মোঃ ইলিয়াস আলী, ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধিঃ ঠাকুরগাঁও আধুনিক ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল মর্গে লাশ সংরক্ষনের জন্য একটি আধুনিক ফ্রিজার সরবরাহ করেছে কেন্দ্রীয় ঔষধাগার। মৃতদেহ রক্ষণাবেক্ষণে ফ্রিজারটির বরাদ্দ ছিল স্বাস্থ্যবিভাগের খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি পদক্ষেপ। কিন্তু মর্গের কক্ষের দরজা সংকীর্ন হওয়ায় ৪ মাসেও সেটি স্থাপন করা সম্ভব হয়নি। এতে প্রায় ২৫ লাখ টাকা মূল্যের ফ্রিজারটির জায়গা হয়েছে হাসপাতালের পুরাতন ভবনের মেঝেতে। লাশ সংরক্ষণের জন্য সংকট কাটানো তো দূরের কথা এখন সেই ফ্রিজার স্থাপন করাটাই যেন বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে পড়েছে। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে নতুন ভবন নির্মাণ হলে ফ্রিজারটি স্থাপন করা হবে।
১৯৭৮ সালে প্রতিষ্ঠিত এ হাসপাতালের মর্গে লাশ সংরক্ষণের কোনো ব্যবস্থা ছিলোনা। দীর্ঘ ৪৪ বছর পর হাসপাতালটির মর্গের জন্য গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে একটি আধুনিক ফ্রিজার বরাদ্দ দিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ৪ ড্রয়ার বিশিষ্ট এই ফ্রিজারটি বুঝে পাওয়ার চার মাস হয়ে গেলেও এখনো স্থাপন করতে পারেনি। এভাবে দীর্ঘদিন পড়ে থাকলে ফ্রিজারটির যান্ত্রিক ত্রুটি বা বিকল হওয়ার সম্ভাবনাও আছে। এমনকি প্রতিষ্ঠার পর থেকে সংস্কার না হওয়ায় অনুপযোগী হয়ে পড়েছে মর্গের ভবন ও কক্ষগুলো।
হাসপাতালের চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. রাকিবুল আলম বলেন, মর্গটি অনেক পুরাতন ও কক্ষের দরজাটি সঙ্কুচিত হওয়ায় সাত ফিট চওড়া ফ্রিজটি স্থাপন সম্ভব হচ্ছে না। মর্গের ভবন পুরাতন ও জরাজীর্ণ থাকায় নতুন বিল্ডিং নির্মানের জন্য গণপূর্ত বিভাগকে চিঠি দেয়া হয়েছে। নতুন ভবন নির্মানের পর এটি স্থাপন করা সম্ভব হবে।
মলিন চন্দ্র নামে এক ব্যক্তি বলেন, জেলার ৫টি উপজেলার একটি মাত্র মর্গ তাও এটার বেহাল দশা। এখানে মরদেহ সংরক্ষনের ব্যবস্থ থাকলে মৃতদেহ পচন ধরার আশঙ্কা থাকে না।যদি সংরক্ষণের ব্যবস্থা থাকতো তবে, ধর্মীয়ভাবে লাশটির কবর বা সৎকার সময় মত করা যেতো।
সম্প্রতি হাসপাতাল থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে শহরের আর্টগ্যালারি এলাকায় মর্গটিতে গিয়ে দেখা যায়, ময়নাতদেন্তর জন্য ভবনের সামনে ভ্যানে রাখা হয়েছে একটি মরদেহ। তার একদিন আগে মৃত্যু বরণ করেন ওই ব্যক্তি।
মৃত ব্যক্তির ছেলে কলিন চন্দ্র রায় জানান, একদিন আগে বিকেলে তার বাবা বিষপানে আত্নহত্যা করেন। মরদেহটি ময়নাতন্তের জন্য পুলিশ মর্গে পাঠালেও এখানে মরদেহ সংরক্ষনের কোন ব্যবস্থা নাই। ফলে দুদিন ধরে ভ্যানে রাখা হয় তাঁর বাবার লাশ।
মর্গের কর্মরত ডোম সুকুমার মহন্ত বলেন, আধুনিক যন্ত্রপাতি না থাকায় কামার থেকে বানিয়ে হাতুড়ি, বাটাল ও করাত দিয়ে মরদেহগুলোর কাটাছেঁড়া করা হয়। জরাজীর্ণ ছোট কক্ষে ময়নাতদন্তের কাজ গুলো করছি ৩৭ বছর ধরে। লাশকাটা ঘরের পেছনের দিকে রয়েছে নদী সেখান থেকে পানি এনে পরিস্কার করতে হয় ময়লা ও রক্ত। সব সরঞ্জামের সংকট রয়েছে দীর্ঘদিন। অন্যদিকে নিরাপত্তাপ্রহরীর পদেও কেউ নেই। বেশ কয়েকবার রাতে দুর্বৃত্তরা নতুন যন্ত্রাংশ চুরি করে নিয়ে যায়। নিয়ম অনুযায়ী নারী ডোম থাকার কথা থাকলেও এখানে তা নেই।
ঠাকুরগাঁও সিভিল সার্জন ডা.নুর নেওয়াজ আহমেদ বলেন, মর্গটি আধুনিকায়নের জন্য আমরা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের চিঠি দিয়েছি। মর্গের নিরাপত্তা ও লোকবলের বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে চিঠি পাঠানো হয়েছে। নতুন ভবন পেলে ফ্রিজারটি স্থাপন করা হবে।
সম্পাদক ও প্রকাশক: কামরুজ্জামান জনি
Copyright © 2025 Muktirlorai | মুক্তির লড়াই. All rights reserved.