আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মানব জাতিকে আশরাফুল মাখলুকাত হিসেবে সৃষ্টি করেছেন এবং এ সৃষ্টির উদ্দেশ্য ব্যক্ত করে বলেন: “আমি জীন ও ইনসানকে একমাত্র আমার ইবাদতের জন্য সৃষ্টি করেছি” (আযযারিয়াত: ৫৬)। আর ইবাদতের অপরিহার্য একটি বিষয় হলো তাকওয়া অর্জন। আল্লাহ তাআলা বলেন:“হে মানব সম্প্রদায়! তোমরা ঐ আল্লাহকে ভয় করো, যিনি তোমাদের এক আত্মা হতে সৃষ্টি করেছেন”(সূরা নিসা: ০১)। আল্লাহ তা’আলা তাঁর এক মহা নেয়ামত হিসেবে রহমত, বরকত, মাগফিরাতে সিক্ত হয়ে জাহান্নামের শাস্তি থেকে মুক্তি লাভের মাস রমাদানুল মোবারক তাঁর বান্দাদের দান করেছেন। তাই সকল মুমিনের উচিত এ মহিমান্বিত মাসের প্রতিটি মুহুর্তকে যথাযথ গুরুত্বের সাথে কাজে লাগানোর মাধ্যমে পরম করুণাময়ের সন্তুষ্টি অর্জনে সচেষ্ট হওয়া। সিয়াম সাধনার মূল লক্ষ্যই হলো তাকওয়া অর্জন। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন: “হে বিশ্বাসীগণ! তোমাদের ওপর রোযা ফরজ করা হয়েছে, যেমনি ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর, আশা করা যায় এতে তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারবে”(সূরা আল-বাক্বারাহ : ১৮৩)। উক্ত আয়াতে আমরা আল্লাহ তা’আলার তিনটি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা পাই। যথা: (১) রমাদান মাসের সিয়াম সাধনা সকল মুসলিমের জন্য আবশ্যক তথা ফরজ ইবাদত, (২) এ সিয়ামের বিধান শুধু আমাদের ওপরই ফরজ করা হয়নি; বরং পূর্বের বহু জাতি-গোষ্ঠীর ওপরও ফরজ ছিল এবং (৩) সিয়াম সাধনার মূল লক্ষ্যই হলো তাকওয়ার গুণাবলী অর্জন করা। ইসলামে রাজা-প্রজা, ধনী-গরীব, সাদা-কালো, ভাষা, জাতি, গোত্র ও বংশের কারণে কোনো ভেদাভেদ নেই; বরং সকল মুসলিমের মাঝে সাম্যতা আনয়ন করেছে। তবে তাকওয়ার গুণাবলী একের ওপর অন্যের শ্রেষ্ঠত্ব বিধান করে, মানুষকে সবচেয়ে বেশি সম্মানিত করে এবং মর্যাদার আসনে সমাসীন করে। আল্লাহ তা’আলার বাণী: “তোমাদের মধ্যে আল্লাহর নিকট সেই ব্যক্তি অধিক মর্যাদা সম্পন্ন, যে বেশি তাকওয়াবান’ (সূরা আল-হুজুরাত: ১৩)।
ক. তাকওয়ার পরিচয়:
আভিধানিকভাবে: আরবি শব্দ, এর মূল অর্থ-ঢাল, সংযম, রক্ষা, বেঁচে থাকা, সাবধানতা অবলম্বন, ধার্মিকতা, আল্লাহর ভয়, পরহেজগারি, তাকওয়া, ইত্যাদি। কুরআনুল কারিমে তাকওয়া নিম্নরূপ অর্থে পাওয়া যায়-
১. ভয়-ভীতি। আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন: ‘‘আমি যা অবতীর্ণ করেছি তোমরা তাতে ঈমান আন। ইহা তোমাদের নিকট যা আছে তা প্রত্যায়নকারী। আর তোমরাই এর প্রথম প্রত্যাখ্যানকারী হয়ো না এবং আমার আয়াতের বিনিময়ে তুচ্ছ মূল্য গ্রহণ করো না। তোমরা শুধু আমাকেই ভয় কর’ (সূরা বাক্বারাহ: ৪১)।
২. আনুগত্য, ইবাদত। কুরআনুল কারিমের ভাষায়: ‘‘হে মু’মিনগণ! তোমরা আল্লাহ্-কে যথার্থভাবে ভয় কর এবং তোমরা আত্মসমর্পণকারী না হয়ে কোন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করো না’ (সূরা আল- ইমরান: ১০২)।
