মোঃ আবদুল আউয়াল সরকার, কুমিল্লা
বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা মতে, একজন রোগীর অপারেশনের জন্য একজন বিশেষজ্ঞ সার্জন, একজন এ্যানেসথেসিস্ট এবং একজন এমবিবিএস ডাক্তার আবশ্যক। তাছাড়া কোনো ভাবেই অস্ত্রোপচার করতে পারবে না সার্জন।
কিন্তু যদি এমন হয়, একজন গাইনী সার্জন যদি নিজেই অ্যানেসথেসিয়া করেন! তাহলে বিষটি কতোটা ভয়ঙ্কর?
এমনই এক অভিযোগ ওঠেছে কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার দেবিদ্বার টাওয়ার হসপিটাল এর গাইনী সার্জন এন্ড সনোলজিস্ট ডাক্তার নীলা পারভীন এর বিরুদ্ধে। যেখানে অ্যানেসথেসিস্ট ছাড়া অন্য কারও রোগীকে অজ্ঞান করার অনুমতি নেই, সেখানে খোদ ওই দায়িত্বই পালন করছেন সার্জন নীলা পারভীন নিজেই। অভিযুক্ত ওই গাইনী সার্জন ও সনোলজিস্ট ডা. নীলা পারভীন গত ১০ মার্চ ২০২৪ খ্রিঃ বিকেলে দেবিদ্বার টাওয়ার হসপিটালে সিজারের সময় নিজেই অ্যানেসথেসিয়া করেন।
জানা গেছে, সম্প্রতি রাজধানীতে সুন্নতে খতনা করাতে গিয়ে দুই শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় সারা দেশে স্বাস্থ্য বিভাগের উপর টনক নড়েছে। পরে গত ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪খ্রিঃ স্বাস্থ্য অধিদপ্তর মোট ১০টি নির্দেশনা বা শর্ত জারি করে একটি অফিস আদেশ দেয়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হাসপাতাল ও ক্লিনিক শাখার পরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) আবু হোসেন মো. মঈনুল আহসান সেই অফিস আদেশ সই করেন। ওই অফিস আদেশে বলা হয়, কোনো অবস্থাতেই নিবন্ধিত হাসপাতাল ও ক্লিনিক ছাড়া চেম্বারে অথবা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে অ্যানেসথেসিয়া দেওয়া যাবে না। বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি) স্বীকৃত বিশেষজ্ঞ অবেদনবিদ (অ্যানেসথেটিস্ট) ছাড়া যেকোনো ধরনের অস্ত্রোপচার করা যাবে না। অফিস আদেশে আরও বলা হয়, ‘বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার পরিচালনার ক্ষেত্রে জারিকৃত ১০টি শর্তাবলি আবশ্যিকভাবে প্রতিপালনের জন্য নির্দেশ প্রদান করা হলো।’
এদিকে দেবিদ্বার টাওয়ার হসপিটালে আলিফা আক্তার নামের এক রোগীকে অ্যানেসথেসিস্ট ছাড়াই নিজেই অ্যানেসথেসিয়া দিয়ে অজ্ঞান করে সিজার করেছেন এমন অভিযোগের ভিত্তিতে টাওয়ার হসপিটালে গিয়ে উপস্থিত হন দেবিদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোঃ আলী এহসান। স্বাস্থ্য কর্মকর্তা সিজারিয়ান রোগীর সাথে কথা বলে জানতে পারেন, তাকে অজ্ঞান করার জন্য সেখানে সার্জন নীলা পারভীন ছাড়া অন্য কোনো ডাক্তার ছিলো না। সার্জন ডা. নীলা পারভীন নিজেই তাকে অ্যানেসথেসিয়া করে অজ্ঞান করেছেন। তবে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মো. আলী এহসানের প্রশ্নের জবাবে ডা. নীলা পারভীন নিজে অ্যানেসথেসিয়া করার বিষয়টি অস্বীকার করেন।
