০ টাকার স্থলে কমপক্ষে একশ এবং সর্বোচ্চ পাঁচশ টাকা পর্যন্ত আদায় করেছে সংশ্লিষ্ট কাজে নিয়োজিতরা। সেই মোতাবেক বর্তমান পর্যন্ত জন্মনিবন্ধন বাবদ আদায় করা কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে সংশ্লিষ্টরা।

এদিকে জন্মনিবন্ধন সেবার সার্ভার প্রায়ই অচল থাকায় সেবা নিতে এসে ভোগান্তিতে পড়ছেন সাধারণ মানুষ। দিনের পর দিন পৌরসভায় ঘুরে ঘুরেও কাঙ্খিত সেবা পাচ্ছেন না অনেক আবেদনকারী।

সেবা গ্রহীতারা জানান, সার্ভার সমস্যা ও অতিরিক্ত টাকা আদায়ের কারণে তারা চরম হয়রানির শিকার হচ্ছেন। কেউ কেউ দাবি করছেন, ২৫ বা ৫০ টাকার পরিবর্তে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত দিতে হয়েছে। তবুও সময় মতো সেবা মিলছে না।

নাম প্রকাশ না করা শর্তে পৌরসভার একাধিক কর্মচারী বলেন- ২০১৩ সাল থেকে চান্দিনা পৌরসভার কাছে জন্মনিবন্ধন অনলাইন ফি বাবদ জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন রেজিস্টার জেনারেলের কার্যালয় ২৮ লাখ টাকা পাওনা হয়। কয়েক দফায় প্রায় ৮ লাখ টাকা পরিশোধ করলেও এখনও প্রায় ২০ লাখ টাকা বাকি। ওই বকেয়া পরিশোধ করতে না পারায় আমাদের চান্দিনা পৌরসভা থেকে বদলী হওয়া পৌর নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইউসুফ আলী’র আইডি এখনও ব্যবহার করা হচ্ছে। টাকা পরিশোধ না করা হলে ওই আইডিও পরিবর্তন করা যাচ্ছে না।

চান্দিনা পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা মো. জাকির হোসেন জানান- ২০১৩ সাল থেকে ২৫ থেকে ৫০ টাকার হিসেবে যদি রেজিস্টার জেনারেলের কার্যালয় ২০ লাখ টাকা পাওনা হয় তাহলে ২০০৬ সাল থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত গ্রাহকদের কাছ থেকে সর্বনিম্ন ১শ থেকে সর্বোচ্চ ৫শ টাকা পর্যন্ত যে টাকা আদায় করা হয়েছে তাতে কত কোটি টাকা আত্মসাৎ হয়েছে?

স্থানীয় নাগরিকদের দাবি অনিয়মের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক এবং জন্ম নিবন্ধন সেবা স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক করা হোক।

চান্দিনা পৌরসভার জন্মনিবন্ধন কাজে নিয়োজিত টিকাদান সুপার ভাইজার মো. আব্দুল ওয়াদুদ জানান- জন্মনিবন্ধনের মাসিক টার্গেট পূরণ জন্য মেয়রগণ বিনামূল্যে অনেক জন্মনিবন্ধন করেছে। ২০২২ সাল থেকে বকেয়াটা আরও বৃদ্ধি পায়। এখানে আমি বা আমার দপ্তর কোন টাকা আত্মসাৎ করেনি।

এ ব্যাপারে পৌর প্রশাসক ও চান্দিনা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মোহাম্মদ আশরাফুল হক জানান- পৌরসভা থেকে জন্মনিবন্ধন বিনা মূল্যে দেয়া হয়না, তাহলে কেন বকেয়া থাকবে সেটা আমারও প্রশ্ন। বিষয়টি আমি জানার পর কোন অর্থ বছর কত টাকা বকেয়া সেই হিসাব চেয়ে মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে। সেখান থেকে উত্তর আসার পর তদন্ত সাপেক্ষে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তবে বকেয়ার কারণে সার্ভার বন্ধ থাকার বিষয়টি সঠিক না। মূলত সার্ভার জটিলতায় মাঝে মধ্যে বন্ধ থাকে।