মোঃ ময়নুল ইসলাম, পঞ্চগড়
পঞ্চগড়ে বিগত সরকারের আমলে নির্মিত ২ শতাংশ জমির উপর আশ্রয়ণ প্রকল্প ২ এর ঘর গুলোর বেহাল দশা। নির্মাণে ব্যাপক অনিয়মের কারনে আশ্রয়ণের ঘরের বেহাল দশা দেখা দিয়েছে।
জানা গেছে, এই সব ঘর প্রতি সরকারি বরার্দ্দ ছিলো ২ লক্ষ ৯০ হাজার টাকা। কিন্তু ঘর গুলো মাত্র এক বছরের মাথায় ফেটে চৌচির হয়ে গেছে, জানালা-দরজা খুলে পরেছে, ঘরের রোয়া বাতাসহ নির্মাণ সামগ্রী নিম্ন মানের হওয়ায় ঘরের ভেতরে পরছে পানি।
এছাড়াও নিচু জমিতে ঘর নির্মাণ করে পরবর্তীতে মাটি ভরাট করার কারণে ঘর গুলো মাটির নিচে পুতে গেছে অল্প বৃষ্টি এলেই বারান্দা পানিতে ভেসে যায়।
এমন তো অবস্থায় ঘরে থাকতে না পেরে অনেকে ঘর ছেড়ে বা বিক্রি করে, চলে গেছেন পুর্বের ঠিকানা ভাড়া বাসায়। পঞ্চগড় হাফিজাবাদ ইউনিয়নের গারাতি রাজমহল, ও হাড়িভাসা ইউনিয়নের ঢোলো পুকুরি আশ্রয়ণ প্রকল্পের ভুক্তভোগীদের কথা অনুযায়ী সরেজমিনে গিয়ে দৃশ্যমান ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেছে।
অধিকাংশ ঘরে ব্যাপক হাড়ে ফাটল দেখা দিয়েছে, এছাড়াও অসহায় বাসিন্দারা নলকুপের অভাবে পাচ্ছে না ঠিকমত পানি। তাদের অভিযোগ তিন চার বাড়ি মিলে একটি নলকুপ দেয়া হয়েছে।
এতে করে প্রতিদিন ঝগড়াবিভেদ লেগেই থাকে তাদের মধ্যে।
বিশেষ সুত্রে জানা যায় এসব ঘর পরিচালনায় ছিলেন পঞ্চগড় সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার কিন্তু ঘর গুলোর রক্ষণাবেক্ষণ এর দায়িত্বে ছিল পঞ্চগড় উপজেলা (পিআইও) অফিসের আউটসোর্সিং এর কর্মরত মোঃ আবু হানিফ।
নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক ঘর নির্মাণ মিস্ত্রি আবু বক্কর, এর সহযোগী মিস্ত্রি ও স্থানীয় মানুষেরা জানান, বক্কর মিস্ত্রি, তার ইচ্ছা মতো এসব ঘরের কাজ করেছে। ঘরের দেখভালকারী আবু হানিফ, ও বক্কর মিস্ত্রি এই দুইজন মিলেই এসব ঘর নির্মাণ দায়িত্বে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ছিলেন।
আবু বক্কর, মিস্ত্রির অ্যাসিস্ট্যান্ট শরিফুল ইসলাম, বলেন বক্কর মিস্ত্রি রাতের আঁধারে এসব ঘরের রড, সিমেন্ট, ইট পাথর সবার অজান্তে বিক্রি করেছেন।
এছাড়াও বক্কর তার বাসায় নিয়ে মাটির নিচে পুতে রেখে উপরে খর দিয়ে ঢেকে রেখেছে যাতে করে কেউ খোঁজে না পায়। শরিফুল বলেন আমি নিজের হাতেই এসব রড মাটির নিচে পুতে রাখতে সহযোগিতা করেছি। কিন্তু ওই হারামখোর আমার কাজের মজুরি পর্যন্ত আটকিয়ে রেখেছে এখনো দেয় নাই।
এ বিষয়ে আমি থানায় অভিযোগ করলে উপর মহলের টেলিফোনে আসলে আমাকে ন্যায্য বিচার থেকে বঞ্চিত করা হয়। উল্টো আমাকে মারার জন্য বক্কর মিস্ত্রি, হায়ার করা লোকজন সাথে নিয়ে এসেছিলো।
পরে আমি সাংবাদিকদের শরণাপন্ন হই এবং বক্কর মিস্ত্রির কুকর্মের কথা তাদের কাছে খুলে বলি। এছাড়াও বক্কর মিস্ত্রির, কুকর্মের কথা উপর মহলে বলতে গিয়ে আমাকে চড় থাপ্পর খেতে হয়েছে। বর্তমান খোঁজ নিলে দেখা যাবে বক্কর মিস্ত্রি, এসব অবৈধ টাকা দিয়ে বিভিন্ন এলাকায় নামে বেনামে জমি ক্রয় করে রেখেছে।
এসব অসাধু ব্যক্তিদের জন্য এখন অসহায়দের আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর গুলোর বেহাল দশায় পরিণত হয়েছে।
এসব অসহায় ভূমিহীনদের ঘরের নির্মাণ সরঞ্জাম আত্মসাৎ কারী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে তদন্তের মাধ্যমে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জোর দাবি জানান সুশীল সমাজ ও ভুক্তভোগীরা।
এ বিষয়ে বক্তব্য চাইতে বক্কর মিস্ত্রী বলেন, আমি একাই ৩ শত ঘর নির্মাণ কাজ পেয়েছি। আশ্রম প্রকল্পে ২ এর ঘর নির্মাণে ৬০ বস্তা সিমেন্ট বরাদ্দ ছিল। তবে রড এর কথা আমি বলতে পারব না। আমাকে যতটুকু রড দিয়েছে আমি ততটুকু রড দিয়েই কাজ করেছি।
পঞ্চগড় সদর উপজেলা প্রশাসনিক কর্মকর্তা মোঃ আব্দুর রশিদ এ বিষয়ে বক্তব্য দিতে অশিকার করেন।
এছাড়াও আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘরগুলো ফেটে যাওয়ার বিষয়ে পঞ্চগড় সদর উপজেলার বর্তমান নির্বাহী অফিসার মোঃ জাকির হোসেন, এর সাথে কথা হলে তিনি বলেন এসব ঘর নির্মাণের সময় আমি ছিলাম না, তাই এ ব্যাপারে আমি কোন কিছু বলতে পারছি না।
আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘর ভেঙ্গে যাওয়ার বিষয়টি নিয়ে বর্তমান জেলা প্রশাসক মোঃ সাবেত আলী বলেন, দূর্নিতী ও অনিয়ম যারা করেছে তাদের অনিয়মের প্রমাণ পাওয়া গেলে অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সম্পাদক ও প্রকাশক: কামরুজ্জামান জনি
Copyright © 2025 Muktirlorai | মুক্তির লড়াই. All rights reserved.