মাহফুজুর রহমান, মুরাদনগর (কুমিল্লা)
কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার কৃষি জমি থেকে অবৈধ ড্রেজারের মাধ্যমে মাটি কেটে বিক্রি করছে একদল মাটি খেকো ড্রেজার ব্যবসায়ী। উপজেলার চাপিতলা ও বাঙ্গরা পূর্ব ইউনিয়নের কৃষি জমিতেই ১০টি অবৈধ ড্রেজারের মাধ্যমে তিন ফসলি জমি থেকে মাটি উত্তোলন করছে স্থানীয় কিছু চক্র। এতে ক্ষতির মুখে পড়ছে স্থানীয় কৃষক ও জমির মালিকরা। ড্রেজার ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের মধ্যে চাপিতলা গ্রামের সালমান, আজিজ, খামারগ্রামের মাইনউদ্দিন, একই গ্রামের সাদ্দাম হোসেন ও সাগর মিয়া, সারোয়ার খন্দকার (ওরফে ড্রেজার সারোয়ার), বিল্লাল মিয়াসহ আরো কিছু সদস্য দীর্ঘদিন ধরে এই ড্রেজার ব্যবসায় জড়িত। তাদের ভয়ে সাধারন কৃষকরা প্রতিবাদ করতেও ভয় পায় বলে জানান নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কৃষক।
সরেজমিনে জানা যায়, চাপিতলা, দৌলতপুর, খামারগ্রাম, খাপুরায় জমির মাঝখানে ড্রেজার মেশিন লাগিয়ে মাইলের পর মাইল পাইপের সংযোগ দিয়ে ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে মাটি উত্তোলন করে কোথাও ফসলি জমি আবার কোথাও বা পুকুর ভরাট করা হচ্ছে। ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে মাটি ও বালি উত্তোলনের ফলে আশ-পাশের তিন ফসলের জমিগুলো কূপের ন্যয় জলাশয়ে পরিণত হচ্ছে। ড্রেজার সিন্ডিকেট প্রথমে একটি জমিতে ড্রেজার বসিয়ে মাটি কেটে নিলে গর্ত হয়ে পার্শ্ববর্তী সকল জমি ভেঙ্গে পড়তে শুরু করে। তখনই জমির মালিকদের জিম্মি করে কম দামে জমি বিক্রিতে বাধ্য করে ড্রেজার ব্যবসায়ী চক্র।
উপজেলার চাপিতলা গ্রামের রেজাউল করিম বলেন, মুরাদনগরে আওয়ামী লীগের লোকজনরা ড্রেজার ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। ৫ই আগস্টের পর কিছুদিন এই ড্রেজার মেশিন গুলো বন্ধ ছিলো। ইদানিং আবারও ব্যবসা শুরু করেছে। এই ড্রেজারের কারনে কৃষি জমির পরিমান কমে গিয়ে উৎপাদন কমে যাচ্ছে। দেশের এবং পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। ড্রেজার নির্মূলে স্থায়ী পদক্ষেপ নেয়া জরুরী।
চাপিতলার আকতারুজ্জামান অন্তর বলেন, চাপিতলা ও খামারগ্রাম এবং দৌলতপুর বিলে মাটি খেকো ব্যবসায়ীরা প্রথমে মাঝখানে একটা জমি কিনে ড্রেজার লাগিয়ে কেটে ফেলে। তারপর পাশের জমিগুলো ভাঙ্গা শুরু হলে জমির মালিকদের অনিচ্ছা সত্বেও কমদামে তাদের কাছে বিক্রি করতে বাধ্য হয়। আমরা এই ড্রেজার বন্ধসহ ফসলি জমি রক্ষার জোর দাবি জানাই।
ড্রেজার ব্যবসায়ী সাগর ও মাইনুদ্দিনের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে তারা সরাসির দেখা করার জন্য বলেন।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় বর্তমানে চাষাবাদযোগ্য জমির পরিমান ২৩হাজার ৯৪৮হেক্টর।
যা ২০২২সালে ছিলো ২৪ হাজার ২৯৩ হেক্টর। এর মধ্যে বেশীর ভাগই দুই থেকে তিন ফসলী জমি।
মুরাদনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট সিফাত উদ্দিন বলেন, যেখান থেকেই ড্রেজারের অভিযোগ এসেছে সেখানেই অভিযান পরিচালনা করেছি। এটি স্থায়ীভাবে বন্ধে আমাদের সবাইকে সম্মিলিত ভাবে পদক্ষেপ নিতে হবে। পাশাপাশি অবৈধ ড্রেজার বন্ধে আমাদের অভিযান সবসময় অব্যাহত আছে।
সম্পাদক ও প্রকাশক: কামরুজ্জামান জনি
Copyright © 2025 Muktirlorai | মুক্তির লড়াই. All rights reserved.