সম্প্রতি বিশ্বের দীর্ঘতম হাইওয়ে টানেল থিয়ানশান শেংলি টানেল চালু হয়েছে। টানেলটি চালু হওয়ার পর কেন্দ্রীয় অঞ্চল থেকে উত্তর ও দক্ষিণ সিনচিয়াংকে সংযুক্ত করতে থিয়ানশান পর্বতমালার মধ্য দিয়ে সড়ক পথে মাত্র ২০ মিনিট সময় লাগে। এটি থিয়ানশান পর্বতের উত্তর ও দক্ষিণের মধ্যে পরিবহন কাঠামোর পরিবর্তন করেছে, দুটি স্থানের মধ্যে সময় এবং স্থানের দূরত্ব কমিয়ে এনেছে এবং অর্থনীতি ও সাংস্কৃতিক খাতের যোগাযোগ উন্নত করেছে।
উত্তরে তৃণভূমির উপত্যকা ও দক্ষিণে মরুভূমির মরূদ্যান রয়েছে। হাজার হাজার বছর ধরে, পূর্ব থেকে পশ্চিমে ২৫০০ কিলোমিটারেরও বেশি বিস্তৃত থিয়ানশান পর্বতমালা উত্তর থেকে দক্ষিণ সিনচিয়াংয়ের পথ বন্ধ করে দিয়েছে। সিনচিয়াংয়ের সব জাতিগোষ্ঠীর মানুষের প্রবল প্রত্যাশা হলো থিয়ানশান পর্বতমালা অতিক্রম করা।
তবে সিনচিয়াংয়ের অর্থনীতি ও সমাজের দ্রুত উন্নয়নের পাশাপাশি, যাত্রী ও পণ্য পরিবহনের চাহিদা ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে। আগের সড়কটি উত্তর-দক্ষিণ সিনচিয়াংয়ের মধ্যে ভ্রমণের প্রকৃত চাহিদা পূরণ করতে পারতো না।
২০২০ সালের এপ্রিল মাসে উওয়েই হাইওয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে নির্মাণ কাজ শুরু হয়। এর মধ্যে লাইনের মাঝখানে অবস্থিত ২২.১৩ কিলোমিটার দীর্ঘ থিয়ানশান শেংলি টানেল হাজার হাজার মিটার উঁচু তুষারাবৃত পাহাড়ের নীচে খনন কাজ শুরু করা হয়। এটি হলো বিশ্বের দীর্ঘতম হাইওয়ে টানেল। টানেলটি তৈরি করার পর থিয়ানশান পর্বতমালা পার হতে মাত্র ২০ মিনিট সময় লাগে। কর্মসূচী অনুযায়ী উওয়েই হাইওয়ে ২০২৫ সালে চালু হবে। তখন দক্ষিণ সিনচিয়াংয়ের উরুমচি থেকে ইউলি কাউন্টিতে গাড়ি চলাচলের সময় ৭ ঘন্টা থেকে কমে ৩ ঘণ্টায় নেমে আসবে।
থিয়ানশান শেংলি টানেলের সমাপ্তি একটি মাইলফলক। এটি বিশ্বের কাছে প্রমাণ করেছে যে, অত্যন্ত জটিল ভূতাত্ত্বিক পরিস্থিতিতে বড় পরিবহন প্রকল্প নির্মাণের অসুবিধাগুলো কাটিয়ে ওঠার জন্য চীনের আত্মবিশ্বাস ও ক্ষমতা রয়েছে। উত্তর ও দক্ষিণ সিনচিয়াংয়ের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও আঞ্চলিক সুবিধাজনক সম্পদের উন্নয়নের জন্য এটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।
থিয়ানশান শেংলি টানেলের কাছে একটি পাহাড়ি গিরিপথ আছে। খাড়া ভূখণ্ডের কারণে, এটিকে ‘বাঘের মুখ’ বলা হয়। তবে বিপজ্জনক ভূখণ্ডের তুলনায়, এই প্রকল্পটি বাস্তবায়নের সময় যেসব পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়েছিল তা আরও গুরুতর ও জটিল ছিল।
সমুদ্র থেকে পৃষ্ঠা ৩ হাজার মিটারের বেশি উচ্চতায় স্থল নির্মাণের সময় উচ্চতা ও ঠান্ডা জলবায়ুর সাথে খাপ খাইয়ে নিতে হয়েছিল। বার্ষিক গড় তাপমাত্রা মাইনাস ৫.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা মাইনাস ৪১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস হয়েছিল। এই টানেলটি ভূগর্ভের গভীর অঞ্চলের মধ্য দিয়ে যায়; যেখানে বিভিন্ন ভূতাত্ত্বিক কাঠামো ও শিলা বৈশিষ্ট্যের বিশাল পার্থক্য রয়েছে এবং এতে অনেক ভূতাত্ত্বিক ঝুঁকি রয়েছে যেমন চ্যুতি ও শিলা বিস্ফোরণ ইত্যাদি।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কাছাকাছি পরিবহন ব্যবস্থা উন্নীত হওয়ার পাশাপাশি স্থানীয় গ্রামগুলো অনন্য প্রাকৃতিক দৃশ্যের উপর নির্ভর করে ব্যাপকভাবে পর্যটন শিল্প উন্নত করছে। এ ছাড়া পরিবহন ব্যবস্থা উন্নয়নের মাধ্যমে স্থানীয় বিভিন্ন শিল্প উন্নীত হয়েছে।
থিয়ানশান শেংলি টানেল চালু হওয়ার পর সিনচিয়াংয়ের বাইরে যাতায়াতের পরিবহন ক্ষমতা সীমাবদ্ধ পরিস্থিতি কার্যকরভাবে উপশম হচ্ছে, যাতে উত্তর ও দক্ষিণ সিনচিয়াংয়ের সমন্বিত উন্নয়ন প্রচার করা যাবে।
বর্তমান সিনচিয়াংয়ের পরিবহন ব্যবস্থা পূর্ব দিকে কানসু ও ছিংহাই, দক্ষিণ দিকে সিচাং, পশ্চিম দিকে মধ্য এশিয়া ও পশ্চিম এশিয়ার বিভিন্ন দেশ এবং উত্তর দিকে মঙ্গোলিয়ার সঙ্গে সংযুক্ত পরিবহন যোগাযোগব্যবস্থা তৈরি হয়েছে। এ ছাড়া হাইস্পিড রেলপথ ও বিমান লাইনের সংযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়েছে। বর্তমান সিনচিয়াংয়ের রেশমপথ অর্থনৈতিক অঞ্চলের কেন্দ্রীয় এলাকা হিসেবে সড়ক, রেলপথ, বিমান বন্দর ও পণ্য পরিবহন কেন্দ্র নির্মাণের চেষ্টা করছে। এটি আরো বেশি চীনা তৈরি পণ্য সারা বিশ্বে রপ্তানি করতে সহায়তা করছে। বর্তমানে আরো সমৃদ্ধ ও উন্মুক্ত সিনচিয়াং দ্রুতগতিতে উন্নত হচ্ছে।
সূত্র: ছাই ইউয়ে মুক্তা, চায়না মিডিয়া গ্রুপ।
সম্পাদক ও প্রকাশক: কামরুজ্জামান জনি
Copyright © 2025 Muktirlorai | মুক্তির লড়াই. All rights reserved.