মাহফুজুর রহমান, মুরাদনগর (কুমিল্লা)
ঈদ মানে আনন্দ, ঈদ মানেই খুশি, ঈদের সেই আনন্দ সকলের মাঝে ছড়িয়ে দেয়ার লক্ষ্যে এলাকার কিশোররা ঈদের পরদিন আয়োজন করে একটি ফুটবল খেলার। কে জানতো ঈদের আনন্দে আয়োজন করা খেলা নিয়েই বিপদ নেমে আসে দুটি গ্রামে।
ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট ঘটনায় দুইটি গ্রামে সহিংস রুপ ধারন করেছে। খেলা নিয়ে এই দ্বন্দ্বের জের ধরে এক সৌদিআরব প্রবাসীর ভাইকে গণপিটুনি দিয়ে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। গণপিটুনীর একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে এলাকায় ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। স্থানীয় বাসিন্দাদের মাঝে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। (৩রা এপ্রিল) রবিবার কুমিল্লা জেলার মুরাদনগর উপজেলার রামচন্দ্রপুর দক্ষিণ ইউনিয়নের কৈজুরী গ্রামে এই ঘটনা ঘটে।
গণপিটুনির শিকার বশিরুল ইসলাম(২৮) আশংকাজনক অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এসময় বশিরুল ইসলামের বাবা আবদুর রহিম (৬০) ও চাচা আবদুল লতিফ (৬৩) আহত হয়। আহতরা সকলে কৈজুরী গ্রামের বাসিন্দা। উভয়পক্ষ থেকেই থানায় পৃথক দুটি অভিযোগ দেয়া হয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা এরশাদ মিয়া জানান, ঈদের পরের দিন কৈজুরী গ্রামের কিশোর ছেলেরা গ্রামের মাঠে একটি ফুটবল খেলার আয়োজন করে। সেই খেলা চলাকালে আমাদের পাশের গ্রাম সোনাকান্দা থেকে খেলা দেখার জন্য কিছু ছেলে আসে। খেলা চলাকালে একটি কর্নার কিক থেকে গোল হয়।
রেফারি গোলটিকে সঠিক বললেও খেলা দেখতে আসা সোনাকান্দা গ্রামের ছেলেরা গোল হয়নি বলে চিৎকার চেচামেচি শুরু করে। এসময় স্থানীয় হাবিব মিয়া বহিরাগত ছেলেদের কথা বলতে বারন করায় তারা ক্ষিপ্ত হয়ে হাবিব মিয়াকে মারতে তেড়ে আসে। এসময় মাঠে খেলতে থাকা ছেলেরা এগিয়ে আসে। এসময় দুই গ্রামের ছেলেদের মাঝে হাতাহাতি ও মারামারি ঘটনা ঘটে। এই মারামারি ঘটনার জের ধরে সোনাকান্দা গ্রামের সবাই মিটিং করে কৈজুরী গ্রামের মানুষদের দেখে নিবে বলে ফেইজবুকে হামলার ঘোষনা দেয়। ঘোষনার ঠিক ২দিন পর সকাল সাড়ে নয়টার দিকে আমাদের গ্রামের বশির, রহিম, লতিফ মিয়া সহ কয়েকজন রামচন্দ্রপুর বাজারে যাওয়ার পথে সোনাকান্দা গ্রামে প্রবেশ করা মাত্রই সিয়াম, জুলহাস, আল-আমিন, তামিমসহ ১০/১২ জন মিলে তাদের উপর হামলা করে।
এসময় বশিরুল ইসলামকে গণপিটুনি শুরু করে। এসময় প্রাণ বাঁচাতে বশির পুকুরে ঝাপ দিলে তাকে পানি থেকে তুলে এনে আবারো লাথি কিল ঘুষি মারতে থাকে। একপর্যায়ে সে অজ্ঞান হয়ে যায়। বর্তমানে সে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মুমূর্ষ অবস্থায় চিকিৎসাধীন রয়েছে। ঘটনায় থানায় মামলা করা হয়েছে।
সোনাকান্দা গ্রামের বাসিন্দা কবির হোসেন বলেন, ফুটবল খেলা নিয়ে যেই ঝামেলা হয়েছে সেটা সমাধান করার আগে কৈজুরী গ্রামের যাদের সাথে ঝামেলা তাদের লোকজনকে এই গ্রামের দিকে আসতে বারন করা হয়েছে কিন্তু তারা সেটা না মেনে গ্রামের উপর দিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে ছেলেদের সাথে মারামারি হয়।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই রুহুল আমিন বলেন, বশিরুল ইসলামকে গণপিটুনির ঘটনায় মামলা রুজু করা হয়েছে। আসামিদের আটক করতে অভিযান চলছে।
মুরাদনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি জাহিদুর রহমান বলেন, মারধরের ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। রবিবার পর্যন্ত এলাকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।
সম্পাদক ও প্রকাশক: কামরুজ্জামান জনি
Copyright © 2025 Muktirlorai | মুক্তির লড়াই. All rights reserved.