সৌরভ মাহমুদ হারুন, ব্রাহ্মণপাড়া (কুমিল্লা)
কুমিল্লার নিমসার কাঁচাবাজারে সরকার নির্ধারিত টাকার কয়েকগুণ অতিরিক্ত খাজনা আদায়ে দিশেহারা তরিতরকারি নিয়ে আসা কৃষক,বিক্রেতারা। পরবর্তীতে খুচরা বাজারগুলোতে যার প্রভাবে সাধারন মানুষও বাড়তি দামে এসব পণ্য কিনতে বাধ্য হচ্ছে। দিনের পর দিন এই অব্যবস্থাপনা চলে আসলেও উপজেলা প্রশাসন, বাজার মনিটরিং কমিটির কোনই খেয়াল নেই। আর এভাবেই প্রতি মাসে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে বাজার ইজারাদার।
জাতীয় প্রধান ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার মোকাম ইউনিয়নের নিমসার এলাকায় দেশের অন্যতম বৃহৎ পাইকারী কাচাঁমালের নিমসার বাজারটির অবস্থান। উপজেলা প্রশাসন কর্তৃক নির্ধারিত স্থানের বাইরে মহাসড়কের কোল ঘেষে সড়ক ও জনপথ বিভাগের নিজস্ব জায়গা ও সড়কের দু’পাশের ব্যক্তি মালিকানাধীন জায়গার উপর গড়ে উঠা বাজারটি প্রায় এককিলোমিটার পূবে-পশ্চিমে বিস্তৃত। শত শত পাইকার আড়ৎসহ কয়েক হাজার খুচরা বিক্রেতা বেচাকেনা করে। আছে ভাসমান আরো অসংখ্য দোকান।
প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলাসহ পাশ^বর্তী ভারত থেকেও নানাজাতের মাছ, শাক-সব্জি, তরিতরকারি, মৌসুমীসহ বারোমাসি ফল, নিত্য প্রয়োজনীয় অন্যান্য পণ্য সামগ্রী বিক্রির জন্য নিয়ে আসছে কৃষক, ব্যবসায়ী বা মধ্যস্বত্ত্বভূগীরা। রাত যত গভীর হয় বাজারের ব্যস্ততাও তত বাড়তে থাকে। আবার দিনের আলো বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাজারের ব্যস্ততাও কমতে থাকে।
কুমিল্লার বিভিন্ন উপজেলাসহ সারাদেশ থেকে ট্রাক, কাভার্ডভ্যান, কন্টেইনার, পিক-আপ, মিনিট্রাক, ট্রাক্টর, সিএনজি অটোরিক্সা, ইজিবাইক, নসিমন, করিমন, রিক্সা, সাইকেলযোগে কাঁচাবাজারের খাবার ও মানুষের ব্যবহারের প্রয়োজনীয় যতোসব পণ্য উৎপাদিত হয় তার সবগুলোই কেনা-বেচা হয় এই বাজারে। কখনো ট্রাক,কাভার্ডভ্যান বা কন্টেইনার থেকে সড়কের উপর দাড় করিয়েই অন্য গাড়িতে মালামাল লোডিং আনলোডিং হলেও এসব পণ্যের বেশীর ভাগই আড়তে ঠাই হয়।
তবে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত তরিতরি, শাকসব্জি বা ছোট আকারের ব্যবসায়ীরা ছোট আকারের অস্থায়ী দোকান বা সড়কের পাশে খোলা আকাশের নীচে উন্মুক্ত স্থানে দাড়িয়ে বিক্রি করছে। পরবর্তীতে আবার কুমিল্লার সবগুলো উপজেলা, মহানগরীসহ আশপাশের ঢাকা, চাঁদপুর, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষèীপুরসহ বিভিন্ন স্থান থেকে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা কখনো একা কখনোবা দলবদ্ধ হয়ে এসব পণ্য পাইকারী মুল্যে ক্রয় করে নিয়ে যাচ্ছে স্থানীয় পর্যায়ে খুচরো বাজারে বিক্রির জন্য।