৩. অন্তরকে পাপকাজ থেকে মুক্ত রাখা। কুরআনুল কারিমে ইরশাদ হচ্ছে: ‘‘যারা আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে, আল্লাহ্-কে ভয় করে ও তাঁর অবাধ্যতা হতে সাবধান থাকে তারাই সফলকাম’ (সূরা আন-নূর: ৫২)।
পরিভাষায়:
১. আলী -রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু- তাকওয়ার পরিচয়ে বলেন: তাকওয়া হলো- ‘আল্লাহ তা’আলা-কে ভয় করা, কুরআন-সুন্নাহ অনুযায়ী আমল করা, অল্পে তুষ্ট থাকা এবং বিচার দিবসের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করা’ (লাওয়ামিয়ুদ দুরার: ১/১১০)
২. আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস -রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুমা- মুত্তাকীর পরিচয় দিতে গিয়ে বলেন:
‘মুত্তাকী হলো তারা, যারা ভালো কাজ পরিত্যাগ করারর ক্ষেত্রে আল্লাহর আযাবের বিষয়ে সতর্ক থাকে, আর তিনি যে বিধি-বিধান দিয়েছেন তা মেনে নেয়ার ক্ষেত্রে তাঁর রহমতের আশা করে’।
৩. আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ -রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু- বলেন: তাকওয়া হলো ‘আল্লাহর আনুগত্য করা, অবাধ্য না হওয়া, তাঁকে স্মরণ করা, ভুলে না যাওয়া, তাঁর কৃতজ্ঞতা পোষণ করা এবং অকৃতজ্ঞ না হওয়া ’।
৪. তাকওয়ার ব্যাখ্যায় ‘ওমর -রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু- উবাই বিন কাব -রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু- কে জিজ্ঞেস করেন, তাকওয়া কাকে বলে? তখন তিনি ওমর -রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু-কে বলেন, আপনি কী কখনো ঝোপ-ঝাড়ের ভিতর দিয়ে পথ চলেন নি? তিনি বলেন হ্যাঁ, চলেছি। উবাই -রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু- বলেন, তখন আপনি কী করেছেন? তিনি বলেন, তখন আমি জড়সড় হয়ে পথ চলেছি, যাতে কাঁটা শরীরে বিদ্ধ না হয়। তখন তিনি বলেন, সেটাই তাকওয়া। বস্তুত সাওয়াবের আশায় ও শাস্তির ভয়ে আল্লাহর আদেশ-নিষেধ মেনে চলার বিষয়ে সদা সচেতন থাকা এবং পাপাচার হতে বেঁচে থাকাই তাকওয়া’ (তাফসীরে ইবনে কাসীর: ১/১৬৪)। অতএব, আমরা বলতে পারি, ইসলামের আদিষ্ট বিষয়গুলোর প্রতিপালন, নিষিদ্ধ বিষয়গুলোর বর্জন ও আল্লাহ তা’আলার নিকট জবাবদিহিতার অনুভূতিই তাকওয়া। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কুরআনুল মাজীদে ঘোষণা করেন: ‘‘তোমাদের রাসূল যা কিছু নিয়ে এসেছেন, সেগুলো আঁকড়ে ধরো আর তিনি যেসব বিষয়ে নিষেধ করেছেন, সেগুলো থেকে বিরত থাকো” (সূরা আল-হাশর: ৭)।
খ. মুত্তাকীর বৈশিষ্ট্য:
মুত্তাকীর বেশ কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে। তন্মধ্যে-
