বাগেরহাট জেলা প্রতিনিধি
এক - এক করে ফুরিয়ে এলো দুর্গাপূজার উৎসবের দিনগুলো। আজ মঙ্গলবার শারদীয় দুর্গাপূজার বিজয়া দশমী। পাঁচ দিনব্যাপী উৎসবের শেষ দিন। আজ প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় এই উৎসব।
আজ বিসর্জনের দিনে ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে থাকবে দশমীর বিহিত পূজা এবং পূজা শেষে দর্পণ বিসর্জন। বিকালে বিজয়া শোভাযাত্রা। বিজয়া দশমী উপলক্ষ্যে আজ সরকারি ছুটির দিন।
বিজয়া দশমীতে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মাঝে অন্যরকম আবেগ ও মন খারাপ করা এক অনুভূতির সৃষ্টি হয়। কারণ, দশমী মানেই দুর্গা মায়ের ফিরে যাওয়া। অপেক্ষায় থাকতে হবে আরও একটি বছর।
গত সোমবার বাগেরহাটের মোংলার প্রতিটা মণ্ডপে - মণ্ডপে মহানবমীতে দেবীর বন্দনায় ভক্তকুলে ছিল ভিন্ন এক আবহ। ঢাকঢোল, কাঁসর-ঘণ্টা'সহ বিভিন্ন বাদ্য, ধূপ আরতি ও দেবীর পূজা-অর্চনায় ছিল প্রাণখোলা উচ্ছ্বাস। পাশাপাশি মণ্ডপে - মণ্ডপে ছিল বিদায়ের সুর। ছিল এক সুন্দর পৃথিবীর প্রার্থনা। যেখানে মানুষে-মানুষে কোনো ভেদাভেদ থাকবে না। জাতীয় জীবনে সমৃদ্ধি হবে। থাকবে শান্তি। এদিন সকাল থেকে বাগেরহাট জেলা'সহ সারা দেশের মণ্ডপগুলোতে শুরু হয় আনুষ্ঠানিকতা।
পুরাণ মতে, এ তিথিতে দেবী দুর্গার আশীর্বাদ নিয়ে লঙ্কার রাজা রাবণকে বধ করেছিলেন দশরথ পুত্র শ্রীরামচন্দ্র। এছাড়া ১০৮টি নীলপদ্ম দিয়ে দেবী দুর্গার পূজা করেছিলেন রামচন্দ্র। তাই মহানবমীতে ষোড়শ উপাচারের সঙ্গে ১০৮টি নীলপদ্মে পূজিত হয়েছেন দেবী দুর্গা। মহানবমীর দিনে দেবী দুর্গাকে প্রাণভরে দেখে নেওয়ার সময়। দুর্গাপূজার অন্তিম দিন বলা যায় মহানবমীর দিনটিকে।
আজকের দিন কেবল বিজয়া ও বিসর্জনের পর্ব। মহাষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে গত শুক্রবার শুরু হয় পাঁচ দিনব্যাপী সার্বজনীন শারদীয় দুর্গোৎসব। সনাতনী শাস্ত্র অনুযায়ী, এবার দেবীদুর্গা মর্ত্যে এসেছেন ঘোড়ায় চড়ে, কৈলাসে ফিরবেনও ঘোড়ায় চড়ে।
শাস্ত্রমতে এর ফলাফল ‘ছত্রভঙ্গ স্তরঙ্গমে’। এর অর্থ হলো, সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংসারিক ক্ষেত্রে ঘটবে অস্থিরতা। রাজনৈতিক উত্থান-পতন, সামাজিক স্তরে বিশৃঙ্খলা, অরাজকতা, গৃহযুদ্ধ, দুর্ঘটনা ও অপমৃত্যু বাড়বে। তাই কায়মনে দেবী দুর্গার কাছে জগতের কল্যাণ কামনা করেন ভক্তরা।
গত সোমবার মোংলা উপজেলার মিঠাখালী ইউনিয়নের, টাটিবুনিয়া শ্রী শ্রী পঞ্চগ্রাম দুর্গা মন্দির, বশিরখন্ড দুর্গা মন্দির, চটের হাট বাজার পূজা মন্দির, নিতাখালী পূজা মন্দির ও খাসের ডাঙ্গা পূজা মন্দির'সহ বিভিন্ন মণ্ডপে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ভিড় দেখা যায়। এর মধ্যে অসুরবধে বিজয়ের দিন হিসাবে পুরোহিতরা মন্ত্র পাঠ করেন। মহানবমীর বলিদান রীতি অনুসারে কিছু কিছু মণ্ডপে কুমড়া ও লাউ দিয়ে বলি দেওয়া হয়।
চটেরহাট সার্বজনীন দুর্গা মন্দিরে সভাপতি গৌতম হালদার ও নিতাখালীর সার্বজনীন দুর্গাপূজা উদযাপন কমিটির বাদল মন্ডল বলেন, আজ নবমী তিথিতে মায়ের বিদায়ী কণ্ঠ বাজবে। মা চলে যাবে এটা ভাবতেই পারছি না।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ জানিয়েছে, এ বছর সারা দেশে ৩২ হাজার ১৬৮টি মণ্ডপে আয়োজিত হয়েছে দুর্গাপূজা। গত বছরের চেয়ে যা ২৪০টি বেশি।
সম্পাদক ও প্রকাশক: কামরুজ্জামান জনি
Copyright © 2025 Muktirlorai | মুক্তির লড়াই. All rights reserved.