আব্দুর রাজ্জাক সরকার, স্টাফ রিপোর্টার
গাইবান্ধা সদরের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বল্লমঝাড় বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, ১৯৮৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। সরকারি নথিতে প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে নাম রয়েছে মোজাম্মেল হক মন্ডলের। কিন্তু স্থানীয়রা দাবি করছেন, প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন মরহুম আজিজুর রহমান মাস্টার। শুধু এই প্রতিষ্ঠানই নয়, পাশাপাশি মধ্য ধানঘড়া হাই স্কুলও তাঁর উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। মরহুম আজিজার রহমান মাস্টার বল্লমঝাড়ে অবস্হিত রঘুনাথপুর এমএ উচ্চ বিদ্যালয়ের দীর্ঘ দিন সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। সেই সময় শিক্ষার্থীর সংখ্যা দেখাতে অনেককে দুরদুরান্তর থেকে এনে ভর্তি করায়, যাতে অনুমোদন পাওয়া যায়। এছারাও অত্র ইউনিয়নে শিক্ষার আলো ছড়াতে ৪/৫ টি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্হাপন করেছেন এই শিক্ষাবীদ। মরহুম আজিজার রহমান মাস্টার একজন সামাজিক সংগঠক ছিলেন, তিনি গাইবান্ধা সমবায় সমিতির আজিবন সদস্য, যে সমবায় সমিতির প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন সাঘাটার এমপি মরহুম রোস্তম মোল্লা আর এখন সভাপতি এ্যাডভোকেট আনাম।
এলাকাবাসীর অভিযোগ— প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতার নাম ইচ্ছাকৃতভাবে ইতিহাস থেকে মুছে দেয়া হয়েছে।
প্রতিষ্ঠার প্রাথমিক পর্যায়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিলেন মো. আব্দুস সামাদ আকন্দ। সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে তিনি দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করেন এবং পরবর্তীতে অবসরে যান। তাঁর পর সহকারী প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ পান মো. নজরুল ইসলাম। অভিযোগ রয়েছে, আর্থিক লেনদেন ও প্রভাব খাটিয়ে তাকেই পরবর্তীতে প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়।
এরপর থেকেই প্রতিষ্ঠানটিতে শুরু হয় শিক্ষক নিয়োগ, পদোন্নতি এবং প্রশাসনিক কর্মকাণ্ডে নানা অনিয়ম। সেই সুযোগে প্রভাবশালী মহলের হস্তক্ষেপও বেড়ে যায়। অভিযোগ রয়েছে, তথাকথিত প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে পরিচিত গাইবান্ধা জেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক মোজাম্মেল হক মন্ডলের ভাতিজা তাজউদ্দিন মন্ডলকে বিশেষ সুবিধা দিয়ে সহকারী প্রধান শিক্ষক করা হয়। বর্তমানে তিনি সেই পদেই রয়েছেন।
সরকারি নিয়ম অনুযায়ী, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এডহক কমিটির সভাপতি হতে হলে ন্যূনতম বি.এ. পাশ হতে হবে। কিন্তু স্থানীয়দের অভিযোগ, বল্লমঝাড় বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে এই শর্ত মানা হয়নি। অর্থের বিনিময়ে এক ব্যক্তিকে সভাপতি বানানো হয়েছে, যিনি আসলে এইচএসসি পাশ মাত্র।
এ প্রসঙ্গে প্রধান শিক্ষক মো. নজরুল ইসলামকে ফোনে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “আমি বিএ পাশের সার্টিফিকেট বোর্ডে জমা দিয়েছি, আমার কাছে আর কোনো কাগজ নেই।”
কিন্তু এলাকাবাসীর দাবি, যে বিএ সার্টিফিকেট জমা দেয়া হয়েছে, সেটি আসলে জাল সনদ। ফলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনা কমিটির বৈধতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া থেকে শুরু করে প্রশাসনিক কর্মকাণ্ড পর্যন্ত সবকিছুতেই অনিয়ম চলছে। যোগ্যতার ভিত্তিতে নয়, বরং আর্থিক লেনদেন ও রাজনৈতিক প্রভাবের ভিত্তিতেই সিদ্ধান্ত নেয়া হচ্ছে। শিক্ষক-শিক্ষিকাদের নিয়োগ, পদোন্নতি, এমনকি পরীক্ষার সময় ভর্তুকি তহবিল ব্যবহারের ক্ষেত্রেও অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনার স্বচ্ছতা যেখানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, সেখানে দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির কারণে বিদ্যালয়ের মান ও সুনাম ক্রমশ নষ্ট হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন অভিভাবকরা।
স্থানীয়রা বলছেন, “এই বিদ্যালয় আমাদের মেয়েদের আলোকিত করার কেন্দ্র। কিন্তু দুর্নীতিবাজদের দৌরাত্ম্যে আজ প্রতিষ্ঠানটি ধ্বংসের পথে। কোনোভাবেই দুর্নীতিবাজদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রাখা যাবে না।”
বর্তমানে দুর্গাপূজা উপলক্ষে বিদ্যালয় বন্ধ রয়েছে। তবে ছুটি শেষে বিদ্যালয়ের দুর্নীতি ও অনিয়ম নিয়ে এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে কঠোর পদক্ষেপের দাবি উঠবে বলে জানা গেছে।
বল্লমঝাড় বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের অনিয়ম-দুর্নীতি নিয়ে বহুদিন ধরেই এলাকায় আলোচনা-সমালোচনা চলছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ইতিহাস বিকৃত করা থেকে শুরু করে শিক্ষক নিয়োগ, এডহক কমিটি গঠন—সব জায়গায় অনিয়মের অভিযোগ উঠছে ধারাবাহিকভাবে। এ অবস্থায় স্থানীয়দের প্রত্যাশা, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দ্রুত তদন্ত করে দায়ীদের চিহ্নিত করে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেবে।
সম্পাদক ও প্রকাশক: কামরুজ্জামান জনি
Copyright © 2025 Muktirlorai | মুক্তির লড়াই. All rights reserved.