১. মুত্তাকী অল্লাহ তা’আলা ও তাঁর রাসূল -সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- অদৃশ্যের বিষয়ে যে খবর দিয়েছেন কোনো সন্দেহ ব্যতীত তার প্রতি দৃঢ় ঈমান আনয়ন করে। কুরআনুল কারিমের ভাষায়: ‘‘ইহা সেই কিতাব; যাতে কোন সন্দেহ নেই, মুত্তাকীদের জন্য ইহা পথ-নির্দেশ, যারা অদৃশ্যে ঈমান আনে’’ (সূরা আল বাক্বারাহ: ২-৩)।
২. সালাত প্রতিষ্ঠা করে। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ইরশাদ করেন: ‘‘যারা সালাত কায়েম করে’ (সূরা আল বাক্বারাহ: ৩)।
৩. আল্লাহর পথে দান-সদাকাহ করে। অন্যত্র ইরশাদ হচ্ছে: ‘‘তাদের যে জীবনোপকরণ দান করেছি তা হতে ব্যয় করে’ (সূরা আল বাক্বারাহ: ৩)।
৪. কুরআনুল কারিমসহ সকল আসমানী কিতাব ও নবি-রাসূলগণের প্রতি ঈমান আনয়ন করে। ইরশাদ হচ্ছে: ‘‘এবং আপনার প্রতি যা নাযিল করা হয়েছে ও আপনার পূর্বে যা নাযিল হয়েছে তাতে যারা ঈমান আনে’ (সূরা আল বাক্বারাহ: ৪)।
৫. পরকালের প্রতি দৃঢ় ঈমান আনয়ন করে। অন্যত্র ইরশাদ হচ্ছে: ‘‘এবং আখিরাতে যারা নিশ্চিত বিশ্বাসী’ (সূরা আল বাক্বারাহ: ৪)।
৬. মহান রবের হেদায়াতের পথে পরিচালিত হয়। ‘‘তারাই তাদের প্রতিপালকের নির্দেশিত পথে রয়েছে এবং তারাই সফলকাম’ (সূরা আল বাক্বারাহ: ৫)।
৭. কৃত অপরাধের জন্য আল্লাহ তা’আলার নিকট ক্ষমা ও মুক্তি প্রার্থনা করে।
৮. ধৈর্য ধারন করে।
৯. কথা ও কাজে সত্যাবলম্বন করে।
১০. এক আল্লাহর ইবাদতে আত্মনিয়োগ করে। যেমন- আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন: ‘‘বলুন! আমি কি তোমাদের এ সব বস্তু হতে উৎকৃষ্টতর কোন কিছুর সংবাদ দিব? যারা তাকওয়া অবলম্বন করে চলে তাদের জন্য তাদের প্রতিপালকের নিকট জান্নাতসমূহ রয়েছে, যার পাদদেশে নদী প্রবাহিত। আর সেখানে তারা স্থায়ী হবে, তাদের জন্য পবিত্র সঙ্গিনীগণ এবং আল্লাহ্র নিকট হতে সন্তুষ্টি রয়েছে। আল্লাহ্ বান্দাদের সম্পর্কে সম্যক দ্রষ্টা। যারা বলে, হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা ঈমান এনেছি; সুতরাং আপনি আমাদের পাপ ক্ষমা করুন এবং আমাদের-কে জাহান্নামের আযাব হতে রক্ষা করুন; তারা ধৈর্যশীল, সত্যবাদী, অনুগত, ব্যয়কারী এবং শেষ রাত্রে ক্ষমাপ্রার্থী’ (সূরা আল ইমরান: ১৫-১৭)।
১১. আল্লাহ তা’আলার ভয় সদা হৃদয়ে ধারন করে।
১২. সদাচরন করে। ‘‘সেদিন নিশ্চয়ই মুত্তাকীরা থাকবে প্রস্রবণ বিশিষ্ট জান্নাতে, উপভোগ করবে তা, যা তাদের প্রতিপালক তাদের-কে দিবেন; কারণ পার্থিব জীবনে তারা ছিল সৎকর্মপরায়ণ’(সূরা আয-যারিয়াত: ১৫-১৬)।
১৩. ক্ষমার গুণাবলীসম্পন্ন হয়।
১৪. সালাত, কুরআন তিলাওয়াত, যিকির, দুরুদ ও অন্যান্য ইবাদতের মাধ্যমে রাত্রি জাগরন করে। আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন: ‘‘তারা রাতের সামান্য অংশই অতিবাহিত করত নিদ্রায়’ (সূরা আয-যারিয়াত: ১৭)
১৫. রাতের শেষ প্রহরে আল্লাহ তা’আলার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করে। কুরআনুল কারিমে র ভাষায়:‘‘রাতের শেষ প্রহরে তারা ক্ষমা প্রার্থনা করত (সূরা আয-যারিয়াত: ১৮)