সরেজমিন বাজার ঘুরে পাওয়া তথ্যে জানা যায়, আড়তদাররা প্রতিদিন ঘর পিছু এক বা দু’শ টাকা খাজনা দিলেও প্রতিটি ট্রাক বা কাভার্ডভ্যান থেকে চাহিদার গুরুত্ব বুঝে মালামাল অন্য ট্রাক বা কাভার্ডভ্যানে উঠা-নামানোতে ২-৩ হাজার টাকা খাজনা আদায় করছে। কাঁচামরিচ, লেবু, বিভিন্ন ফলমুল, টমেটোসহ বাজারে চাহিদা থাকা অন্যান্য পণ্য বস্তা বা প্লাষ্টিকের ঝুড়ি প্রতি অতিরিক্ত নির্দিষ্ট হারে খাজনা আদায় করছে। এক্ষেত্রে আম প্রতি ঝুঁড়ি ১০ টাকা, শাল শাক, পালং শাক মোঠা প্রতি ২ টাকা, লেবু এক বস্তা ৪০ টাকা, চালের বস্তা ৬০ টাকা, সব্জি প্রতি কেজি ২ টাকা, প্রতিটি মুরগীর দোকান ৫০ টাকা দিতে বাধ্য হচ্ছে। এতে বাবসায়ীরাও পরবর্র্তীতে পাইকারদের কাছে অতিরিক্ত মুল্যে মালামাল বিক্রি করছে। যার প্রভাব খুচরা বাজারগুলোতে ক্রেতাদের উপর পড়ছে। আর এভাইে বাজারটিতে আড়ৎদার প্রথম দুর-দুরান্ত থেকে আসা ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে পণ্যে কেনা বাবদ প্রথম দফা পরবর্তীতে পাইকাররা সেই পণ্য কিনে নিয়ে যাওয়ার সময় আরেক দফা মোট দু’দফা খাজনা নিচ্ছে ইজারাদার।
আর এই খাজনা আদায়ের ধরন হচ্ছে,বড় ট্রাক ৪’শ/৫’শ,মাঝারি ট্রাক পণ্য ভেদে ৩’শ/৪’শ, ছোট ট্রাক ২’শ/৩’শ ভ্যানগাড়ি ১’শ / ২’শ, সিএনজি অটোরিক্সা ১’শ/২’শ, স্থানীয় কৃষকের উৎপাদিত বিভিন্ন শাক-সব্জি কেজি প্রতি ১ টাকা কওে নিচ্ছে, যা সরকার নির্ধারিত খাজনার টাকার অতিরিক্ত। এরই মাঝে কথা হয় রংপুর থেকে পণ্যনিয়ে আসা সাহেব আলী নামের এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে। তার বক্তব্য, ইজারাদারের লোক যা চাইবে সেই পরমান খাজনা দিতে হবে। ফলে নিমসার বাজারের কেনা-বেচা পণ্যের সাথে জেলা সদরের বিভিন্ন বাজারের খুচরা মুল্য আকাশ-পাতাল তফাৎ লক্ষ্য করা যায়।
জেলা প্রশাসনের দায়িত্বশীল একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, সরকার প্রতিটি পণ্যের আকার, পরিমান নির্দিষ্ট করে খাজনার পরিমান নির্ধারন করে দিলেও নিমসার বাজারে ইজারাদার ও তাদের লোকজন সরকারী নিয়মনীতির কোন তোয়াক্কা করেন না। সম্প্রতি বাজারে উপজেলা প্রশাসন থেকে পণ্যের খাজনা প্রদানের তালিকা ঝুলিয়ে দিলেও ইজারাদার ও তার লোকজনের সেদিকে কোন ভ্রক্ষেপই নেই।
সরকার আনারস প্রতি ট্রাক (বড়) ৩৮ টাকা, আম ৩৬ টাকা, কলা ৩৩ টাকা, বিভিন্ন ফল-মুলের বড় দোকান ১৫ টাকা, তরিতরকারীর বড় দোকান ১৮ টাকা, কচুর লতি, মুখী বড় দোকান ১২ টাকা, লিচু, তরমুজ, আমড়াসহ বিভিন্ন মৌসুৃমী ফল প্রতি ট্রাক (বড়) ৩৮ টাকা নির্ধারন করলেও ইজারাদার তাদের ইচ্ছে মতো কখনোবা ১০/২০ গুণ বেশী খাজনা আদায় করছে। বিষয়টির প্রতি দৃষ্টি আকর্ষন করলে ইজারাদার হুমায়ুন কবির বলেন, আমরা অতিরিক্তটাকা নেই না। আগের চেয়ে কম নেই।
অতিরিক্ত খাজনা আদায়ের বিষয়ে বুড়িচং উপজেলা নির্বাহী অফিসার তানভীর হোসেন জানান, স্থানীয় ভূমি কর্মকর্তাকে বিষয়টি দেখার জন্য নির্দেশনা দেওয়া আছে।
সম্পাদক ও প্রকাশক: কামরুজ্জামান জনি
Copyright © 2025 Muktirlorai | মুক্তির লড়াই. All rights reserved.