স্টাফ রিপোর্টার: কুমিল্লার বরুড়া ফেয়ার হসপিটালের সাবেক নির্বাহী পরিচালক ডাক্তার ইকবালের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের সত্যতা পেয়েছে পুলিশ।
অভিযোগ উঠেছে নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে প্রায় এক দশক ওই বেসরকারি হাসপাতালটির নির্বাহী পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেছেন ইকবাল।
এরই মধ্যে বরুড়া সদরের মৌলভীবাজার এলাকায় অবস্থিত ওই প্রতিষ্ঠানটির অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে এই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় আদালতে মামলা হলে তদন্তে ঘটনার সত্যতা পেয়েছে পুলিশ। বেসরকারি ওই হাসপাতালের নির্বাহী পরিচালকের পদে থাকাকালীন অর্থ আত্মসাতের ঘটনার সত্যতার ভিত্তিতে আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে পুলিশ।
ডাক্তার মোহাম্মদ ইকবাল হোসেনের বাড়ি কুমিল্লার বরুড়া উপজেলার হেরপেটি গ্রামে। বর্তমানে তিনি কর্মরত রয়েছেন নোয়াখালীর আব্দুল মালেক উকিল মেডিক্যাল কলেজে। তবে পেশায় সরকারি চাকরিজীবী হলেও ডা. ইকবালের অনিয়মের যেন শেষ নেই। বলা চলে সরকারি চাকরিবিধির কোনো তোয়াক্কাই করেন না তিনি।
আগামী ১৮ জুন ডা. ইকবালকে আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
এদিকে নোয়াখালীর আব্দুল মালেক উকিল মেডিক্যাল কলেজে সঠিকভাবে ডা. ইকবালের দায়িত্ব পালন করা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। কারণ তিনি প্রতিদিন বেলা ২টা-৩টা থেকে কুমিল্লা নগরীর টমছমব্রিজ এলাকার একটি বেসরকারি হসপিটালে নিয়মিত প্রাইভেট চেম্বারে রোগী দেখেন। কুমিল্লা নগরী থেকে নোয়াখালীর দূরত্ব প্রায় ৭০ কিলোমিটার।
যার কারণে অভিযোগ রয়েছে তিনি ঠিকভাবে সরকারি দায়িত্ব পালন করছেন না।
ডা. ইকবালের বিভিন্ন অনিয়ম নিয়ে দুদক, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, জেলা পুলিশ সুপারসহ বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করা হয়েছে।
বরুড়ার ফেয়ার হসপিটালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সালেহ উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, ডা. ইকবাল তাঁর মেয়ে মেহেরীন ইকবাল তিতলীর নামে একটি শেয়ার ক্রয় করে নিজের ক্ষমতা দেখিয়ে আমাদের প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী পরিচালকের দায়িত্ব নেন। তিনি সরকারি চাকরিবিধি লঙ্ঘন করে দীর্ঘ প্রায় এক দশক এই পদে ছিলেন। এই সময়ে তিনি প্রতিমাসে হাসপাতাল থেকে বেতনও উত্তোলন করেছেন।
সালেহ উদ্দিন ভূঁইয়া আরো বলেন, দায়িত্বে থাকাকালীন বিভিন্ন তারিখ ও সময়ে ডা. ইকবাল ক্ষমতা দেখিয়ে আমাদের হাসপাতালের ২৯ লাখ ৮১ হাজার ৬৩১ টাকা আত্মসাত করেছেন। বিষয়টি হাসপাতালের অন্যান্য পরিচালকের দৃষ্টিগোচর হলে, ওই টাকা ফেরতের জন্য তাকে বলা হলে তিনি সময়ক্ষেণ করেন। পরে হসপিটালের পরিচালক (অর্থ) আবদুল হাই ফরহাদ বাদী হয়ে আদালতে তার বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের মামলা দায়ের করেন। এরই আদালতের নির্দেশে বরুড়ার থানার এক কর্মকর্তা মামলাটি তদন্ত করে টাকা আত্মসাতের সত্যতা পেয়ে আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন। আগামী ১৮ জুন তাকে হাজির হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
ফেয়ার হসপিটালের পরিচালক (প্রশাসন) আবদুল আউয়াল বলেন, এরই মধ্যে আমাদের ৯৫ জন অংশীদারের হসপিটালটি দখল করতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন ডা. ইকবাল। তিনি কয়েক দফা হাসপাতালে সন্ত্রাসী হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও লুটপাট করেছেন। এ সব ঘটনায় তার বিরুদ্ধে আদালতে দ্রুত বিচার আইনে মামলাসহ থানায় বেশ কয়েকটি মামলা ও অভিযোগ হয়েছে। এ ছাড়া ২০২০ সালে তিনি হাসপাতালে থাকা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ছবি ভাঙচুর করেছেন। প্রতিটি ঘটনায় তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ হলেও ডা. ইকবালের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। উল্টো তিনি প্রতিনিয়ত আমাদেরকে বিভিন্ন ধরণের হুমকি দিয়ে যাচ্ছেন।
সালেহ উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, ডা. ইকবাল হোসেন চাকরির শুরুর দিক থেকেই বেপরোয়া প্রকৃতির মানুষ ছিলেন। প্রায় দশ বছর আগে বরুড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত থাকা অবস্থায় জুয়া খেলার সময় গ্রেপ্তার হন তিনি। পরে আদালতে জমিরানা দিয়ে মুক্তি পান। ২০২০ সালে নাফসী জাহান নামে এক তরুণীকে ভুল চিকিৎসা দেওয়ার ঘটনায় তার বিরুদ্ধে মামলা হয়। ২০১২ সালে আমড়াতলী গ্রামের এক রোগীকে ভুল চিকিৎসা দিয়ে জরিমানা দেন তিনি। এ ছাড়া আরো অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। সরকারি চাকরির নিয়মনীতির কোনো তোয়াক্কা না করে ইকবাল বিপুল পরিমাণ সম্পদের মালিক বনে গেছেন। তার বিরুদ্ধে দুদকসহ বিভিন্ন দপ্তরে একাধিক অভিযোগ করা হয়েছে।
এদিকে ফেয়ার হসপিটালের বর্তমান কমিটি থাকলেও ডাক্তার ইকবাল জোরকরে নতুন কমিটি করার পায়তারা করছেন। এ ঘটনায় উভয় পক্ষ পৃথকভাবে মামলা করেছেন বলে জানা গেছে।
তবে এসব অভিযোগকে সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট বলে দাবি করেছেন ডা. মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন। তিনি বলেন, বরুড়ার মানুষকে উন্নত সেবা দিতে আমি উদ্যোগ নিয়ে ফেয়ার হাসপাতালটি গড়ে তুলেছি। এজন্য চাকরির বিধি লঙ্ঘনকে আমি বড় কোনো অপরাধ মনে করছি না। কারণ আমি বিধি লঙ্ঘন করেছি আমার এলাকার মানুষের জন্য। আমার জন্য হাজার হাজার মানুষ উপকৃত হয়েছে, উন্নত সেবা পেয়েছেন।
তিনি আরো বলেন, অন্য কেউ না- যারা আমার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ আর মামলা করেছেন, তারাই বর্তমানে হসপিটালটি দখল করে খাচ্ছেন। আমি টাকা-পয়সা কম আয় করি না। যার কারণে আমার কারো অর্থ অত্মসাতের প্রয়োজন নেই।
সম্পাদক ও প্রকাশক: কামরুজ্জামান জনি
Copyright © 2025 Muktirlorai | মুক্তির লড়াই. All rights reserved.