১৬. ইখলাসের সাথে আল্লাহ তা’আলার আদিষ্ট বিষয়গুলোর পরিপালন ও নিষিদ্ধ বিষয়গুলো বর্জন করে চলে, ইত্যাদি।
গ. তাকওয়ার গুরুত্ব: মানবজীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে হালাল-হারাম, ন্যায়-অন্যায়, সত্য-মিথ্যা আর উচিত-অনুচিত ইত্যাদি বিষয়ে বস্তুনিষ্ঠ হতে পারার মধ্যে তাকওয়ার গুণাবলী নিহিত। কুরআনুল কারিমের একাধিক জায়গায় আল্লাহ তা’আলা এ বিষয়ে নির্দেশনা প্রদান করেন। যেমন-তিনি বলেন: “হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো, ঠিক যতটুকু তাঁকে ভয় করা উচিত আর তোমরা পরিপূর্ণ মুসলিম না হয়ে মৃত্যু বরণ করো না” (সূরা আল-ইমরান: ১০২)। অন্যত্র বলেন: “হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা যদি আল্লাহ-কে ভয় করো (তাকওয়ার গুণাবলী অর্জন করতে পারো) তাহলে তিনি তোমাদের জন্য (অন্যদের থেকে) পার্থক্যকারী কিছু স্বতন্ত্র মর্যাদা দান করবেন, তোমাদের পাপ মোচন করবেন এবং কৃত অপরাধ ক্ষমা করে দেবেন” (আল-আনফাল: ২৯)। অনুরূপভাবে তিনি বলেন: “সে সব জনপদবাসী যদি বিশ্বাস স্থাপন ও তাকওয়ার গুণাবলী অর্জন করতো তাহলে নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলের বরকতের সব দুয়ার আমি তাদের জন্য খুলে দিতাম”। (আল-আনফাল: ৯৬)। অন্যত্র ইরশাদ হচ্ছে: “তোমরা আল্লাহকে ভয় করো যাতে তোমরা সফলতা লাভ করতে পার”(সূরা আল-বাক্বারাহ: ১৮৯)। উপরোল্লেখিত প্রমানাদিসহ কুরআনুল কারিমে ও হাদীসের অসংখ্য দলীল দ্বারা প্রমাণিত যে, রহমত, বরকত, মাগফিরাত, মুক্তি ও মহান রবের সন্তুষ্টি লাভ করতে হলে আমাদের অবশ্যই তাকওয়ার গুণাবলী অর্জন, ধারন ও পালন করতে হবে ।
ঘ. তাকওয়া অর্জনে নবি-রাসূলগণের ওসিয়ত:
১.হযরত নূহ -আলাইহি ওয়া সাল্লাম- এর ওসিয়ত: ‘‘যখন তাদের ভাই নূহ তাদের-কে বলল, ‘তোমরা কি সাবধান হবে না?’’ (সূরা আল-শো’আরা: ১০৬)।
২. হযরত হুদ -আলাইহিস সালাম- এর ওসিয়ত: ‘‘যখন তাদের ভ্রাতা হুদ তাদের-কে বলল, ‘তোমরা কি সাবধান হবে না?’’ (সূরা আল- শো’আরা: ১২৪)।
৩. হযরত সালেহ -আলাইহিস সালাম- এর ওসিয়ত: ‘‘যখন তাদের ভ্রাতা সালেহ তাদের-কে বলল, ‘তোমরা কি সাবধান হবে না?’’ (সূরা আল- শো’আরা: ১৪২)।
৪. হযরত লুত -আলাইহিস সালাম- এর ওসিয়ত: ‘‘যখন তাদের ভ্রাতা লূত তাদের-কে বলল, ‘তোমরা কি সাবধান হবে না?’’ (সূরা আল- শো’আরা: ১৬১)।
৫. হযরত শুআইব -আলাইহিস সালাম- এর ওসিয়ত: ‘‘যখন শুআইব তাদের-কে বলল, ‘তোমরা কি সাবধান হবে না?’’ (সূরা আল- শো’আরা: ১৭৭)।
৬. হযরত ইবরাহীম -আলাইহিস সালাম- এর ওসিয়ত: ‘‘স্মরণ কর ইব্রাহীমের কথা, তিনি তার সম্প্রদায়কে বলেছিলেন, তোমরা আল্লাহ্র ইবাদত কর এবং তাঁকে ভয় কর ; তোমাদের জন্য ইহাই শ্রেয় যদি তোমরা জানতে!’’ (সূরা আল-আনকাবুত: ১৬)।
