একসাথে বেড়ে ওঠা আর খুনসুটি করেই পার হয়ে যায় পুরো সময়। তবে সে সম্পর্ক আরো মধুর হয়ে উঠে যমজ ভাই-বোনদের ক্ষেত্রে। একই সময়ে পৃথিবীতে আলোর মুখ দেখা। আর জীবনের পথচলায় একই রকম দেখতে, একই ভাল লাগা আর খারাপ লাগা গুলো বেশ আকৃষ্ট করে সকলকে। একসাথে খাওয়া, খেলাধুলা ও পড়াশোনা করাসহ নিজেদের ভাল লাগার পাশাপাশি মুগ্ধতাও ছড়ায় আশপাশে। তেমনি একসাথে এক বিদ্যালয়ে ১০ জোড়া যমজ ভাই-বোন পড়াশোনা করছেন। একসাথে এক বিদ্যালয়ে এত যমজ ভাই-বোন পড়াশোনার বিষয়টি আলোড়ন ফেলেছে পুরো জেলাজুড়ে।

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার মথুরাপুর পাবলিক হাই স্কুলে এক সাথে বিভিন্ন শ্রেণীতে পড়াশোনা করেন ২০ জন যমজ ভাই-বোন। বিদ্যালয়টির ষষ্ঠ শ্রেণীতে পড়ে তাহসিন-তাসনিম ও সান-মুন, সপ্তম শ্রেণীতে পড়ে কার্তিক-গণেশ, হাবিব-হাফিজ ও সুমাইয়া-সাদিয়া, অষ্টম শ্রেণিতে শুভ-সৌরভ, নবম শ্রেণিতে হাসি-খুশি ও তাহবি-তাসবি এবং দশম শ্রেণীতে পড়াশোনা করেন আবিদ-অমিত ও রাহুল রাহা-চঞ্চল রাহা যমজ ভাই বোন।

যমজ ভাই-বোনদের চেহারায় মিল থাকায় তাদের নিশ্চিত করতে খানিকটা বিড়ম্বনা হলেও তাদের সাথে নিয়ে বেশ উপভোগ করেন বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও সহপাঠীরা। দুইজন একসাথে বেড়ে ওঠাকে বেশ গর্বের সাথে দেখছেন যমজ ভাই-বোনেরা।

ষষ্ঠ শ্রেণীর যমজ দুই ভাই সান ও মুন বলে, আমরা দুই ভাই একসাথে সব কাজ করি। খাওয়া, খেলাধুলা ও স্কুলে আসা যাওয়া একসাথে করি। আমাদের দুজনের পছন্দ মাংস ভাত। শুধু দুজনের দুই রঙ পছন্দ। একজনের লাল আরেকজনের নীল। আমরা একই পোশাক পরে বিভিন্ন জায়গায় যাই। শুধু পোশাক না আমাদের জুতা, চশমা, প্যান্ট সব একরকম। আমাদের খুব ভালো লাগে। তবে অনেকজনে আমরা কে কোনটা চিনতে পারেনা। আমরা এ বিষয়টাকে আরো বেশি উপভোগ করি। আমরা দুই ভাই অনেক আনন্দ করি একসাথে। বাড়িতে একসাথে পড়তে বসি। আমাদের বাবা-মা ও পরিবার সকলে খুশি আমাদের নিয়ে।

সপ্তম শ্রেণীর যমজ দুই বোন সুমাইয়া ও সাদিয়া বলে, আমাদের সবকাজগুলো আমরা একসাথে করি। আমাদের দুজনের প্রিয় রঙ হল নীল। আমরা একসাথে স্কুলে আসি। একসাথে ক্লাসে বসি। টিফিনের সময় আবার একসাথে খেলাধুলা করে থাকি। সব কাজগুলো আমরা একসাথে করি। ক্লাসের সময় একজনকে বকা দিলে আমাদের আরেকজনকে খুব খারাপ লাগে। আবার কেউ যদি আমরা ভালো কিছু করি তাহলে মন থেকে ভালো লাগা কাজ করে। স্কুলের শিক্ষক ও সহপাঠীরা আমাদের চিনতে পারেনা। তখন একসাথে দুজনকে ডাকে তখন আমাদের খুব ভালো লাগে।

নবম শ্রেণির যমজ দুই বোন হাসি ও খুশি বলে, আমাদের একটা বড় সুবিধা হল কেউ কোন ভুল করলে একজন আরেক জনকে চাপিয়ে দেওয়া যায়। পরে আবার আমরা একসাথে মিলে যাই। আর পরিবারের কাছে, আত্নীয় স্বজনদের কাছে ও শিক্ষকদের কাছেও আমরা বেশ আদর পাই। আমরা আমাদের পুরো সময়টা একসাথে কাটাই। আমরা যমজ হয়ে অনেক খুশি। পড়াশোনা করার সময় আমরা একজন আরেকজনের সহযোগিতা নেই। সবমিলিয়ে আমরা একজন আরেকজনের পূর্ণ পরিপূরক। একজন আরেকজন ছাড়া চলতে পারিনা। রাগারাগি হলে আবার কিছুক্ষণের মধ্যে মিলে যাই। আমরা যমজ হয়ে অনেক খুশি।

বিদ্যালয়টির সহকারী শিক্ষিকা আয়েশা সিদ্দিকা বলেন, যমজ বিষয়টি আমি বেশ উপভোগ করি। তারা যখন পাশাপাশি বসে তখন তাদের দেখতেও ভালো লাগে। তাদের পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ অনেক বেশি। তারা যাতে ভালো কিছু করে আমরা সবসময় তাদের উৎসাহিত করি।

বিদ্যালয়টির সহকারী শিক্ষক মামুনুর রশিদ বলেন, আমাদের প্রত্যেকটি শ্রেণীতে যমজ শিক্ষার্থী আছে। ক্লাস নেওয়ার সময় একজন পড়া দিতে পারলে অপরজন খুশি হয়। আবার একজন না পারলে অপরজন মন খারাপ করে। তাদেরকে বুঝার কোন উপায় নেই যে কে কোনটা। সে কারণে একজনের নাম আরেকজনকে বলতে হয়। তবে তারা বেশ মেধাবী। আমরা আশা রাখছি তারা তাদের কর্মজীবনে ভালো কিছু করবেন।

মথুরাপুর পাবলিক হাই স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ আলমগীর বলেন, আমাদের প্রতিষ্ঠানে ২০ জন যমজ ভাই-বোন পড়াশোনা করেন। তাদের নাম গুলো প্রায় একই রকম ও চেহারার মিলও দেখা যায়। সে কারণে কোনটা কে সেটা বুঝতে বিড়ম্বনায় পরতে হয়। তবুও আমরা যমজ বিষয়টি বেশ উপভোগ করছি। এ ছাড়াও আমি লক্ষ করেছি তাদের মেধাও প্রায় সমান হয়। একজনের শ্রেণীর রোল নাম্বার দুই হলে অপরজনের তিন হয়। তাদের আচার-আচরণ, পোশাক পরিচ্ছদ একই রকম। তারা একসাথে থাকতে বেশ স্বাচ্ছন্দ বোধ করে। আর আমরাও বিষয়টি উপভোগ করি।