ডেস্ক রিপোর্ট
মানিকগঞ্জ জেলা যুব মহিলা লীগের যুগ্ম আহ্বায়কের বিরুদ্ধে সিংগাইর উপজেলার এক ব্যক্তিকে এক মাসের মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা সনদ বানানোর তদবিরের জন্য ৩ লাখ ৭০ হাজার টাকা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। ঢাকায় কর্মরত একটি বেসরকারি টেলিভিশনের এক সাংবাদিকের আত্মীয়ের কাছ থেকে এ টাকা নেওয়া হয়। ওই সাংবাদিকের সঙ্গে জেলা যুব মহিলা লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক সালেহা জাহানের ফোনালাপ ফাঁস হয়ে যাওয়ায় এ তথ্য জানা গেছে। সালেহা জাহান একাধারে সিংগাইর উপজেলা যুবলীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদকও।
সালেহা মানিকগঞ্জ-২ আসনের সংসদ-সদস্য মমতাজ বেগমের খুব আস্থাভাজন হওয়ায় ভুক্তভোগী পরিবারকে টাকা ফেরত দিতে নানা টালবাহানা করছেন। সালেহা ও তার স্বামী শ্রমিক লীগের উপজেলার সভাপতিসহ ৩-৪ জন অজ্ঞাতনামা যুবক নিয়ে বৃহস্পতিবার ভুক্তভোগীর পরিবারকে ভয়ভীতি দেখান। সাংবাদিকদের কাছে এ ব্যাপারে কোনো কথা না বলতেও হুমকি ধমকি দেন।
ফাঁস হওয়া ফোনালাপের কথোপকথনের অডিও গণমাধ্যমের কাছে আসার পর সালেহা টাকা নেওয়ার কথা স্বীকার করেন। তবে তিনি দাবি করেন- মুক্তিযোদ্ধা সনদ বানানো সম্ভব না হওয়ায় টাকা ফেরতও দিয়েছেন। ভুক্তভোগী পরিবারের দাবি এখনো তার কাছে আরও ৭০ হাজার টাকা পাওনা রয়েছে।
ভুক্তভোগী সিংগাইর উপজেলার বায়রা গ্রামের কলেজ শিক্ষার্থী গীতা সরকার। ২০২১ সালে উপজেলার ধল্লা এলাকার জেলা যুব মহিলা লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ও উপজেলা যুবলীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক সালেহা জাহানের প্রলোভনে গীতা তার বাবাকে মুক্তিযোদ্ধা বানানোর জন্য ৩ লাখ ৭০ হাজার টাকা দেন।
গীতা সোমবার সকালে বলেন, স্কুল ও কলেজে অধ্যয়নের ফাঁকে তিনি টিউশনির জমানো টাকা, বড় বোনের কাছ থেকে ধার করা দেড় লাখ টাকা ও স্থানীয় এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে পরিবারের কাউকে না জানিয়ে সালেহা জাহানকে টাকা দেন।
গীতা বলেন, তার ব্যক্তিগত রূপালী ব্যাংকের হিসাব নম্বর থেকে সালেহা জাহানের ব্যাংক এশিয়ার একটি হিসাব নম্বরে আরটিজিএস’র মাধ্যমে ২০২১ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি সাড়ে তিন লাখ টাকা দেন। আর নগদে দেন ২০ হাজার টাকা।
পাঁচ লাখ টাকা চুক্তিতে এক মাসের মধ্যে গীতার বাবা গুরু চন্দ্র সরকারকে মুক্তিযোদ্ধা সনদ বানিয়ে দেওয়ার কথা বলে টাকা নেন সালেহা। দুই বছর সাত মাস পেরিয়ে গেলেও মুক্তিযোদ্ধা সনদ বানানো তো দূরের কথা উল্টো চাপের মুখে রেখেছেন সালেহা। গীতা জানান, তার সত্তর বছর বয়সি বাবা এখনো বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানে বেহালা বাজান। সালেহার ফাঁদে পরে এমন কাজটি করা ঠিক হয়নি। বিষয়টি জানাজানি হওয়ায় পরিবারের মান ইজ্জতের হানি হয়েছে বলেও জানান।
মানিকগঞ্জ জেলা যুব মহিলা লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক সালেহার এ অপকর্মের দায় নিতে নারাজ খোদ দলটির জেলা আহ্বায়ক রোমেজা আক্তার খান মাহিন। তিনি বলেন-বিষয়টি কেন্দ্রীয় সভানেত্রীকে অবহিত করেছি। তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মুক্তিযোদ্ধার সনদ বানানোর কথা বলে টাকা নেওয়া জঘন্যতম ও নিন্দনীয় কাজ বলে মনে করেন সিংগাইর উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মো. সায়েদুল ইসলাম। তিনি বলেন, সালেহার এ ধরনের কর্মকাণ্ড দলের সুনাম ক্ষুণ্ন করেছে।
সম্পাদক ও প্রকাশক: কামরুজ্জামান জনি
Copyright © 2025 Muktirlorai | মুক্তির লড়াই. All rights reserved.