বায়ুদূষণে দিন দিন জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে উঠেছে কুমিল্লা। ইটভাটা, যানবাহনের কালো ধোঁয়া, পুকুর ভরাট, নদীর চর ও কৃষি জমি অবাধে মাটি কাটার ফলে এ পরিস্থতি সৃষ্টি হয়েছে। সুইজারল্যান্ড ভিত্তিক বায়ুমান পর্যবেক্ষণকারী ওয়েবসাইট ‘আইকিউ এয়ার’ বিশ্বের প্রায় ১০০টি বড় শহরের বায়ুদূষণ নিয়ে লাইভ প্রতিবেদনে ঢাকার বাহিরে কুমিল্লা ছিল দূষণ তালিকায় শীর্ষে।
শুক্রবার (৩ মার্চ) বায়ুমান সূচকে কুমিল্লায় বায়ু দূষণের মাত্রা ছিল ১৮৩ আর রাজধানীর অবস্থান ছিল ২০৯।
পরিবেশ বিজ্ঞানীদের মতে, বাতাসে কার্বন-ডাই অক্সাইড, লেড, নাইট্রোজেন অক্সাইড ও প্রলম্বিত বস্তুকণার কারণে বায়ু দূষিত হয়। বাতাসের একিউআই মাত্রা শূন্য থেকে ৫০ পিপিএম হলে তাকে ‘সবুজ বা স্বাস্থ্যকর’ বলা হয়। একিউআই মাত্রা ৫১ থেকে ১০০ পিপিএম হলে তাকে ‘মধ্যম’ বায়ু বলা হয়। যা মানুষের জন্য ক্ষতিকর নয়।
২০১ থেকে ৩০০ পিপিএম একিউআই মাত্রার বাতাসকে ‘খুবই অস্বাস্থ্যকর’ শ্রেণিতে এবং ৩০১ থেকে ৫০০ পিপিএম মাত্রার বাতাসকে ‘চরম পর্যায়ের অস্বাস্থ্যকর’ বায়ু হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।
সূত্র মতে, কুমিল্লা জেলায় বৈধ-অবৈধ মিলিয়ে ৩ শতাধিকেরও বেশি ইটভাটা রয়েছে। এসব ইটভাটার বেশিরভাগই গড়ে উঠেছে পরিবেশ আইন না মেনে। নির্গত হচ্ছে অপরিশোধিত ধোঁয়া। এ ছাড়াও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার ১০০ কিলোমিটার এলাকা ও কুমিল্লা-নোখায়ালী, কুমিল্লা-চাঁদপুর এবং কুমিল্লা-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়ক। এসব মহাসড়ক দিয়ে প্রতিদিন অর্ধ লক্ষাধিক গাড়ি চলাচল করে। যানবাহনের কালো ধোঁয়া কুমিল্লার বায়ু দূষণ বাড়িয়েছে। এ ছাড়া অবাধে পুকুর ভরাট, গোমতী নদীর চরের মাটি কেটে ট্রাক্টরে বহন করা ও কৃষি জমি অবাধে কেটে মাটি পরিবহনের সময় ধুলোবালিতে সড়ক পথে পরিবেশের বিপর্যয় ঘটছে।
পরিবেশ অধিদপ্তরের কুমিল্লার উপ-পরিচালক মোসাব্বের হোসেন মুহাম্মাদ রাজীব বলেন, ২০১৯ সালের তথ্যে, কুমিল্লা সবচেয়ে কম দূষণের জেলা ছিল। বর্তমানে কেন দূষণের মাত্র বেড়ে গিয়েছে বিষয়টি ক্ষতিয়ে দেখবো। তাছাড়া বায়ুদূষণ রোধে আমরা নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করে যাচ্ছি।
সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) কুমিল্লার সভাপতি রোকেয়া বেগম শেফালী বলেন, গোমতী নদীর বালু ও নদী চরের মাটি অবাধে কেটে পরিবহনের সময় ধুলোবালি উড়ে মানুষের চলাচল কষ্টকর হয়ে পড়ছে।
কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক আজিজুর রহমান সিদ্দিকী বলেন, বায়ু দূষণ বেড়ে গেলে জনস্বাস্থ্যের জন্য এটি হুমকি হয়ে দাঁড়ায়। মানুষের ফুসফুস, চোখের দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়া, কানে কম শোনা, বিভিন্ন চর্মরোগ হওয়া, লিভার-কিডনির সমস্যা এবং সব শেষে মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা কমে যায়। তাই মানুষকে ঘরের বাইরে চলাচলের সময় অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করতে হবে।
সম্পাদক ও প্রকাশক: কামরুজ্জামান জনি
Copyright © 2025 Muktirlorai | মুক্তির লড়াই. All rights reserved.