এজে সোহেল, স্টাফ রিপোর্টার
চট্টগ্রাম বিভাগের দ্বিতীয় বৃহত্তম জেলা কুমিল্লা।
কুমিল্লা জেলার ১৭টি উপজেলার ১১টি আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম কিনে তা জমা দিয়েছেন মোট ৮৯ জন।
কুমিল্লা-১ (দাউদকান্দি-তিতাস)
এই আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছেন মোট ৯ জন। এসব প্রার্থীদের মধ্যে বর্তমান সংসদ সদস্য সুবিদ আলী ভূইয়া ২০০৮ সাল থেকে টানা ৩ বারের সংসদ সদস্য। ক্লিন ইমেজের এই সংসদ সদস্যের বেশ বয়স হয়েছে। আওয়ামী লীগের প্রথম পছন্দের তালিকায় রয়েছেন তিনি। তবে বয়স বিবেচনায় মনোনয়ন সন্ধিহান রয়েছে । এই আসনে অপর হেভিওয়েট নেতা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সবুর। আসন পুনর্বিন্যাসের ফলে তিতাস উপজেলাকে রাখা হয়েছে দাউদকান্দির সঙ্গে। ফলে, তিতাস উপজেলার আওয়ামী লীগের মূল ভোটব্যাংকটি ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সবুরের দখলে রয়েছে। এ ছাড়া দাউদকান্দি এবং তিতাস উপজেলায় বেশ জনপ্রিয় ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সবুর।
কুমিল্লা-২ (হোমনা-মেঘনা)
এই আসনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন জমা দিয়েছেন ৫ জন। তাদের মধ্যে বর্তমান সংসদ সদস্য সেলিমা আহমাদ মেরি। আওয়ামী লীগ তাকে এবারও তাকে মনোনয়ন দেবে এমনটাই শোনা যাচ্ছে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মুখে।
কুমিল্লা-৩ (মুরাদনগর)
এই আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য এফ বি সি সি আই এর সাবেক সভাপতি ও আওয়ামী লীগের সাবেক অর্থ সম্পাদক ইউসুফ আব্দুল্লাহ হারুন। তিনি ছাড়াও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন কিনেছেন ৪ জন। সংসদ সদস্য ইউসুফ আব্দুল্লাহ হারুনের বয়স হয়েছে। এ আসনের তৃণমূল আওয়ামী লীগে রয়েছে দ্বিধাবিভক্তি। এখানকার আওয়ামী লীগের একটি পক্ষ ইউসুফ আব্দুল্লাহ হারুনের পক্ষে থাকলেও বৃহৎ একটি অংশ সাবেক উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম সরকারের অনুসারী। তিনিও মনোনয়ন বিবেচনায় রয়েছেন বলে জানা গেছে। এ আসনে আরেক হেভিওয়েট নেতা মো রুহুল আমিন।
কুমিল্লা-৪ (দেবিদ্বার)
কুমিল্লার সবচেয়ে বেশি আলোচিত আসন কুমিল্লা-৪। এ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য রাজী মোহাম্মদ ফখরুলের সঙ্গে উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক, উপজেলা চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদের দ্বন্দ্ব এবং মারামারি সংসদ পর্যন্ত গড়িয়েছিল। পরে কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যস্থতায় দুজন দুজনকে বুকে জড়িয়ে বিষয়টির সুরাহা করলেও দুজনের বিভক্তি কমেনি। একে অপরকে অনাস্থা জানিয়ে মহাসড়কে ঝাড়ু মিছিল করেছেন কয়েকবার। ফলে এই আসনটিতে আওয়ামী লীগের ইমেজ সংকট রয়েছে। এ দুজন ছাড়াও এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছেন কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রোশন আলী মাস্টার, নিউইয়র্ক শেখ রাসেল পরিষদের সভাপতি ডা. ফেরদৌস খন্দকার।
কুমিল্লা-৫ (বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়া)
কুমিল্লার আসনগুলোতে সবচেয়ে বেশি মনোনয়ন প্রত্যাশী এ আসনে। এখান থেকে মোট ২৬ জন মনোনয়ন চেয়েছেন। সাবেক সফল আইনমন্ত্রী জনপ্রিয় অ্যাডভোকেট মতিন খসরু এই আসনে ৪ বারের সংসদ সদস্য। মতিন খসরুর মৃত্যুর পর ২০২১ সালে উপ নির্বাচনে বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট আবুল হাসেম খান সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। আওয়ামী লীগ এবারও তাকেই মনোনয়ন দেবে এমনটাই মনে করছে তৃণমূলের কর্মীরা। মনোনয়নের দৌড়ে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান সাজ্জাদ হোসেন স্বপন ছাড়া একাধিক প্রার্থী রয়েছেন।
কুমিল্লা-৬ (সদর)