৭. সাইয়্যেদুল মুরসালিন নবি হযরত মুহাম্মদ-সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- এর ওসিয়ত: আবূ যার জুন্দুব ইবনে জুনাদাহ -রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু- ও মু’আয ইবনে জাবাল -রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু- থেকে বর্ণিত: রাসূলুল্লাহ -সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- বলেন: ‘তুমি যেখানেই থাক না কেন, আল্লাহ-কে ভয় কর এবং পাপের পরে (কোনো পাপ হয়ে গেলে) পুণ্য কর, যা পাপকে মুছে ফেলবে। আর মানুষের সঙ্গে সদ্ব্যবহার কর’। (তিরমিযি: ১৯৮৭, আহমাদ:২০৮৪৭, ২০৮৯৪, ২১০২৬, দারেমি: ২৭৯১)।
ঙ. তাকওয়া অর্জনে সিয়ামের ভূমিকা: রমাদান মাস হচ্ছে সংযম ও আত্মশুদ্ধির মাস, স্বীয় অপরাধ ক্ষমা করিয়ে নেওয়ার মাস এবং তাকওয়ার গুণাবলীতে নিজেকে সমৃদ্ধ করার সর্বোৎকৃষ্ট সময়। রোযার প্রতিটি রীতি-নীতি ও কার্যকলাপে তাকওয়ার শিক্ষা রয়েছে। ক্ষুধা-তৃষ্ণার তীব্র চাহিদা থাকা সত্ত্বেও একজন রোযাদার সারাদিন খাদ্য বা পানীয় গ্রহণ করে না, স্বামী-স্ত্রীর জৈবিক চাহিদা পূরণ হতে বিরত থাকে; কারণ সে আল্লাহকে ভয় করে। এটি এজন্য নয় যে, সে খাদ্য গ্রহণ করলে কেউ দেখে ফেলবে; বরং রোযাদারের হৃদয়জুড়ে এ বিশ্বাস প্রবল যে, দুনিয়ার কেউ দেখুক আর না-ই দেখুক, সেই মহান মনীব তাকে দেখছেন যিনি সকল কিছুর নিয়ন্ত্রক ও পর্যবেক্ষক। তাই দিনের বেলায় পানাহার করা যাবে না, রোযার সাথে সাংঘর্ষিক কোনো কাজ করা যাবে না, তাঁর কোন আদেশ-নিষেধ অমান্য করা যাবে না। হযরত আবু হুরাইরা -রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু- হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ -সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- ইরশাদ করেন: “যে ব্যক্তি রমাদানের রোযা রাখলো কিন্তু মিথ্যা কথা বলা ও সে অনুযায়ী আমল বর্জন করেনি এ তার পানাহার ত্যাগে আল্লাহর কোনো প্রয়োজন নেই”(সহিহুল বুখারি: ৬০৫৭, ১৯০৩, তিরমিযি: ৭০৭,২৩৬২, আবু দাউদ: ২৩৬২, ইবনু মাজাহ: ১৬৮৯, আহমাদ: ১০১৮৪, ৮৫২৯)।
আল্লাহ তা’আলার আদেশ-নিষেধ মেনে চলার এ অনুভূতিই তাকওয়া, যা অর্জনের সর্বোৎকৃষ্ট সময় রমাদান। মাসব্যপী প্রশিক্ষণের মাধ্যমে অর্জিত তাকওয়ার এ গুণটি যদি কোনো ব্যক্তি লালন ও পালন করে, তাহলে তার পক্ষে মিথ্যা বলা, অন্যের হক নষ্ট করা, ঘুষ ও সুদ খাওয়া, আমানতের খেয়ানত করা, প্রতারণা করা, মালে ভেজাল দেওয়া, সিন্ডিকেটের মাধ্যমে অযৌক্তিকভাবে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি করে জনসাধারণের ভোগান্তি তৈরি করা, চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি, গরীব ও অসহায়দের ত্রাণের মাল আত্মসাত করা, ইভটিজিং, ধর্ষণসহ যে কোন অন্যায় কাজ করা ও দুর্নীতিপরায়ণ হওয়া সম্ভব নয়। কেননা সে সবসময় বিশ্বাস করবে, আমি কোনো অন্যায় কাজ করলে মহান আল্লাহ তা দেখবেন এবং এর জন্য আমাকে জবাবদিহি করতে হবে ও পরিণাম ভোগ করতে হবে। এ জন্যই হাদীসে কুদসীতে আল্লাহ তা’আলা বলেন: ‘সাওম কেবল আমার-ই জন্য এবং এর প্রতিদান আমি নিজেই প্রদান করব; কেননা সে (রোযাদার) আমার সন্তুষ্টির জন্যই পানাহার ও জৈবিক চাহিদা পরিহার করে’ (সহিহুল বুখারি: ১৮৯৪, ১৯০৪, ৫৯২৭৭৪৯২, ৭৫৩৮, সহিহ মুসলিম: ১১৫১, তিরমিযি: ৭৬৪, নাসায়ি: ২২১৫, আহমাদ: ৭৪৪২)।