গাইনী সার্জন ও সনোলজিস্ট ডা. নীলা পারভীন এর ব্যাপারে খবর নিয়ে জানা গেছে, তিনি দেবিদ্বার উপজেলার অন্তত ১০-১৫টি হসপিটাল ও ক্লিনিকে নিয়মিত সার্জারি করেন। সার্জারির সময় অ্যানেসথেয়িা দিয়ে বিভিন্ন ধরণের ঝুঁকিপূর্ণ অপারেশন করছেন খোদ নিজেই।
অ্যানেসথেসিস্ট ছাড়া রোগীকে অজ্ঞান করে এভাবে অপারেশন করার ফলে রোগীদের বড় ধরনের দূর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে ধারনা করেছেন বিভিন্ন সার্জন ও সিনিয়র ডাক্তারগন।
ঘটনার সত্যতা জানতে হসপিটালের খাতায় কলমে অ্যানেসথেসিস্ট হিসেবে নাম থাকা ডা. সাহিদ হাসান সৌরভ এর মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হয়। তিনি জানান, প্রায় সময় ডা. নীলা পারভীন অ্যানেসথেসিস্ট ছাড়াই নিজেই অজ্ঞান করে ও.টি করে থাকেন। আমি এর আগেও হসপিটাল কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবহিত করেছি। আর গতকাল বিকেল সাড়ে ৪টা নাগাদ আমি হসপিটাল থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা করি। ওই সময় আমার নাম ব্যবহার করে সার্জন ডা. নীলা পারভীন সিজারটি করেছেন।
অভিযোগের বিষয়ে জানার জন্য ডা. নীলা পারভীন এর সাথে মুঠোফোন এ যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, আমি কোনো সার্জারির সময় নিজে অ্যানেসথেসিয়া করিনি। রোগীর অ্যানেসথেসিয়া করেছেন ডা. সৌরভ। ডা. সৌরভ এর বরাত দিয়ে ঘটনার সময় হসপিটালে ছিলেন না বিষয়টি জানানো হলে নীলা পারভীন বলেন, ডা. সৌরভ মিথ্যে কথা বলছে। আমার বিরুদ্ধে একটি কু-চক্র মহল ষড়যন্ত্র করছে বলেও জানান তিনি।
এ বিষয়ে দেবিদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোঃ আলী এহসান বলেন, গোপন তথ্যের ভিত্তিত্বে জানতে পারি, দেবিদ্বার টাওয়ার হসপিটালে অ্যানেসথেসিস্ট ছাড়াই একজন রোগীকে সিজার করা হয়েছে। পরে সাথে সাথেই হসপিটালে গিয়ে রোগী আলিফা আক্তারের সাথে কথা বলে জানতে পারি সেখানে কর্তব্যরত সার্জন ডা. নীলা পারভীন তাকে অ্যানেসথেসিয়া করেছেন। যদিও ডা. নীলা পারভীন বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেছেন অ্যানেসথেসিস্ট হিসেবে তার সাথে ডা. সাহিদ হাসান সৌরভ ছিলেন। তবে রোগীর ভাষ্য, ডা. নীলা পারভীন নিজেই অ্যানেসথেসিয়া বা অজ্ঞান করার ইনজেকশন পুষ করেছেন। আমি তাৎক্ষনিক ভাবে বিষয়টি সিভিল সার্জন মহোদয়কে জানিয়েছি। এবং পরবর্তী কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি।
ঘটনার বিষয়ে বক্তব্য নিতে কুমিল্লা জেলা সিভিল সার্জন ডা. নাছিমা আকতার এর মুঠোফোন এ একাধিকবার যোগাযোগ করেও কোনো ধরনের প্রতি-উত্তর পাওয়া যায়নি।
সম্পাদক ও প্রকাশক: কামরুজ্জামান জনি
Copyright © 2024 Muktirlorai | মুক্তির লড়াই. All rights reserved.