শাহিন শিকদারঃ
বিএনপি'র অন্যতম অঙ্গ সংগঠন জাতীয়তাবাদী মৎস্যজীবী দলের কেন্দ্রীয় কমিটি বিলুপ্তির ১ বছর পূর্ণ হয়েছে। ২৮ অক্টোবরের পর থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত সংগঠনটি আন্দোলনে বেশ সক্রিয় ছিল। কেন্দ্রীয় কমিটি না থাকায় আন্দোলনের সক্রিয় দলটির নেতাকর্মীরা অযত্ন, অবহেলায় মলিন মুখে, আনমনা হয়ে পার্টি অফিসে বসে থাকতে দেখা যায়। উদীয়মান তেজস্বী এই সংগঠনটি নিষ্প্রাণ, নিষ্প্রভ। কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের মুখে শুধুই হতাশার সুর। কেমন আছেন প্রশ্ন করতেই আন্দোলনের সক্রিয় (নাম প্রকাশে অনিচ্ছু) একজন নেতা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন স্বৈরাচার মুক্ত বাংলাদেশ সবাই পুরস্কৃত হলেও মৎস্যজীবী দলের নেতাকর্মীরা তিরষ্কৃত। সভা সমাবেশে তাদের প্রকৃত মূল্যায়ন হয় না।
ফেব্রুয়ারিতে দলটির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী গেলেও জাতীয়ভাবে তা পালন হয়নি। এতে নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। উচ্চাকাঙ্ক্ষী বেশ কিছু নেতাকর্মী বিএনপি বা অন্য অঙ্গ দলে যোগ দিয়েছেন। বাংলাদেশের অধিকাংশ জেলা, মহানগর, উপজেলা ও পৌরসভা কমিটি থাকলেও তাদেরকে তদারকি করার কেউ নেই। ইতিমধ্যে অনেক ইউনিট নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছে, অন্য দলে যোগ দেয়ায় অনেক পদ শূন্য রয়েছে। সাবেক নেতৃবৃন্দ সকলের খোঁজখবর নিলেও নির্বাহী দায়িত্বে না থাকায় কোন জটিলতাই নিরসন করতে পারছেন না। সারাদেশে যখন বিএনপি'র জোয়ার বইছে তখন মৎস্যজীবী দল খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে। জাতীয় পর্যায়ে দলটির কোন কর্মসূচি পালিত হচ্ছে না। হতাশার মধ্যে সময় কাটছে তাদের।
বাংলাদেশের জেলে সম্প্রদায়কে ঐক্যবদ্ধ করার লক্ষ্যে ১৯৭৯ সালের ২৭ নভেম্বর কক্সবাজারে ঐতিহাসিক জেলে সমাবেশের মধ্য দিয়ে বিএনপি'র প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান রাষ্ট্রপতি শহীদ জিয়াউর রহমান (বীর উত্তম) জাতীয়তাবাদী জেলে দল প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তীতে মৎস্য চাষী, আহরণকারী, প্রক্রিয়াজাতকারী, রপ্তানিকারী ও মৎস্য ব্যবসায়ীদেরকে সম্পৃক্ত করার লক্ষ্যে ১৯৯৩ সালে জেলে দলের নাম পরিবর্তন করে জাতীয়তাবাদী মৎস্যজীবী দল নামকরণ করা হয়। নাম পরিবর্তনের পর ২০০০ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারি জাতীয়তাবাদী মৎস্যজীবী দলের প্রথম কমিটি অনুমোদীত হয়। নেতাকর্মীদের আশা ছিল প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর পূর্বেই দলটি নতুন কমিটি পাবে। তাদের আশা ছিল বিপুল উৎসাহ, উদ্দীপনা ও জাঁকজমকপূর্ণভাবে ৪৬ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালন করবে। বিএনপির নির্দেশনা না পাওয়ায় তারা দলের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মাজারে আনুষ্ঠানিক শ্রদ্ধা প্রদর্শন করতে পারেননি।
বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম মাহতাবকে আহ্বায়ক ও সাবেক ছাত্রনেতা আবদুর রহিমকে সদস্য সচিব করে সর্বশেষ গঠিত ১৫৪ সদস্যে কমিটি পাঁচ বছরের অধিক দায়িত্ব পালন করে। গত বছরের ১২ আগস্ট দিবাগত রাতে সংগঠনটির দীর্ঘদিন সভাপতি ও আহ্বায়কের দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করা বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম মাহতাব মৃত্যুবরণ করেন। শূন্য পদে কাউকে পদায়ন না করে গত ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রিঃ বিএনপি'র দপ্তরের দায়িত্বে থাকা সিঃ যুগ্ম মহাসচিব এ্যাডঃ রুহুল কবির রিজভী মৎস্যজীবী দলের কেন্দ্রীয় কমিটি বিলুপ্ত করেন। প্রায় ১ বছর অতিবাহিত হলেও এখনো নতুন কমিটি হয়নি। কমিটি না থাকায় সারাদেশে দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে।
৫ অক্টোবরের পর বিএনপি সহ প্রতিটি অঙ্গসংগঠন সাংগঠনিক কার্যক্রম নিয়ে ব্যস্ত থাকলেও মৎস্যজীবী দলের নেতাকর্মীরা বিএনপি'র কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অলস সময় কাটাচ্ছেন। ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ সহ সারাদেশের জেলা ও মহানগরের ব্যানারে কিছু সভা সমাবেশ হলেও সেটা পর্যাপ্ত নয়। সংগঠন বিকাশিত ও শক্তিশালী হওয়ার মতো কোন কার্যক্রম করতে পারছেন না। অথচ স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে এই দলটিরকেই সম্মুখ সারীতে থেকে নেতৃত্ব দিতে দেখেছি।
দলটিতে সভাপতি সাধারণ সম্পাদকসহ অপরাপর পদে নেতৃত্ব দেওয়ার মতো কিছু চৌকস নেতৃত্ব রয়েছে। পদ পদবির আশায় তারা বিভিন্ন নেতাদের কাছে ধরনা দিচ্ছেন। নেতৃত্ব পেলে তারা খুব ভালো করবেন, এটা সকলের প্রত্যাশা।
সভাপতি হিসেবে সাবেক সদস্য সচিব আব্দুর রহিমের নাম সকলের আলোচনায় রয়েছে। শোনা গেছে নাদিম চৌধুরীও সভাপতি হতে চান। গত ৬ বছর মৎস্যজীবী দলের দায়িত্ব পালন করা বেশ কয়েকজন সাবেক ছাত্রনেতা সাধারণ সম্পাদক সহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পদ পেতে জোর তদবির চালাচ্ছে। সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ওমর ফারুক পাটোয়ারী, জাহাঙ্গীর আলম সনি, অধ্যক্ষ সেলিম মিঞা ও জাকির হোসেন খানের নাম আলোচনায় রয়েছে। সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক ওমর ফারুক পাটোয়ারী ছাত্র রাজনীতি শেষে দীর্ঘদিন সোনাইমুড়ি উপজেলা বিএনপি'র সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। নেতাকর্মীদের কাছে তার সাংগঠনিক দক্ষতার যথেষ্ট সুনাম রয়েছে। সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক জাহাঙ্গীর আলম সনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রনেতা ছিলেন। দীর্ঘদিন থেকে তিনি মৎস্যজীবী দলের কর্মকাণ্ডে জড়িত।
সাবেক ছাত্রনেতা অধ্যক্ষ সেলিম মিঞা শিক্ষক নেতা হিসেবে বেশ আলোচিত। অন্যান্য পদে জহিরুল ইসলাম বাসার, মোঃ ইব্রাহিম চৌধুরী, রনি আক্তার, হাজী আনোয়ার হোসেন, ফজলে কাদের সোহেল, জাহিদুল আলম মিলন, মোঃ শাহাদত হোসেনের, আমিরুল ইসলাম ও মোঃ নোমান হোসেনের নামও আলোচনায় রয়েছে।
সম্পাদক ও প্রকাশক: কামরুজ্জামান জনি
Copyright © 2025 Muktirlorai | মুক্তির লড়াই. All rights reserved.