ঢাকা ০৯:৩২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৫, ৩০ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম
Logo দালালের হাতে বন্দি ডিজিটাল ভূমি সেবা Logo রাজশাহীতে বাসায় ঢুকে বিচারকের ছেলেকে কুপিয়ে হত্যা, স্ত্রী আহত Logo আধুনিক ও যুগোপযোগী প্রশিক্ষণের মাধ্যমে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রস্তুত থাকার আহ্বান সেনাপ্রধানের Logo বাংলাদেশ আর্মি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স এন্ড টেকনোলজিতে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং উৎসব Logo একই দিনে গণভোট ও জাতীয় নির্বাচন ঘোষণায় জনগণের অভিপ্রায় উপেক্ষা করা হয়েছে.. জামায়াত Logo গণভোটে যে চার প্রশ্ন থাকবে Logo জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন গণভোট… প্রধান উপদেষ্টা Logo জাজিরায় নুসার উদ্যোগে জেন্ডার–বান্ধব স্যানিটেশনে শিক্ষার্থী ব্রিগেড সক্রিয়করন Logo ঈশ্বরগঞ্জে ওয়ার্ড বিএনপির কর্মী সম্মেলন অনুষ্ঠিত Logo ভাঙ্গা-ঢাকা এক্সপ্রেসওয়ে অবরোধ চিনির ট্রাকের আগুন (ভিডিও)

দালালের হাতে বন্দি ডিজিটাল ভূমি সেবা

মোহাম্মদ মাহামুদুল

সাম্প্রতিক বক্তব্যে ভূমি কর্মকর্তােরা দাবি করছেন—ডিজিটাল ব্যবস্থা চালু হওয়ায় ঘুষ, হয়রানি ও অনিয়ম “উল্লেখযোগ্যভাবে কমে এসেছে”। কথাটি শুনতে ভালো লাগে, কিন্তু তৃণমূলে গিয়ে দেখা যায় সম্পূর্ণ ভিন্ন চিত্র।

আমি একজন প্রবাসী রেমিট্যান্স যোদ্ধা, অসুস্থতার কারণে দীর্ঘ ছুটিতে দেশে থেকে গত এক বছরে ভূমি অফিস-সংক্রান্ত বেশ কিছু বাস্তব অভিজ্ঞতা পেয়েছি। সেই অভিজ্ঞতা থেকে বলতে বাধ্য হচ্ছি—ডিজিটাল সিস্টেম চালু হলেও দালাল সিন্ডিকেট এখনও অটুট, বরং আরও বেপরোয়া।

ভূমি অফিসের ভেতরেই কর্মচারীদের ছত্রচ্ছায়ায় দালাল বসিয়ে রাখা হয়েছে। সরাসরি ঘুষ নেওয়ার বদলে দালালের মাধ্যমে ৫–৭ হাজার টাকা পর্যন্ত আদায় করা হচ্ছে খারিজের মতো সাধারণ কাজে। স্থানীয় অভিযোগ আরও ভয়াবহ—নায়েবকে নাকি ১৫০০ টাকা ছাড়া খারিজে সই করতে দেখা যায় না।

খাজনা দেওয়ার ক্ষেত্রেও একই চিত্র। নাগরিককে নির্দিষ্ট “একটি দোকানে” পাঠানো হয়—সেই দোকানে আবেদন করলে অনুমোদন মিলে যায়, অন্য দোকানে করলে ফাইল ঝুলে থাকে “আজ–কাল–পরশু” বলে। পরে টাকা দিলে অনুমোদন, না দিলে ত্রুটি দেখিয়ে বাতিল—ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মকে হাতিয়ার বানিয়ে দুর্নীতির নতুন ধরন।

আমি নিজেই গত এক বছর এলাকায় একটি কম্পিউটার দোকানে কাজ করতে গিয়ে দেখেছি, অনলাইনে খাজনা দেওয়া কাগজে থাকা কিউআর কোড স্ক্যান করলে আসছে এক ব্যক্তির নাম, কিন্তু ভুক্তভোগীর কাছে দেওয়া হচ্ছে অন্য নাম-ঠিকানার কাগজ। পরে জানা গেল, ভুমি অফিসের দালালেরা ১৫০০ টাকা নিয়ে এসব “সাজাই-বাজাই করা” কাগজ হাতে ধরিয়ে দিয়েছে। এলাকায় বিষয়টি ফাঁস হলে টাকার বিনিময়ে রফাদফা—এটাই বাস্তব।

শুধু ভূমি নয়, একই চিত্র পুলিশের ক্লিয়ারেন্সেও। আগে যে কাজটি অনলাইনে ‘ফ্রি’ বলতে ৫০০ টাকায় হয়ে যেত, হঠাৎ এক ইউনুস সরকার আসার পর অক্টোবরের মাঝামাঝি থেকে তা এক লাফে ১৫০০ টাকায় পৌঁছেছে।

তাহলে প্রশ্ন—দুর্নীতি কমল কোথায়?

