সৈয়দ রোকনুজ্জামান, নবাবগঞ্জ (দিনাজপুর) সংবাদদাতাঃ দিনাজপুরের নবাবগঞ্জে সরকারি দুই শতাধিক বিশাল আকৃতির গাছ কেটে নিয়ে বিক্রি করেছেন স্থানীয় বিএনপি নেতা ইউপি সদস্য কবিরুল ইসলাম ওরফে কবির খোড়া। এ বিষয়ে প্রতিবাদ করতে গেলে কয়েকজনকে মারধরের হুমকি দেওয়ারও অভিযোগ উঠেছে ওই নেতার বিরুদ্ধে। আজ মঙ্গলবার (১০ জানুয়ারি) অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নবাবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার সংশ্লিষ্ট উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি)ও থানার অফিসার ইনচার্জকে নির্দেশ দিয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের বিনা অনুমতিতে অবৈধভাবে পুটিমারা ইউনিয়ন যুবদলের সভাপতি ও ইউপি সদস্য কবির প্রভাব খাটিয়ে তার নির্দেশনা ও পরিকল্পনায় সে নিজে উপস্থিত থেকে তার লোকজনকে দিয়ে গত ২৬ ডিসেম্বর ২০২২ হতে ৩১ ডিসেম্বর ২০২২ পর্যন্ত উক্ত সরকারি গাছগুলো কর্তন করে বিক্রি করে দেন। এছাড়া আরো বেশ কিছু সরকারি গাছ চুরি করে ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে লুকিয়ে রেখেছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি কয়েকদিন ধরেই প্রশাসন ও সাংবাদিকদের কাছে এমন অভিযোগ করতে থাকলে সরেজমিন অনুসন্ধান করে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে।
স্থানীয় ও অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার শালখুরিয়া ইউনিয়নের অন্তর্গত দলা মৌজার দলা গ্রামের চাপড়া নামক স্থানে (বানে বাগান/ছোট তুলসী গঙ্গা নদীর পাড়) সরকারি খাস খতিয়ানভুক্ত জায়গায় রোপিত দুই শতাধিক বিশাল আকৃতির ইউক্যালিপটাস গাছ যাহার মূল্য আনুমানিক ৫০০০০০ টাকা হতে ৫৫০০০০ টাকা হতে পারে কর্তন করা হয়েছে। উক্ত গাছগুলো কর্তন করেন ১। মোঃ কবিরুল ইসলাম ওরফে কবির খোড়া, পিতা মৃত আতাফ উদ্দিন আতা, গ্রাম পরানদিঘী, ২। আবুল বাশার ওরফে গাঞ্জা বাসার, পিতা মৃত আবুল কালাম মন্ডল, গ্রাম মতিহারা, উভয় পোস্ট মতিহারা, ৫ নং পুটিমারা ইউনিয়ন, উপজেলা নবাবগঞ্জ, জেলা দিনাজপুরসহ আরো ২০-২৫ জন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি। ১ নং কবিরুল ইসলামের বাড়ি উক্ত গাছ কর্তনের জায়গার নিকটে। সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের বিনা অনুমতিতে উক্ত গাছগুলো কর্তন করে বিক্রি ও চুরির ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চলের সৃষ্টি হয়েছে।
নবাবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার এমএম আশিক রেজা বলেন, জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে এসিল্যান্ড ও থানায় অভিযোগের কপি প্রেরণ করা হয়েছে। সরকারি গাছ কেটে বিক্রির এ ঘটনায় প্রচলিত আইনে মামলা হবে বলেও তিনি জানান।
উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) কামরুজ্জামান সরকার সাংবাদিকদের জানান, এ ঘটনায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এর আগে ঘটনার সময় সরকারি গাছ কাটার খবর পেলে তিনি অন্য একটি উপজেলায় নির্বাচনী দায়িত্বে থাকায় সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের তহশিলদারকে তাৎক্ষণিক বিষয়টি দেখতে দায়িত্ব দিয়েছিলেন।
শালখুরিয়া ইউনিয়নের সহকারী ভূমি কর্মকর্তা (তহশিলদার) ফরিদ আহম্মদ বলেন, ঘটনাস্থল থেকে ৭ টি গাছ উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছি। দুই শত কাটা সরকারি গাছের মধ্যে মাত্র ৭ টি গাছ উদ্ধার করেছেন, বাকি কাজগুলো গেল কোথায়? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, স্থানীয় ইউপি সদস্যদের সাথে নিয়ে একজন ওই জমির মালিকানা দাবী করে গাছ গুলো কেটে নিয়ে গেছেন। গাছগুলো যদি ব্যক্তি মালিকানাধীন হয়, তবে এর স্বপক্ষে পর্যাপ্ত দলিল আপনার দেখা উচিত কিনা, দেখেছেন কিনা, তাছাড়া আপনি নিজেও একজন সংশ্লিষ্ট ইউপির সহকারী ভূমি কর্মকর্তা: ওই জায়গা সরকারের কিনা এবং তা নিশ্চিত হতে জায়গা মেপেছেন কিনা? -প্রতিবেদকের এমন প্রশ্নের সন্তোষজনক কোন উত্তর দিতে পারেননি ইউনিয়ন সহকারী ওই ভূমি কর্মকর্তা। পরে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার নির্দেশে গত ৫ জানুআরি ঘটনাস্থলে এসে জায়গা মাপেন সার্ভেয়ার।
সার্ভেয়ার বেলাল হোসেন বলেন, অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। জায়গা মাপা হয়েছে। তবে একজন জায়গার কিছু অংশের মালিকানা দাবি করলেও রেকর্ড পত্র দেখাতে পারছেন না।
স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, তহশিলদার মোঃ ফরিদ আহম্মদ উক্ত সরকারি গাছ কর্তন ঠেকাতে কোন পদক্ষেপ না নিয়ে উল্টো জড়িতদের থেকে উৎকোচের বিনিময়ে প্রথমে ২ ট্রাক ও পরে ১ ট্রলি ভর্তি সরকারি গাছগুলো কর্তনকারীদের অন্যত্র নিয়ে বিক্রয়ের সুযোগ করে দেন। ফলে উক্ত ব্যক্তিরা সরকারি গাছগুলো কেটে নিয়ে আতœসাতের সুযোগ পায়।
এদিকে ৩১ ডিসেম্বর- ২০২২ ইং খবর পেয়ে পুলিশ চেষ্টা চালিয়েও সরকারি গাছ পাচার ঠেকাতে ব্যর্থ হয়। পুলিশ বলছে, ওই দিন রাতেই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে। ঘটনাস্থলে পড়ে থাকা আরো কিছু কাটা গাছ পুটিমারা ইউপির অপর এক ইউপি সদস্যের জিম্মায় রাখা হয়েছে। কাটা গাছ ও গাছগুলোর বিদ্যমান গোড়াগুলির ভিডিও করা হয়েছে বলেও জানান ঘটনাস্থলে পরিদর্শনে আসা সংশ্লিষ্ট থানার এক এসআই।
অভিযুক্তদের বক্তব্য নিতে তাদের বাড়ি গেলেও দেখা মেলেনি। পরে একাধিকার ফোন করলে তাদের নাম্বার বন্ধ পাওয়া যায়। ফলে প্রতিবেদনে তাদের বক্তব্য যুক্ত করা সম্ভব হয়নি। তবে, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রতিবেশীদের ভাষ্যমতে, অভিযুক্তরা গণমাধ্যমের সামনে আসতে চান না। সরকারি গাছ কেটে বিক্রি ও চুরির দায় থেকে বাঁচতে বিভিন্ন জায়গায় ছোটাছুটি করছেন।#
সম্পাদক ও প্রকাশক: কামরুজ্জামান জনি
Copyright © 2024 Muktirlorai | মুক্তির লড়াই. All rights reserved.