শরীয়তপুর প্রতিনিধি
শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলায় একটি সাঁকোকে কেন্দ্র করে এক অন্তঃসত্ত্বা নারী ও তার পরিবারের সদস্যদের প্রতিপক্ষের লোকজন পিটিয়ে আহত করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এ ঘটনায় মামলা করতে গেলে পুলিশ মামলা না নিয়ে উল্টো ওই নারীর স্বামী ও স্থানীয় এক জনপ্রতিনিধিকে ৫ ঘন্টা থানায় আটকে রাখে।
আজ (২৪ জুন) সোমবার সকাল দশটায় শরীয়তপুর জেলা সদরের এক মিডিয়া হাউজে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ভুক্তভোগী পরিবার এ অভিযোগ করেন।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন নড়িয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, নড়িয়া উপজেলার বিঝারী ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ড ডেমেরগাঁও গ্রামের প্রবাসী জসিম মৃধার সাথে একই এলাকার ফারুক মৃধা ও তার লোকজনের একটি সাঁকোকে কেন্দ্র করে বিরোধের সৃষ্টি হয়।
এ নিয়ে গত ১৮ জুন রাত সাড়ে আটটার দিকে দু’পক্ষের মধ্যে ঝগড়াঝাটি ও মারামারির ঘটনা ঘটে।
এ সময় ফারুক মৃধা, হৃদয় মৃধা, খালেক মৃধা, শাকিল মৃধা, দেলু বেপারী সহ ১০ থেকে ১৫ জন মিলে প্রবাসী জসীম মৃধা, জসিম মৃধার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী ফাতেমা আক্তার রুপা, মা জনি বেগম ও ছেলে সালমান মৃধা পিটিয়ে আহত করেন।
সংবাদ সম্মেলনে জসিম মৃধা অভিযোগ করে বলেন, ফারুক মৃধা ও তার লোকজন জোরপূর্বক আমাদের জায়গা দিয়ে যাতায়াতের জন্য বাশের সাঁকো তৈরি করতে চাইলে আমরা বাঁধা দেই। এতে তারা আমাদের ওপর ক্ষিপ্ত হয়। কোরবানির ঈদের পরের দিন রাত সাড়ে আটটার দিকে আমি আমার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে ডাক্তার দেখিয়ে বাড়ি পৌঁছানোর সাথে সাথে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে ফারুক মৃধা ও তার লোকজন লাঠিসোঠা নিয়ে আমাদের উপর হামলা করে। তারা আমার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী, বৃদ্ধ মা, আমার ছেলে ও আমাকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করে।
জসিম মৃধা বলেন, এ ঘটনায় মামলা করার জন্য আমি ও আমার স্ত্রী আহত অবস্থায় জনপ্রতিনিধি হিসেবে স্থানীয় ইউপি সদস্য আক্কাস ছৈয়ালকে সাথে নিয়ে ওইদিন রাত সাড়ে ৯টার দিকে নড়িয়া থানায় যাই। কিন্তু থানার ওসি আমাদের মামলা না নিয়ে উল্টো আমাদের অকথ্য ভাষায় গালাগালি করে। পরে আমি আমার স্ত্রীকে নিয়ে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার জন্য রওয়ানা দেই। ভোজেশ্বর বাজার পর্যন্ত পৌঁছলে থানা থেকে আমাকে ফোন দিয়ে বলা হয়, আপনি থানায় আসেন, আপনার মামলা নেয়া হবে। থানা থেকে ফোন পেয়ে আমার স্ত্রীকে সেখানে রেখে সাথে সাথে আমি থানায় যাই। মামলা নেয়ার কথা বলে ফোন করে থানায় নিয়ে আমাকে ও ইউপি মেম্বার আক্কাস ছৈয়ালকে ৫ ঘন্টা থানায় আটকে রাখে। পরে রাত তিনটার দিকে থানা থেকে ছাড়া পেয়ে আমি আমার স্ত্রীকে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করি।
জসিম মৃধা বলেন, থানায় মামলা না নেয়ায় পরে আমি কোর্টে গিয়ে এ বিষয়ে মামলা দায়ের করেছি। আমার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী এখনো শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। আমি এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই।
সংবাদ সম্মেলনে জসিম মৃধা, জসিম মৃধার স্ত্রী ফাতেমা আক্তার রুপা ও মা জনি বেগম উপস্থিত ছিলেন।
এ বিষয়ে বিঝারী ইউনিয়নের ৫ নন্বর ওয়ার্ডের সদস্য আক্কাস ছৈয়াল বলেন, ফারুক মৃধা ও তার লোকজন জোরপূর্বক জসিম মৃধার জায়গা দিয়ে সাঁকো নির্মাণ করতে গেলে জসিম মৃধা বাঁধা দেন। এতে ফারুক মৃধা ও তার লোকজন ক্ষিপ্ত হয়ে পূর্বপরিকল্পিতভাবে জসিম মৃধা ও তার পরিবারের সদস্যদের উপর হামলা চালায়। এতে জসিম মৃধার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী গুরুতর আহত হন। জসিম মৃধা তার আহত স্ত্রী ও আমাকে নিয়ে নড়িয়া থানায় থানায় মামলা করতে গেলে থানার ওসি মুস্তাফিজুর রহমান মামলা না নিয়ে উল্টো জসিমকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করে।
এ সময় আমি জসিমকে এসপি স্যারের কাছে গিয়ে অভিযোগ করার জন্য পরামর্শ দেই। পরে জসিম তার স্ত্রীকে হাসপাতালে ভর্তি করানোর জন্য শরীয়তপুর সদরের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন। তখনও আমি থানায় ছিলাম। পরে জসিমকে ফোন দিয়ে থানায় এনে আমাকে ও জসিম ৫ ঘন্টা থানায় আটকে রাখে। তখন ওসি মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, তোদের এত বড় সাহস, তোরা আমার বিরুদ্ধে এসপি স্যারের কাছে অভিযোগ করতে চাস। পরে রাত তিনটার দিকে আমরা থানা থেকে ছাড়া পাই। ওসি মুস্তাফিজুর রহমান আমাদের সাথে ক্ষমতার অপব্যবহার করেছে।
অভিযুক্ত ফারুক মৃধা বলেন, আমরা যাতায়াতের জন্য খালের উপর একটি সাঁকো তৈরি করতে গেলে জসিম মৃধা ও তার লোকজন আমাদের বাঁধা দেয়। এ নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে কথা কাটাকাটি ও সামান্য হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে। পরে বিষয়টি মীমাংসা হয়ে গেছে।
এ বিষয়ে নড়িয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ৫ ঘন্টা থানায় আটকে রাখার অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। একটি সাঁকোকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষ মারামারি করেছে। এতে তেমন কেউ আহত হয়নি। এটা একটা সিম্পল ঘটনা। তারপরও আমি বলেছি আপনারা অভিযোগ দেন ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পরে শুনি তারা মীমাংসা হয়ে যাবে। মামলা না নেওয়া বা আটকে রাখার বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
এ বিষয়ে শরীয়তপুরের পুলিশ সুপার মো. মাহবুবুল আলম বলেন, আমি এ বিষয়ে কিছুই জানিনা। লিখিত অভিযোগ পেলে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।
সম্পাদক ও প্রকাশক: কামরুজ্জামান জনি
Copyright © 2025 Muktirlorai | মুক্তির লড়াই. All rights reserved.