আসনটি জেলার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আসন। এই আসনটি দীর্ঘসময় ধরে বিএনপির দখলে ছিল। ২০০৮ সালে বীর মুক্তিযোদ্ধা হাজী আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারের হাত ধরে আসনটি উদ্ধার করে আওয়ামী লীগ। এরপর টানা তিনবারের সংসদ সদস্য তিনি। এছাড়া তার হাত ধরে কুমিল্লার মেয়র নৌকা প্রতীকে জয়ী হোন। এবারও আ ক ম বাহাউদ্দীন বাহারকেই মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে এমনটাই মনে করছে তৃণমূল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা । এছাড়া মনোনয়নের দৌড়ে একাধিক প্রার্থী রয়েছে।
কুমিল্লা-৭ (চান্দিনা)
আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেলের সাবেক উপাচার্য বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত এবারও মনোনয়ন প্রত্যাশী। তবে এ আসনে প্রয়াত সংসদ সদস্য সাবেক ডেপুটি স্পিকার অধ্যাপক আলী আশরাফের জনপ্রিয়তা এখনও মুখে মুখে। তার ছেলে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুনতাকিম আশরাফ টিটুর সঙ্গে ডা. প্রাণ গোপাল দত্তের প্রকাশ্য দ্বন্দ্ব এ আসনে স্বস্তিতে নেই তৃণমূলের নেতাকর্মীরা।
কুমিল্লা-৮ (বরুড়া)
আসনে সংসদ সদস্য নাছিমুল আলম চৌধুরী নজরুল এবারও মনোনয়ন চেয়েছেন। তিনি ছাড়াও কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি, শিল্পপতি এজেডএম শফিউদ্দিন শামীম মনোনয়নের দৌড়ে এগিয়ে আছেন। প্রয়াত সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ আব্দুল হাকিমের ছেলে এম এম মইনুল ইসলাম, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম ও ক্লিন ইমেজের এডভোকেট এনায়েউল্লাহও আলোচনায় আছেন।
কুমিল্লা-৯ (লাকসাম-মনোহরগঞ্জ)
আসটি স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলামের একক দলীয় আধিপত্য রয়েছে। দলীয় অন্তর কোন্দলহীন, তার মনোনয়নের বিষয়ে মোটামুটি নিশ্চিত এ আসনের তৃণমূল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।
কুমিল্লা-১০ (সদর দক্ষিণ, লালমাই, নাঙ্গলকোট)
কুমিল্লার সবচেয়ে বড় আসন এটি। এ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এবারও মনোনয়ন চেয়েছেন। অর্থমন্ত্রীর এ আসনে নৌকার মনোনয়ন চান সাংবাদিক নঈম নিজাম। সাংবাদিক নাঈম নিজামের জন্য ইতিমধ্যে দলীয় ও জনপ্রিয় নেতাকর্মীরা বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে লেখালেখি এবং প্রচার প্রচারণা চালাচ্ছে।
কুমিল্লা-১১ (চৌদ্দগ্রাম)
আসটি বর্তমান সংসদ সদস্য জাতীয় সংসদের সাবেক হুইপ সাবেক রেলমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা মুজিবুল হক এবারও মনোনয়ন চেয়েছেন। তবে তার শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বীর মধ্যে বীর মুক্তিযোদ্ধা বাহার রেজা বীরপ্রতীক ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতা তমিজউদ্দীন সেলিমের আলোচনা চলছে। এ ছাড়া সাবেক মেয়র মিজানুর রহমান এবং উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুস সোবহান ভূইয়ার আলোচনাও রয়েছে।
গত শনিবার থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত চার দিনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রি হয়েছে ৩ হাজার ৩৬২টি। এরপর প্রার্থী চূড়ান্ত করতে বৃহস্পতিবার থেকে একাধিক বৈঠক করছে সংসদীয় দল।
কাল রোববার ২৬ নভেম্বর ২০২৩ সকাল ১০টায় গণভবনে এই সভা হবে। এতে সভাপতিত্ব করবেন আওয়ামী লীগ ও সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের সভাপতি শেখ হাসিনা। মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সঙ্গে শেখ হাসিনার মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হবে। গতকাল দলটির দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় সূত্রে জানা যায় দলীয় মনোনয়ন না পেলে স্বতন্ত্রভাবে প্রার্থী দাঁড়ানোর সুযোগ নেই। এ ব্যাপারে দলীয় নির্দেশনা রয়েছে।
সম্পাদক ও প্রকাশক: কামরুজ্জামান জনি
Copyright © 2025 Muktirlorai | মুক্তির লড়াই. All rights reserved.