মাহফুজুর রহমান, মুরাদনগর (কুমিল্লা)
পাখি আক্তার (২২), স্বাভাবিক চলাফেরা করতে পারেন না তিনি, বলতে পারেন না কথাও। কি করে চলবেন আর বলবেন! কারন তিনি যে জন্ম থেকেই শারীরিক ও বাক প্রতিবন্ধি।
নিজের চলা বলার শক্তি না থাকলেও বড় ভাই আবুল হোসেনের ছবি বুকে নিয়ে হাউমাউ করে কাঁদে আর ভাইকে খোঁজে বেড়ায় এই পাখি। কি যেন বলতে চায় কিন্তু বলতে পারে না। কারন বলার মতো ক্ষমতা যে বিধাতা তাকে দেয়নি। ছবি বুকে নিয়ে এদিকে সেদিকে বড় ভাইকে খোঁজে বেড়ায়। খুঁজে বেড়ালে আর কি হবে! তার ভাই আবুল হোসেন যে আর বেঁচে নেই। ৫ই আগস্ট ঘাতক পুলিশের বুলেট যে কেড়ে নিয়েছে তার বড় ভাইয়ের প্রাণ। শুধু প্রাণে মেরে দিয়েই ক্ষান্ত হয়নি ঘাতকেরা, তার ভাইয়ের লাশের সাথে আরো কিছু লাশ ভ্যানে তুলে থানার সামনেই আগুনে পুড়িয়ে দেয় নরপিশাচরা। তার পর থেকেই কোন হদিস নেই আবুল হোসেন(৩৪)। ৫ই আগস্ট সাভারের আশুলিয়ার বাইপাইল থেকে দিনমজুর আবুল হোসেন নিখোঁজ হন। এরপর তার স্বজনরা তাকে অনেক খোজাখুজির পর না পেয়ে থানায় জিডি করতে গেলে ফিরিয়ে দেয় পুলিশ। তারপর ১৯শে আগস্ট সেনাবাহিনী ও ছাত্রদের চাপে বাধ্য হয়ে জিডি নেয় আশুলিয়া থানা পুলিশ। তারপর ২৯শে আগস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিওতে দেখা যায় ভ্যানগাড়ীতে লাশের স্তূপ করছে পুলিশ। সেই ভিডিওতে গায়ে পড়া ব্রাজিলের জার্সি ও লুঙ্গি দেখে আবুল হোসেনকে শনাক্ত করে তার পরিবারের সদস্যরা। কিন্তু শনাক্ত করলেও লাশটি আর কপালে জোটেনি তাদের। কারন লাশ যে নির্দয় পুলিশ সদস্যরা আগুনে পুড়িয়ে দিয়েছে। গুলি করে হত্যারপরও নির্মমতার শিকার হওয়া দিনমজুর আবুল হোসেন কুমিল্লা জেলার মুরাদনগর উপজেলার ফুলঘর গ্রামের মনির মিয়ার ছেলে। সে সাভারের আশুলিয়া এলাকায় রাজমিস্ত্রির কাজ করতো।
স্বৈরাচার সরকার পতনের জন্য আশুলিয়ায় ছাত্র-জনতার আন্দোলনে অংশগ্রহন করে সে। দরিদ্র পরিবারের ছেলে সে। পরিবারে চলছে অভাব-অনটনের মধ্য দিয়ে। ৫ভাই-বোনের মধ্যে আবুল সবার বড়। আরো একটি ভাই এলাকায় অন্যের জমিতে কৃষিকাজ করে। একটি বোন প্রতিবন্ধি। তার জন্য একটি হুইল চেয়ার কেনার ক্ষমতা নেই পরিবারের। আবুল হোসেনের অবুঝ দুই সন্তানের ভরনপোষনের দায়িত্ব নেবে কে। হতাশার সাগরে ডুবে মানবেতর জীবনযাপন করা এই পরিবারটির অন্তবর্তী সরকারের কাছে তাদের দাবী আবুল হোসেনকে শহীদের মর্যাদা, হত্যার বিচার ও তাদের পরিবারের জন্য আর্থিক স্বচ্ছলতার ব্যবস্থা করা।
আবুল হোসেনের মা সালমা আক্তার বলেন, আমি ১০মাস গর্ভে ধারন করে তাকে জন্ম দিয়েছি। সে আমার প্রথম সন্তান। তার লাশটাও কি বুকে জড়িয়ে ধরা আমার নসিব হলো না। পুড়িয়ে দিলো আমার কলিজার লাশটাকে। এই কষ্ট কারে দেখামু বাবা, এই কষ্ট আমি কারে দেখামু।
আবুল হোসেনের বাবা মনির মিয়া বলেন, আমার ছেলের মতো আরো বহু মায়ের সন্তানকে হত্যা করেছে জালিমেরা। আমি আমার সকল সন্তান হত্যার বিচার চাই।
উপজেলা নিবার্হী অফিসার সিফাত উদ্দিন বলেন, উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আবুল হোসেনের পরিবারকে দ্রুত সময়ের মধ্যে সহযোগিতা প্রদান করা হবে। প্রশাসন তাদের পাশে থাকবে।
সম্পাদক ও প্রকাশক: কামরুজ্জামান জনি
Copyright © 2025 Muktirlorai | মুক্তির লড়াই. All rights reserved.