বিছিন্নতাবাদের ভ্রান্ত মতবাদ ছড়ানো, বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলা, প্রতিরক্ষা বাজেট বাড়ানো—সম্প্রতি তাইওয়ান কর্তৃপক্ষের ‘স্বাধীন তাইওয়ান’-এর নামে বিছিন্নতাবাদের ধারাবাহিক কর্মকাণ্ড আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে তীব্র সমালোচনার সম্মুখীন হচ্ছে। চায়না মিডিয়া গ্রুপের (সিএমজি) সিজিটিএনের বিশ্বব্যাপী নেটিজেনদের জন্য পরিচালিত এক জরিপে দেখা গেছে, প্রায় ৯০% (৮৯.৮%) উত্তরদাতা মনে করেন যে একচীন নীতি ইতোমধ্যেই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ব্যাপক ঐকমত্যে পরিণত হয়েছে এবং তারা তাইওয়ান কর্তৃপক্ষের ‘স্বাধীনতা’র নামে বিভেদ সৃষ্টি ও উস্কানিমূলক নিচু চালের তীব্র সমালোচনা করেছেন।
বিশ্বে মাত্র একটি চীন রয়েছে, তাইওয়ান চীনের অবিচ্ছেদ্য অংশ, এটি তাইওয়ান প্রণালীর বাস্তব অবস্থা। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ২৭৫৮ নং প্রস্তাব রাজনৈতিক, আইনি ও প্রক্রিয়াগতভাবে তাইওয়ানসহ গোটা চীনের জাতিসংঘে প্রতিনিধিত্বের ইস্যু সম্পূর্ণরূপে সমাধান করেছে এবং একটি চীন নীতিকে দৃঢ়ভাবে নিশ্চিত ও পূর্ণরূপে প্রতিফলিত করেছে, যা একটি ‘লৌহদৃঢ় নিয়ম’। জরিপে ৯০.২% উত্তরদাতা মনে করেন যে সকল দেশের উচিত জাতিসংঘের প্রস্তাব বাস্তবায়ন করা; ৮৭.৭% উত্তরদাতা স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন যে, একচীন নীতি এবং ‘১৯৯২ ঐকমত্য’কে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরার মাধ্যমেই কেবল তাইওয়ান প্রণালীর শান্তি ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা যায় এবং তাইওয়ানের অর্থনীতি দুই তটের অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও সমন্বিত উন্নয়নের মাধ্যমে আরও বেশি স্থান ও নিশ্চয়তা পেতে পারে।
গত কিছু সময় ধরে, তাইওয়ান কর্তৃপক্ষ জিদপূর্বক ‘স্বাধীন তাইওয়ান’ অবস্থান ধরে রেখেছে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ইতিহাস এবং জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ২৭৫৮ নং প্রস্তাব বিকৃত করেছে, এবং ‘সামরিক শক্তির মাধ্যমে স্বাধীনতা’, ‘বহিরাগত শক্তির উপর নির্ভর করে স্বাধীনতা’ ও সেনাবাহিনী সম্প্রসারণ এবং যুদ্ধের প্রস্তুতির মাধ্যমে বিভক্তিকরণের স্বপ্ন দেখছে। জরিপে ৮৯.১% উত্তরদাতা মনে করেন যে তাইওয়ান কর্তৃপক্ষের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলার ঘোষণা এবং ২০৩০ সালের মধ্যে প্রতিরক্ষা বাজেট উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ানোর পরিকল্পনা তাইওয়ান প্রণালীর উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে তুলবে; ৮২.৭% উত্তরদাতা তাইওয়ান কর্তৃপক্ষের উপরোক্ত পদক্ষেপের সমালোচনা করেছেন, যা তাইওয়ানের জনগণের বোঝা ব্যাপকভাবে বাড়িয়ে দেবে এবং তাদের যুদ্ধের বিপজ্জনক পরিস্থিতির দিকে নিয়ে যাবে। কেবল একচীন নীতি দৃঢ়ভাবে অনুসরণ করা, ‘স্বাধীন তাইওয়ানে’র বিরোধিতা করা, দুই তীরের সম্পর্কের শান্তিপূর্ণ উন্নয়ন করা এবং জাতির সম্পূর্ণ পুনর্মিলন তাইওয়ান সমাজের সম্প্রীতি ও শান্তি এবং তাইওয়ানের স্বদেশিদের শান্তিপূর্ণ ও সুখী জীবনযাপন উন্নীত করার সঠিক পছন্দ। জরিপে ৯২.৬% উত্তরদাতা মনে করেন যে, তাইওয়ান প্রণালীর শান্তি ও স্থিতিশীলতা এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল এবং বৈশ্বিক নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ; ৯২.৭% উত্তরদাতা তাইওয়ান কর্তৃপক্ষের কাছে আহ্বান জানান যে, তাদের ‘শান্তি চাই, যুদ্ধ নয়; উন্নয়ন চাই, অবনতি নয়; বিনিময় চাই, বিচ্ছিন্নতা নয়; সহযোগিতা চাই, প্রতিরোধ নয়’—এই মূলধারার জনমতের দিকে ফিরে আসা উচিত, উস্কানিমূলক কর্মকাণ্ড বন্ধ করা উচিত এবং তাইওয়ান প্রণালীর পরিস্থিতির উত্তেজনা এড়ানো উচিত।
বেইজিং দৃঢ়ভাবে এমন দেশগুলোর বিরোধিতা করে, যারা চীনের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক থাকা সত্ত্বেও তাইওয়ানের সাথে কোনো ধরনের সরকারি বিনিময় চালায় এবং তাইওয়ানে গিয়ে বেড়ানো বিদেশি রাজনীতিবিদদের কাছে আহ্বান জানায় যে, তারা যেন চীনের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ বন্ধ করেন এবং ‘স্বাধীন তাইওয়ান’ বিভক্তিকরণের কর্মকাণ্ড সমর্থন ও প্রশ্রয় দেওয়া বন্ধ করেন। জরিপে ৯১.১% উত্তরদাতা মনে করেন যে তাইওয়ান ইস্যু চীনের মানুষদের নিজেদেরই সমাধান করা উচিত, অন্য দেশগুলোর হস্তক্ষেপ করা উচিত নয়; ৮০.৬% উত্তরদাতা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন যে তাইওয়ান কর্তৃপক্ষের ক্রমাগত ‘স্বাধীনতা’র নামে বিভেদ সৃষ্টি ও উসকানিমূলক কর্মকাণ্ড মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীনকে সংঘাত ও প্রতিরোধের বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে টেনে আনতে পারে; ৮১.৫% উত্তরদাতা মার্কিন সরকারের কাছে আহ্বান জানান যে তাদের তাইওয়ান ইস্যু সতর্কতার সাথে পরিচালনা করা উচিত এবং বাস্তব কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে ‘স্বাধীন তাইওয়ান’ বিরোধী অবস্থান স্পষ্টভাবে প্রকাশ করা উচিত।
এই জরিপটি সিজিটিএনের ইংরেজি, স্প্যানিশ, ফরাসি, আরবি এবং রাশিয়ান প্ল্যাটফর্মে প্রকাশিত হয়, যেখানে ২৪ ঘন্টার মধ্যে মোট ১৩ হাজার ৬৫০ জন নেটিজেন ভোট দিয়ে তাদের মতামত প্রকাশ করেছেন।
সূত্র : স্বর্ণা-হাশিম-লিলি,চায়না মিডিয়া গ্রুপ।
সম্পাদক ও প্রকাশক: কামরুজ্জামান জনি
Copyright © 2025 Muktirlorai | মুক্তির লড়াই. All rights reserved.