চ. তাকওয়ার উপকারীতা:
রমাদান মাসের সিয়াম সাধনার মাধ্যমে অর্জিত তাকওয়ার এ গুণাবলী মানবজীবনে ধারণ এবং চর্চা করলে সমাজে বিরাজমান যাবতীয় অবিচার, অনাচার, অত্যাচার, মারা-মারি, হানা-হানি, প্রতারণা, অনৈতিকতা, অপ্রাসঙ্গিকতা, পাশবিকতা ও অনৈসলামিক জীবনাচার দূরীভূত হয়ে অনাবিল সুখ-শান্তি ও নিরাপত্তার সমাজ বিনির্মিত হবে। দুনিয়া ও আখিরাতে তাকওয়ার বহুবিধ উপকারীতা রয়েছে। এ জন্যই আল্লাহ তা’আলা সকল যুগের মানব সম্প্রদায়-কে তাকওয়া অর্জনের নির্দেশ প্রদান করে বলেন: “আমি তোমাদের পূর্বের আহলে কিতাবদের নির্দেশ দিয়েছিলাম, তোমাদেরকেও এ নির্দেশ দিচ্ছি যে, তোমরা আল্লাহ-কে ভয় করবে”(সূরা নিসা: ১৩১)। নিম্নে সংক্ষেপে তাকওয়ার কতিপয় উপকারীতা উল্লেখ করা হলো।
পর্থিব উপকারীতা:
১. ব্যক্তি ও সমাজ জীবনে সহজতা লাভ: তাকওয়া অবলম্বন করলে ব্যক্তি ও সমাজ জীবনের বিষয়গুলোকে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন সহজ করে দিবেন। কুরআনের ভাষায়: ‘‘যে আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তার সমস্যার সমাধান সহজ করে দিবেন’ (সূরা আত-তালাক: ৪)।
২. বরকত, কল্যাণ ও রিযিক লাভ: তাকওয়া অর্জনকারীর জন্য আসমান হতে বরকত, কল্যাণ ও রিযিকের ব্যবস্থা করে থাকেন স্বয়ং রাব্বুল আলামীন। কুরআনের ভাষায়: ‘‘যদি জনপদের অধিবাসীবৃন্দ ঈমান আনত ও তাকওয়া অবলম্বন করত, তাহলে আমি তাদের জন্য আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর কল্যাণসমূহ উন্মুক্ত করে দিতাম (সূরা আ’রাফ: ৯৬)। আল্লাহ তা’আলা আরো ইরশাদ করেন: ‘‘যে আল্লাহকে ভয় করে আল্লাহ তার পথ করে দিবেন এবং তাকে ধারণাতীত উৎস হতে রিযিক দান করবেন। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর ওপর নির্ভর করে তার জন্য আল্লাহ-ই যথেষ্ট (সূরা আত-তালাক: ২-৩)।
৩. ষড়যন্ত্রকারীদের ষড়যন্ত্র হতে নিরাপত্তা লাভ: মহান আল্লাহর বাণী-“যদি তোমরা ধৈর্য্য ধারণ করো এবং তাকওয়া অবলম্বন করো, তবে তাদের কোনো ষড়যন্ত্রই তোমাদের কোনো প্রকার ক্ষতি সাধন করতে পারবে না’ (সূরা আল-ইমরান: ১২০)।
৪. মহৎ কাজের দায়িত্বশীল হবার সৌভাগ্য অর্জন: তাকওয়ার এ বৈশিষ্ট্য অর্জনের মাধ্যমে মহান মনীবের বন্ধু হওয়ার গৌরব লাভ করা যায় এবং মহৎ কাজের দায়িত্বশীল হবার সৌভাগ্য অর্জন করা যায়। কুরআনের ভাষায়: ‘‘তারা উহার (মসজিদুল হারাম) তত্ত্বাবধায়ক নয়, শুধু মুত্তাকীগণই ইহার তত্ত্বাবধায়ক; কিন্তু তাদের অধিকাংশ তা জানেনা (সূরা আল-আনফাল: ৩৪)।
৫. কল্যাণকর জ্ঞান হাসিল: তাকওয়াবান ব্যক্তি-কে আল্লাহ তা’আলা কল্যাণকর জ্ঞান দান করেন। যেমন- তিনি বলেন: ‘‘তোমরা আল্লাহ-কে ভয় কর এবং আল্লাহ তোমাদের-কে শিক্ষা দেন’’ (সূরা বাক্বারাহ: ২৮২)।
