ডেস্ক রিপোর্ট
পাঁচ বছর ওমানে কাটিয়ে কুমিল্লার দাউদাকান্দি উপজেলার ইলিয়টগঞ্জ উত্তর ইউনিয়নের চারিপাড়া গ্রামের বাসিন্দা মহিন উদ্দিন দেশে ফেরার পর তিন বছর নিরুদ্দেশ থাকার পর জানা গেল তার অন্তর্ধান রহস্য।
পরিবার ভেবেছিল এই তরুণ মারা গেছেন। তবে পুলিশের তদন্ত সংস্থা পিবিআই জানতে পেরেছে, এক নারীর সঙ্গে বিয়েবহির্ভুত সম্পর্কে জড়িয়ে আত্মপোগনে যান মহিন। পরে সেই নারীকে বিয়েও করেন।
ছেলেকে খুঁজে না পেয়ে পাগলপ্রায় বাবা এখন হতাশ, বলেছেন, ‘এমন ছেলেকে’ খুঁজে বের না করাই ভালো ছিল।
পিবিআই ও স্বজনরা জানান, মাহিন ২০১৫ সালে ওমানে গিয়ে বাড়িতে থাকা স্ত্রী, সন্তান ও অন্য স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ কমিয়ে দেন। ২০২০ সালের ২০ অক্টোবর তার দেশে ফেরার তথ্য পেয়ে বাবা আব্দুল মতিনসহ অন্যরা তাকে স্বাগত জানাতে বিমানবন্দরে যান। কিন্তু তাকে খুঁজে পাওয়া যায়নি।
এরপর রাজধানীর বিমানবন্দর থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন তার বাবা। কিন্তু কিছু জানাতে পারছিল না পুলিশ। স্বজনরা ভাবেন, মহিন বুঝি আর বেঁচে নেই।
তবে হাল না ছেড়ে বাবা আব্দুল মতিন যোগাযোগ করেন পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন বা পিবিআই প্রধান বনজ কুমার মজুমদারের সঙ্গে।
পিবিআই প্রধান সংস্থাটির কুমিল্লা জেলা শাখার প্রধান মিজানুর রহমানকে তদন্তের নির্দেশ দেন। তিন বছরের চেষ্টার পর মহিনকে উদ্ধার করার পর জানা গেলে তার অন্তর্ধান রহস্য।
পিবিআইয়ের ভাষ্য, মহিন তাদেরকে বলেছেন, তিনি স্ত্রী-সন্তান রেখে এক নারীর প্রেমে পড়েন। দেশে ফিরে তার কাছেই চলে যান। পরে বিয়ে করে পাতেন সংসার।
বুধবার কুমিল্লা পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান জানান, আগের রাতে ঢাকার মোহাম্মদপুরের বসিলায় একটি পোশাক কারখানায় কাজ করার সময় মাহিনকে খুঁজে পান তারা।
রাতেই তাকে কুমিল্লায় নিয়ে আসা হয়। এরপর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তুলে দেওয়া হয় পরিবারের হাতে।
এ সময় মহিনের বাবা, প্রথম স্ত্রী-সন্তান এবং দ্বিতীয় স্ত্রী ও তার পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
পিবিআই কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, “তথ্য-প্রযুক্তিসহ বিভিন্ন মাধ্যমে অনুসন্ধান করে আমাদের পুলিশ পরিদর্শক মোহাম্মদ হিলাল উদ্দীন আহমেদসহ পিবিআই সদস্যরা ঢাকা থেকে তাকে উদ্ধার করে।”
পিবিআইয়ের পরিদর্শক হিলাল উদ্দীন আহমেদ বলেন, “মহিনকে উদ্ধারের পর তার দ্বিতীয় স্ত্রী ফাহমিদা রহমান মিমিও আমাদের সঙ্গে স্বেচ্ছায় কুমিল্লায় আসেন। মিমি ও মাহিন গার্মেন্টসে চাকরি করতেন।”
মাহিনের মতো মিমিরও এটা দ্বিতীয় বিয়ে। তারও প্রথম সংসারে একটি বাচ্চা রয়েছে। অন্যদিকে মহিনের প্রথম সংসারের ছেলের বয়স এখন হয়েছে ৯ বছর।
মহিন পিবিআইকে জানান, বিদেশে থাকার সময় সামাজিক মাধ্যমে মিমির সঙ্গে তার পরিচয় ও প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তাকে বিয়ে করতেই দেশে ফেরেন। প্রথম স্ত্রী এবং বাবা-মা এটি মেনে নেবেন না ভেবে নিরুদ্দেশ হয়ে যান।
মহিনের বাবা আব্দুল মতিন বলেন, “ভেবেছিলাম ছেলে আর বেঁচে নেই। কিন্তু ভাবিনি আমার ছেলে এতটা পাষণ্ড হবে।”
ছেলের দ্বিতীয় বিয়ে মেনে নিতে পারছেন না তিনি। বলেন, “ভাবিনি আমার ছেলে এমন ঘটনা করতে পারবে। এখন মনে হচ্ছে এমন ছেলেকে খুঁজে না বের করাই ভালো ছিল।”
সম্পাদক ও প্রকাশক: কামরুজ্জামান জনি
Copyright © 2025 Muktirlorai | মুক্তির লড়াই. All rights reserved.