শাহিনুর রহমান পিন্টু, ঝিনাইদহ
শিল্পায়নের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে কৃষকের ফসলের মাঠে। এমনই ঘটনা ঘটছে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার বারোবাজার ইউনিয়নের পিরোজপুর গ্রামের মাঠে।
এই গ্রামের মাঠে যশোর খুলনা হাইওয়ে সড়কঘেঁষে ছয় বিঘা জমির উপর নির্মিত মজুমদার এগ্রো টেক ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড নামক কোম্পানির বিরুদ্ধে বয়লার থেকে নির্গত ছায়যুক্ত কালো ধোয়া ও সুষ্ঠু বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং প:নিষ্কাশনের অভাবে আবাদি ফসল এমনকি কৃষি কাজের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
জানা যায়, রাইস ব্র্যান ওয়েল উৎপাদনকারী মজুমদার এগ্রো টেক কোম্পানি প্রায় ২০ দিন আগে উৎপাদন কার্য শুরু করে। উৎপাদন কার্য শুরু থেকে কারখানাটির বয়লারের কালো ধোয়ার সাথে কুচি কুচি ছায় আশপাশের কৃষি জমিসহ বসতবাড়ির উপরে যেয়ে পড়ছে। এতে করে একদিকে যেমন মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে অন্যদিকে, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে মাঠে থাকা কৃষকের আবাদি ফসল।
কারখানাটির চারপাশেই রয়েছে শত শত বিঘা আবাদি জমি। এই জমিতে ধান, রবিশস্য এবং শাকসবজি চাষাবাদ করে থাকেন স্থানীয় কৃষকেরা। কারখানার কালো কুচি কুচি ছায় উড়ে গিয়ে ফসলের উপর পড়ায় নষ্ট হচ্ছে কৃষকের বিভিন্ন ধরনের ফসল। আবার কারখানাটির পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা ভালো না থাকায় তা আশপাশের আবাদি জমিতে গিয়ে জলবদ্ধতা সৃষ্টি করছে।ফলে কৃষক দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
কারখানাটির কারণে সৃষ্ট সমস্যা স্থানীয় কৃষকরা মৌখিকভাবে প্রতিষ্ঠানটির দায়িত্বশীলদেরকে অবগত করলেও কার্যত সমাধানের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না।ফলে স্থানীয়দের মধ্যে বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। পিরোজপুর গ্রামের কৃষক ইসরাইল হোসেন জানান, কারখানার আশপাশের মাঠে ধানসহ শাকসবজি আবাদ রয়েছে।কারখানা থেকে আসা পানি এবং ছায়ের কারণে আমরা ঠিকমতো কৃষিকাজ করতে পারছি না। শুধু তাই না আমার ধানের জমিতে প্রতিটি ধান গাছে ছায় পড়ে কালো হয়ে গেছে। ছায় পড়ার কারণে আমরা ঠিকমত দীর্ঘ সময় মাঠে কাজ করতে পারছি না। শরীর এবং চোখে মুখে ছায় ঢুকে যাচ্ছে।
এ অবস্থায় ধান গাছ এবার গোখাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা যাবে কিনা তা নিয়ে আমরা বেশ দুশ্চিন্তায় রয়েছি। আমরা স্থানীয় কৃষক যারা আছি প্রত্যেকে দ্রুত এ অবস্থা সমাধান চাই। মজুমদার এগ্রো টেক ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক অসীম কুমার ঘোষ জানান, চাউল এর উপর থাকা আবরণ থেকে প্রক্রিয়াজাতের মাধ্যমে আমার কোম্পানিতে উৎপাদিত হয় রাইস ব্রান অয়েল। সম্প্রতি কারখানাটিতে উৎপাদন কার্যক্রম শুরু হয়েছে। রপ্তানিযোগ্য এ পণ্য উৎপাদনে কারখানার আশপাশে কারো ক্ষতি হয় এমন কোনো কাজ আমরা করব না।
ছাই ও পানি নিষ্কাশনের ব্যাপারে স্থানীয়রা এসে মৌখিকভাবে আমাদের জানিয়েছেন।আমরা অতি শীঘ্রই এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নিয়ে সমাধান করব। কালিগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাহবুব আলম রনি বলেন, আমি দেখেছি বারবাজারের পিরোজপুর এলাকায় একটি বড় কারখানা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ওই কারখানার অসধনীয় বর্জ্য আশপাশের কৃষি জমিতে চলে যাওয়ার ফলে চাষাবাদে ব্যাঘাত ঘটাসহ স্থানীয় কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে জানতে পেরেছি। আমি এ ব্যাপারটি আরও ভালোভাবে খোঁজখবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব। ঝিনাইদহ জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মুনতাছির রহমান বলেন,লাইসেন্স পাওয়ার পর কারখানার কার্যক্রম শুরুর নিয়ম।
উনারা সেটি করেছেন। দূষণ নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থাগ্রহণের শর্ত দিয়েই কারখানার লাইসেন্স ইস্যু করা হয়। কিন্তু তারা যদি শর্ত প্রতিপালন না করলে প্রদত্ত লাইসেন্স স্থগিত করা হবে।বিষয়টি আমার নজরে এসেছে। খুবই অল্প সময়ের মধ্যে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সম্পাদক ও প্রকাশক: কামরুজ্জামান জনি
Copyright © 2024 Muktirlorai | মুক্তির লড়াই. All rights reserved.