৬. শয়তানের অনিষ্ঠতা থেকে হেফাজত করে: “যারা তাকওয়ার অধিকারী হয় তাদের-কে শয়তান যখন কুমন্ত্রণা দেয় তখন তারা আল্লাহ-কে স্মরণ করে এবং তৎক্ষণাৎ তাদের চোখ খুলে যায়” (সূরা আ’রাফ: ২০১)।
৭. ন্যায়-অন্যায় পার্থক্য করার ক্ষমতা অর্জিত হয়: “হে মু’মিনগণ! যদি তোমরা আল্লাহ-কে ভয় কর তবে আল্লাহ তোমাদের ন্যায়-অন্যায় পার্থক্য করবার শক্তি দিবেন” (সূরা আনফাল: ২৯)।
৮. আল্লাহ তা’আলার ভালবাসা লাভ করা যায়: “নিশ্চয়ই আল্লাহ মুত্তাকীদের ভালবাসেন” (সূরা আল-ইমরান: ৭৬)।
৯. আল্লাহ তা’আলার সান্নিধ্য লাভ করা যায়: “আর তোমরা আল্লাহ-কে ভয় কর এবং জেনে রেখ যে, আল্লাহ্ অবশ্যই মুত্তাকীদের সাথে থাকেন (সূরা আল-বাক্বারাহ: ১৯৪)।
১০. মুত্তাকীদের আমল কবুল হয়: “নিশ্চয়ই আল্লাহ মুত্তাকীদের কুরবানী কবুল করেন”(সূরা আল-মায়েদা: ২৭)।
১১. তাকওয়া উত্তম সম্পদ: “এবং তোমরা পাথেয়ের ব্যবস্থা কর, আত্মসংযমই শ্রেষ্ঠ পাথেয়। হে বোধসম্পন্ন ব্যক্তিগণ! তোমরা আমাকে ভয় কর (সূরা আল-বাক্বারাহ: ১৯৭)।
পরকালীন উপকারীতা:
১. আল্লাহর পক্ষ হতে ক্ষমতা ও দুনিয়া আখিরাতের সফলতা লাভ: আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন: ‘‘হে মুমিনগণ! যদি তোমরা আল্লাহকে ভয় কর তবে আল্লাহ তোমাদের ন্যায়-অন্যায় পার্থক্য করার ক্ষমতা দিবেন, তোমাদের পাপ মোচন করবেন এবং তোমাদেরকে ক্ষমা করবেন। আল্লাহ অতিশয় দয়াশীল’ (সূরা আনফাল: ২৯)। আল্লাহ তা’আলা অন্যত্র বলেন: ‘‘হে মুমিনগণ! আল্লাহকে ভয় কর এবং তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান আনয়ন কর। তিনি তাঁর অনুগ্রহে তোমাদের-কে দিবেন দ্বিগুণ পুরস্কার এবং তিনি তোমাদের-কে দিবেন আলো, যার সাহায্যে তোমরা চলবে এবং তোমাদের-কে ক্ষমা করবেন; আল্লাহ অতিশয় ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু’ (সূরা হাদীদ: ২৮)।
২. আল্লাহ তা’আলার রহমত লাভ: তাকওয়ার মাধ্যমে দুনিয়া ও আখিরাতে আল্লাহ তা’আলার রহমত নসীব হবে। কুরআনের ভাষায়: ‘‘আর আমার দয়াতো প্রত্যেক বস্তুতে ব্যাপ্ত। সুতরাং আমি উহা তাদের জন্য নির্ধারিত করব যারা তাকওয়া অবলম্বন করে, যাকাত দেয় ও আমার আয়াতসমূহে বিশ্বাস স্থাপন করে’’ (সূরা আ’রাফ: ১৫৬)।
৩. দুনিয়া ও আখিরাতের জন্য সুসংবাদ: ‘‘যারা ঈমান আনে এবং তাকওয়া অবলম্বন করে, তাদের জন্য রয়েছে সুসংবাদ দুনিয়া ও আখিরাতে’ (সূরা ইউনুস: ৬৩-৬৪)।
৪. কুরআনুল কারিমে হতে হেদায়াত প্রাপ্তি: ‘‘ইহা সেই কিতাব; যাতে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই, মুত্তাকীদের জন্য ইহা পথ-নির্দেশ’ (সূরা বাক্বারাহ: ২)।
৫. জান্নাত লাভ: মুত্তাকীদের জন্য মহান রবের পক্ষ হতে জান্নাতের সুসংবাদ প্রদান করা হয়েছে। আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন: ‘‘তোমরা ধাবমান হও স্বীয় প্রতিপালকের ক্ষমার দিকে এবং সেই জান্নাতের দিকে যার বিস্তৃতি আসমান ও যমীনের ন্যায়, যা প্রস্তুত করা হয়েছে মুত্তাকীদের জন্য’ (সূরা আল-ইমরান: ১৩৩)।
