স্টাফ রিপোর্টার
ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেয়াকে কেন্দ্র করে বগুড়ার স্থানীয় একটি পত্রিকার স্টাফ রিপোর্টার আব্দুল ওয়াহেদ ফকিরকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। ওই স্ট্যাটাসে নাকি হিন্দু সম্প্রদায়ের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হেনেছে। যদিও দীর্ঘ সময় পার হওয়ার পরও বাদীকে হবে তা নিয়ে টানা হেঁচড়া চলছে। সাংবাদিক আব্দুল ওয়াহেদ ফকির বলেন, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার মত কিছু লেখেনি। আমি ব্যক্তিগত রোশানলের শিকার হয়েছি। একটি মহল আমার বিরুদ্ধে বেশ কিছু দিন ধরে লেগে আছে। তাদের ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছি আমি।
সুত্র জানায়, শনিবার রাত পৌনে দশটার দিকে শহরের সাতমাথা থেকে সাংবাদিক আব্দুল ওয়াহেদ ফকিরকে বগুড়া সদর থানার অফিসার ইনচার্জ গাড়িতে তুলে নিয়ে যায়। কিছুক্ষণ পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে রাখার পর তাকে সদর থানায় রাখা হয়েছে। সেখানে শনিবার রাত এবং রোববার সারাদিন রাখার পরও বাদীর অভাবে মামলা নিতে পারেনি থানা। সারাদিন হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতারা মিটিং করেও বাদীকে হবেন তা রোববার বিকেল ৫টা পর্যন্ত নির্ধারণ করতে পারেননি।
এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত মামলা হয়নি। বগুড়া সদর থানার অফিসার ইনচার্জ এস এম মঈনুদ্দীন বলেন, আমরা সন্দেহভাজন কাউকে থানায় ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত আটকে রাখতে পারি। মামলার বাদী কে হবেন হিন্দু সম্প্রদয়ের নেতারা মিটিং করে ঠিক করছেন। এখন পর্যন্ত (বিকেল ৫টা) কে বাদী হবে আমরা জানি না। তিনি আরো বলেন, সাংবাদিক যা লিখেছেন তাতে কয়েকটি ধারা লঙ্ঘন হয়েছে। মামলা হয়ে গেলে আসামিকে চালান দিয়ে দিবো।
এদিকে মামলা ছাড়া একজন সাংবাদিককে এভাবে তুলে নিয়ে যাওয়ায় বগুড়ার সাংবাদিক সমাজ ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে। কারো বিরুদ্ধে যদি কোনো আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠে সেটি তদন্ত সাপেক্ষে আমলে নেয়া দরকার ছিল। কিন্তু সাংবাদিক ওয়াহেদ ফকিরকে কেন এভাবে তুলে নিয়ে মামলা ছাড়াই আটকে রাখা হলো তার পরিষ্কার ভাবে কেউ উত্তর দিতে পারেননি।
অপর আরেকটি ঘটনায় দৈনিক আমার সংবাদের বগুড়ার শাজাহানপুর প্রতিনিধি সাংবাদিক নাজিরুল ইসলামের নামে মামলা নিয়েছেন শাজাহানপুর থানার অফিসার ইনচার্জ ওয়াদুদ আলম।
ঘটনার বিবরণে জানা যায়, উপজেলার নয়মাইল এলাকার আলু ব্যবসায়ী শাহাদত হোসেন চলতি বাংলা বছরে আড়িয়া বাজার ইজারা পান। গত ২৫ এপ্রিল সন্ধ্যার পর ইজারার টাকা তুলতে আড়িয়া বাজার থেকে দুই কিলো মিটারের বেশি দূরত্বে মানিক দিপা গ্রামে যান শাহাদতসহ তার তিন সহযোগী। ইজারা আদায়ের নামে চাঁদাবাজি করতে গেলে ইজারাদারসহ তার তিন সহযোগীকে অবরুদ্ধ করে রাখে স্থানীয় কৃষক ও আলু ব্যবসায়ীরা। অবরুদ্ধরা হলেন উপজেলার বামুনিয়া মন্ডলপাড়া গ্রামের আব্দুল মতিনের ছেলে বগুড়া জেলা আলু ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ও আড়িয়া বাজারের ইজারাদার শাহাদত হোসেন (৪০), একই এলাকার তোফাজ্জল হোসেনের ছেলে শহিদুল ইলাম (৪৫), কাটাবাড়িয়া গ্রামের আব্দুর রশিদের ছেলে ওয়াহিদ কুরাইশি মুরাদ (৪৫) এবং বামুনিয়া তালপুকুর গ্রামের আনোয়ার হোসেন (৩০)।
শাজাহানপুর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে সেনাবাহিনীর নিকট তাদের তুলে দেয়ার কথা জানান। কিন্তু শাজাহানপুর থানার ওসি ওয়াদুদ আলম উত্তেজিত জনতাকে আশ্বস্ত করেন তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিবেন। ওসির ওপর আস্থা রেখে পুলিশের হাতে তুলে দেয়া হয় অবরুদ্ধদের। কিন্তু তাদের থানায় না নিয়ে পথেই ছেড়ে দেয় পুলিশ। ঘটনার এক সপ্তাহ পর শনিবার ইজারাদার শাহাদত হোসেনের প্রতিনিধি আব্দুল ওহিদ মুরাদ বাদি হয়ে দৈনিক আমার সংবাদের শাজাহানপুর প্রতিনিধি সাংবাদিক নাজিরুল ইসলামসহ কৃষক, জনপ্রতিনিধিসহ ২০ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরো ২০/২৫ জনের নামে থানায় অভিযোগ দেন। অভিযোগটি এজাহার হিসেবে রেকর্ড করেন থানার ওসি।
মামলার আসামি সাংবাদিক নাজিরুল বলেন, সেদিন ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী আমি। ঘটনার লাইভ ফেইসবুকে প্রচার করেছি। এটাই আমার দোষ। শাজহানপুর থানার অফিসার ইনচার্জ ওয়াদুদ আলম জানান, সংবাদ পাওয়ার সাথে সাথে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়ে উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনা পর্যন্ত কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। অভিযোগ দিলে এখনও গ্রহণ করা হবে। তবে নাজিরুল যে সাংবাদিক জানা ছিল না।
সম্পাদক ও প্রকাশক: কামরুজ্জামান জনি
Copyright © 2025 Muktirlorai | মুক্তির লড়াই. All rights reserved.