বঙ্গবাজারের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত শত দোকান মালিকদের নগদ এক কোটি টাকা অনুদান তুলে দিয়েছে দাতব্য সংস্থা বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন। ঢাকা জেলা প্রশাসনের আন্তরিক সহায়তায়, আজ ১৯ এপ্রিল রোজ বুধবার, শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা মিলনায়তনে আনুষ্ঠানিকভাবে এই সহায়তা তুলে দেওয়া হয়। সহায়তা প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, ঢাকা জেলার মান্যবর জেলা প্রশাসক ও জেলা মেজিস্ট্রেট মোহাম্মদ মমিনুর রহমান। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক জনাব কাজী হাফিজুল আমিন, বিদ্যানন্দের ভাইস চেয়ারম্যান ফারুখ আহমেদ, বোর্ড সদস্য জামাল উদ্দীন। প্রধান অতিথির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক মমিনুর রহমান জানান, "বিদ্যানন্দের সাথে আমার কাজ করার অভিজ্ঞতা আগেও ছিলো। বঙ্গবাজারের অগ্নিকান্ডে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়াতে দেখে আমরাও এগিয়ে এসেছি। মানুষের আস্তার পাশাপাশি প্রশাসনও খুশি বেসরকারি এই সংস্থার সাথে কাজ করতে পেরে। বঙ্গবাজারে আমাদের অতীতের অনেক স্মৃতি জড়িত। সস্তা দামে ভালো কাপড় কিনতে আমরা ছুটে যেতাম বঙ্গবাজারে। সে বঙ্গবাজারের ক্ষতিতে আমরাও মর্মাহত। আশা করি বিদ্যানন্দের এই সহায়তা আপনাদের কিছুটা হলেও ক্ষতি কাটাতে সহায়তা করবে।"
বঙ্গবাজারের অগ্নিদূর্ঘটনার সময় থেকে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন অনলাইনে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়াতে সবাইকে আহ্বান জানান। নগদ টাকা অনুদানের পাশাপাশি আগুনে পোড়া কাপড় অকশন মূল্যে কিনে হলেও সেসব মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য আহ্বান জানানো হয়। সে আহ্বানে সাড়া দিয়ে সমাজের বিভিন্ন সেলিব্রেটি, গুণীজন, মন্ত্রী, প্রতিষ্ঠান সহ সর্বস্তরের সাধারণ মানুষ অংশ নেয়। বিদ্যানন্দের এই অনলাইন ক্যাম্পেইনে প্রায় দুই কোটি টাকা অনুদান সংগৃহীত হয় যার প্রথম ধাপ হিসেবে আজ এক কোটি টাকা হস্তান্তর করা হয়েছে।
আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত ১০০ জন দোকান মালিকের প্রত্যেককে নগদ এক লক্ষ টাকা করে প্রদান করা হয়েছে। ঈদের পর দ্রুত সময়ের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত দোকান কর্মচারীদেরকে অবশিষ্ট নগদ এক কোটি টাকা হস্তান্তরের পরিকল্পনা রয়েছে।
উল্লেখ্য জেলা প্রশাসনের আন্তরিক সহায়তা ও সমন্বয়ে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের সদস্যরা ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করেছে। ঈদকে সামনে রেখে তথ্য ও কাগজপত্র যাচাই বাছাই শেষে ঈদের আগেই এই সহায়তা তুলে দেওয়া হয়েছে। বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের জনসংযোগ প্রধান সালমান খান ইয়াছিন জানান, “ দোকান কর্মচারীদের তথ্য যাচাই বাছাইয়ের কাজটি আমরা কাজ করে যাচ্ছি, আশা করি ঈদের পর দ্রুততম সময়ের মধ্যে আমরা অনুদানের অবশিষ্ট এক কোটি টাকা হস্তান্তর করতে পারবো ।”
বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন প্রতিবছর বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের পাশাপাশি অগ্নিদূর্ঘটনার মতো দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়ায়। এর পূর্বে ঝালকাঠিতে লঞ্চে অগ্নিদূর্ঘটনা, চট্টগ্রামে বিএম ডিপোর বিস্ফোরণ এবং পঞ্চগড়ে নৌকা ডুবিতে নিহত ও ক্ষতিগ্রস্তদের নগদ অর্থ সহায়তা দিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করে। বাংলাদেশের মানুষ আস্থা রাখায় বিদ্যানন্দের এমন সব উদ্যোগে মানুষ অনুদান দিয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়ায়। ঈদের আগে দেশবাসীর পক্ষ থেকে নগদ অর্থ পেয়ে কিছুটা হলেও ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারবেন বঙ্গবাজারের এসব ব্যবসায়ীরা।
উল্লেখ্য ২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠিত বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন দরিদ্র মানুষের মৌলিক চাহিদা নিয়ে কাজ করার পাশাপাশি মানুষের বিপদে পাশে দাঁড়ায়। ২ টি স্কুল, ৭ টি এতিমখানা, ১ টি হাসপাতাল সহ সারাদেশের বিভিন্ন পয়েন্টে বিদ্যানন্দ খাবার বিতরণ সহ জনকল্যাণমূলক কাজ করে থাকে। মানবকল্যাণ কাজের স্বীকৃতি হিসেবে চলতি বছর একুশে পদক পেয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
সম্পাদক ও প্রকাশক: কামরুজ্জামান জনি
Copyright © 2025 Muktirlorai | মুক্তির লড়াই. All rights reserved.