৬. আল্লাহ তা’আলার প্রতিনিধি দলের মর্যাদা লাভ: “সে দিন মুত্তাকীদের দয়ালুর (আল্লাহর) প্রতিনিধি হিসেবে উঠানো হবে” (সূরা মরিয়ম: ৮৫)।
৭. মুত্তাকীরা হবে জান্নাতের উত্তরাধিকারী: “এ সেই জান্নাত, যার অধিকারী করব আমার বান্দাদের মধ্যে মুত্তাকীদের (সূরা মরিয়ম: ৬৩)।
৮. জাহান্নাম হতে মুক্তি লাভ: “অতপর আমি মুত্তাকীদের-কে উদ্ধার করব এবং জালিমদের-কে সেখানে নতজানু অবস্থায় রেখে দেব। (সূরা মরিয়ম: ৭২)।
ছ. আমাদের করণীয়:
তাকওয়ার এ সুফল পেতে আমাদের যেমনি ব্যক্তি পর্যায়ে সচেষ্ট হতে হবে, তেমনি সম্মিলিত প্রচেষ্টা বাড়াতে হবে, সকল বিষয়ে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল -সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- এর আনুগত্য এবং সন্তুষ্টিকে প্রাধান্য দিতে হবে। পরম করুণাময়ের বাণী:
“অতএব তোমরা আল্লাহকে ভয় করো, নিজেদের পারস্পরিক ভ্রাতৃত্বের বন্ধন সুদৃঢ় রাখো এবং প্রকৃত ঈমানদার হলে তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করো (সূরা আনফাল: ০১)। তাই ইবাদতের ক্ষেত্রে সকল প্রকার শিরক-বিদ’আত মুক্ত থেকে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্যের মাধ্যমে জীবনের সকল স্তরে আমাদের তাকওয়া অবলন্বন করা অতি জরুরি। কেননা তাকওয়ার এ গুণাবলী মানুষকে সবচেয়ে বেশি সম্মানিত করে এবং সর্বোচ্চ মর্যাদার আসনে সমাসীন করে। মহান আল্লাহর কাছেও তাকওয়ার গুণাবলী সম্পন্ন মানুষ সবচেয়ে বেশি সম্মানিত। আল্লাহ তা’আলার বাণী:“তোমাদের মধ্যে আল্লাহর নিকট সেই ব্যক্তি অধিক মর্যাদা সম্পন্ন, যে বেশি তাকওয়াবান”(সূরা আল-হুজুরাত: ১৩)।
আমাদের জন্য মহান রবের অন্যতম নেয়ামত রমাদান মাস, যা তাঁর ইবাদত ও সন্তুষ্টি লাভের শ্রেষ্ঠ সময়। তাই আমাদের উচিত এ মাসের সিয়াম সাধনা, কিয়ামুললাইল, কুরআনুল কারিম তিলাওয়াত করা, কুরআন বুঝতে সচেষ্ট হওয়া, কুরআন অনুযায়ী জীবন পরিচালনা, গরীব, ছিন্নমূল ও অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো এবং যাবতীয় হারাম, অশ্লীল ও অন্যায় কাজ বিসর্জনের মাধমে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের সন্তুষ্টি অর্জনে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা এবং তাকওয়ার গুণে গুণাণ্বিত হওয়া। পরম করুনাময়ের নিকট প্রার্থনা, তিনি যেন আমাদের-কে এ মাসের যাবতীয় কল্যাণ ও বরকত নসীব করেন। তাকওয়া অর্জন, ধারন ও অধিক অধিক চর্চার মাধ্যমে ইহকালীন শান্তি ও পরকালীন মুক্তি ও সফলতা দান করেন। আমীন!
লেখক:
হোসাইন মোহাম্মদ ইলিয়াস
কামিল, বিএ (অনার্স), কিং সৌদ ইউনিভার্সিটি, রিয়াদ, সৌদি আরব,
বিএ (অনার্স), এমএ, এমফিল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
উপাধ্যক্ষ, নিবরাস মাদরাসা।
সম্পাদক ও প্রকাশক: কামরুজ্জামান জনি
Copyright © 2024 Muktirlorai | মুক্তির লড়াই. All rights reserved.