ডিজিটাল সেবা সুবিধা দিচ্ছে, এটি সত্য। কিন্তু যারা এই সিস্টেম চালায় তাদের মানসিকতা, নৈতিকতা ও জবাবদিহির সংস্কৃতি যদি না বদলায়, তবে প্রযুক্তি দুর্নীতি কমায় না—শুধু দুর্নীতির পদ্ধতি বদলায়।

ভূমি প্রশাসনে প্রকৃত উন্নতি চাইলে প্রথম কাজ দালালমুক্ত পরিবেশ তৈরি করা, প্রতিটি ধাপে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা। নইলে যতই ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম তৈরি হোক—নাগরিকের ভোগান্তি আগের মতোই থাকবে, শুধু রূপ বদলে যাবে।

দুর্নীতিমুক্ত ভূমি প্রশাসনের জন্য—প্রযুক্তি নয়, মানবিকতা, সুশাসন ও সততার সংস্কারই জরুরি।

লেখক : মোহাম্মদ মাহামুদুল।
মালদ্বীপ প্রবাসী সাংবাদিক ও রেমিট্যান্স যোদ্ধা।

ট্যাগস
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

দালালের হাতে বন্দি ডিজিটাল ভূমি সেবা

SBN

SBN

দালালের হাতে বন্দি ডিজিটাল ভূমি সেবা

আপডেট সময় ০৭:৫৯:৫১ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৫

মোহাম্মদ মাহামুদুল

সাম্প্রতিক বক্তব্যে ভূমি কর্মকর্তােরা দাবি করছেন—ডিজিটাল ব্যবস্থা চালু হওয়ায় ঘুষ, হয়রানি ও অনিয়ম “উল্লেখযোগ্যভাবে কমে এসেছে”। কথাটি শুনতে ভালো লাগে, কিন্তু তৃণমূলে গিয়ে দেখা যায় সম্পূর্ণ ভিন্ন চিত্র।

আমি একজন প্রবাসী রেমিট্যান্স যোদ্ধা, অসুস্থতার কারণে দীর্ঘ ছুটিতে দেশে থেকে গত এক বছরে ভূমি অফিস-সংক্রান্ত বেশ কিছু বাস্তব অভিজ্ঞতা পেয়েছি। সেই অভিজ্ঞতা থেকে বলতে বাধ্য হচ্ছি—ডিজিটাল সিস্টেম চালু হলেও দালাল সিন্ডিকেট এখনও অটুট, বরং আরও বেপরোয়া।

ভূমি অফিসের ভেতরেই কর্মচারীদের ছত্রচ্ছায়ায় দালাল বসিয়ে রাখা হয়েছে। সরাসরি ঘুষ নেওয়ার বদলে দালালের মাধ্যমে ৫–৭ হাজার টাকা পর্যন্ত আদায় করা হচ্ছে খারিজের মতো সাধারণ কাজে। স্থানীয় অভিযোগ আরও ভয়াবহ—নায়েবকে নাকি ১৫০০ টাকা ছাড়া খারিজে সই করতে দেখা যায় না।

খাজনা দেওয়ার ক্ষেত্রেও একই চিত্র। নাগরিককে নির্দিষ্ট “একটি দোকানে” পাঠানো হয়—সেই দোকানে আবেদন করলে অনুমোদন মিলে যায়, অন্য দোকানে করলে ফাইল ঝুলে থাকে “আজ–কাল–পরশু” বলে। পরে টাকা দিলে অনুমোদন, না দিলে ত্রুটি দেখিয়ে বাতিল—ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মকে হাতিয়ার বানিয়ে দুর্নীতির নতুন ধরন।

আমি নিজেই গত এক বছর এলাকায় একটি কম্পিউটার দোকানে কাজ করতে গিয়ে দেখেছি, অনলাইনে খাজনা দেওয়া কাগজে থাকা কিউআর কোড স্ক্যান করলে আসছে এক ব্যক্তির নাম, কিন্তু ভুক্তভোগীর কাছে দেওয়া হচ্ছে অন্য নাম-ঠিকানার কাগজ। পরে জানা গেল, ভুমি অফিসের দালালেরা ১৫০০ টাকা নিয়ে এসব “সাজাই-বাজাই করা” কাগজ হাতে ধরিয়ে দিয়েছে। এলাকায় বিষয়টি ফাঁস হলে টাকার বিনিময়ে রফাদফা—এটাই বাস্তব।

শুধু ভূমি নয়, একই চিত্র পুলিশের ক্লিয়ারেন্সেও। আগে যে কাজটি অনলাইনে ‘ফ্রি’ বলতে ৫০০ টাকায় হয়ে যেত, হঠাৎ এক ইউনুস সরকার আসার পর অক্টোবরের মাঝামাঝি থেকে তা এক লাফে ১৫০০ টাকায় পৌঁছেছে।

তাহলে প্রশ্ন—দুর্নীতি কমল কোথায়?

ডিজিটাল সেবা সুবিধা দিচ্ছে, এটি সত্য। কিন্তু যারা এই সিস্টেম চালায় তাদের মানসিকতা, নৈতিকতা ও জবাবদিহির সংস্কৃতি যদি না বদলায়, তবে প্রযুক্তি দুর্নীতি কমায় না—শুধু দুর্নীতির পদ্ধতি বদলায়।

ভূমি প্রশাসনে প্রকৃত উন্নতি চাইলে প্রথম কাজ দালালমুক্ত পরিবেশ তৈরি করা, প্রতিটি ধাপে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা। নইলে যতই ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম তৈরি হোক—নাগরিকের ভোগান্তি আগের মতোই থাকবে, শুধু রূপ বদলে যাবে।

দুর্নীতিমুক্ত ভূমি প্রশাসনের জন্য—প্রযুক্তি নয়, মানবিকতা, সুশাসন ও সততার সংস্কারই জরুরি।

লেখক : মোহাম্মদ মাহামুদুল।
মালদ্বীপ প্রবাসী সাংবাদিক ও রেমিট্যান্স যোদ্ধা।