জবরদস্তি, জবরদস্তি, আর জবরদস্তি এটাই হলো বাণিজ্য অংশীদারদের ওপর চাপ প্রয়োগের একমাত্র মার্কিন পদ্ধতি।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র তথাকথিত ‘সমান শুল্ক’ আলোচনা শুরু করেছে। যাতে বাণিজ্য অংশীদারদের নতি স্বীকার করানো যায়। সবার আগে আয়োজিত মার্কিন-জাপান বাণিজ্য আলোচনায় জাপানকে মুদ্রা বিনিময় হারে ছাড় দেয়া এবং প্রতিরক্ষা বাজেট বাড়ানোর ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র রাজি করতে চায়। মার্কিন স্বার্থকে কেন্দ্র করেই এসব পদক্ষেপ।
শুধু তাই নয়, মার্কিন সরকার শুল্ক আলোচনায় অন্যান্য দেশের ওপর চাপ প্রয়োগ করতে চায়, তাদেরকে চীনের সঙ্গে বাণিজ্য বিনিময় সীমিত রাখার দাবি জানায়, যাতে এসব দেশ যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক মওকুফের সুযোগ বিনিময় করতে পারে।
তবে এর ফলাফল কি? যুক্তরাষ্ট্রের তথাকথিত শুল্ক আলোচনার ইঙ্গিত, খুব কম দেশ গ্রহণ করে। কারণটা খুব সহজ, যুক্তরাষ্ট্র নির্বিচারে শুল্কের অপব্যবহার করছে, তার মানে সারা বিশ্বের সঙ্গে যুদ্ধ শুরু করেছে। শুল্ক চাপের মুখে, শান্তি আসবে না; বিভাজন ও বিচ্ছিন্নতার মুখে, আপোসরফা সম্মানজনক হবে না। এটাই বিভিন্ন দেশের মতামত।
এছাড়া মার্কিন অর্থ বাজার সম্প্রতি গুরুতর আঘাত পেয়েছে। অর্থনৈতিক বিষয়ে মার্কিন নেতার প্রতি সমর্থনের হার তাঁর প্রেসিডেন্ট মেয়াদের সর্বনিম্ন হচ্ছে।
বর্তমানে, এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের ঐতিহ্যবাহী মিত্ররাও যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যিক বুলিংয়ের বিরুদ্ধে লড়াই করার দৃঢ় সংকল্প ব্যক্ত করেছে। ইইউ দ্রুত পাল্টা ব্যবস্থা নিয়েছে। কানাডা বলেছে যে, কানাডা-যুক্তরাষ্ট্র ‘সম্পর্কের ঘনিষ্ঠ যুগ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে’। অস্ট্রেলিয়া বলেছে যে, দেশটি কোনোভাবেই যুক্তরাষ্ট্রের কাছে নতি স্বীকার করবে না। এই মেয়াদের মার্কিন সরকার শপথ গ্রহণের পর, গুরুত্বপূর্ণ নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক বিষয়ে বার বার মিত্র দেশের স্বার্থকে বিক্রি করেছে, মিত্র দেশগুলো ওয়াশিংটনকে আর বিশ্বাস করছে না।
যুক্তরাষ্ট্র যে চীনের বিরুদ্ধে একটি শুল্ক ইউনিয়ন গঠন করতে চায়, তবে পাশ্চাত্য প্রধান অর্থনৈতিক গোষ্ঠী এখনো তাতে সাড়া দেয় নি। বরং, ব্রিটিশ অর্থ মন্ত্রী র্যাচেল রিভস সম্প্রতি তথ্য মাধ্যমকে বলেন, চীনের থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া খুব বোকার মতো আচরণ। চীনের সঙ্গে সহযোগিতা করা ব্রিটেনের স্বার্থের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ।
এর সঙ্গে অনেক অর্থনৈতিক গোষ্ঠী সক্রিয়ভাবে পরিবর্তন করছে। সরবরাহ চেইন ও শিল্প কাঠামো পুনর্গঠনের মাধ্যমে ঝুঁকি প্রতিরোধ করতে চায়।
গত সপ্তাহে, চীনের শীর্ষনেতা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার তিনটি দেশ সফর করেছেন। চীন সংশ্লিষ্ট দেশের সঙ্গে ব্যাপক ঐকমত পৌঁছেছে। তারা সহযোগিতা জোরদার করবে, যৌথভাবে ঝুঁকি ও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে, যৌথভাবে বহুপক্ষীয় বাণিজ্য ব্যবস্থা রক্ষা করবে। সম্প্রতি চীন-ইউরোপ আর্থ-বাণিজ্য কর্মকর্তাদের ভিডিও আলোচনায়, দু’পক্ষের বাণিজ্যিক সম্পর্কের ওপর গুরুত্বারোপ করার ওপর জোর দিয়েছে ইউরোপ।
বর্তমানে, চীন ১৫০টিরও বেশি দেশ ও অঞ্চলের প্রধান বাণিজ্যিক অংশীদার। চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে, চীনের পণ্য আমদানি-রপ্তানি আকার ১০.৩ ট্রিলিয়ন ইউয়ান ছাড়িয়েছে, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১.৩ শতাংশ বেশি। এর মধ্যে রপ্তানি বেড়েছে ৬.৯ শতাংশ। যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য বুলিংয়ের সামনে, চীন সবার আগে পাল্টা ব্যবস্থা নিয়েছে, যা শুধু দেশের স্বার্থ ও জাতির মর্যাদাই রক্ষা করছে না, বরং আন্তর্জাতিক আর্থ-বাণিজ্যিক শৃঙ্খল ও ন্যায্যতা রক্ষা করে। চীন অব্যাহতভাবে উন্মুক্তকরণ সম্প্রসারণ করছে, বৈদেশিক পুঁজি আকর্ষণের সুবিধা নীতি চালু করছে। বেনজ, বিএমডাব্লিউ, অ্যাপেলসহ বিভিন্ন আন্তঃদেশীয় প্রতিষ্ঠান চীনে পুঁজি বিনিয়োগের কথা বলেছে।
যুক্তরাষ্ট্র যেভাবেই দেয়াল তৈরি করুক এবং বিচ্ছিন্নতাবাদের চেষ্টা করুক না কেন, অর্থনৈতিক বিশ্বায়নের ধারা অপরিবর্তনীয়। আমাদের কি আমেরিকান হুমকির কাছে নতি স্বীকার করা উচিত, নাকি সহযোগিতার উপর জোর দেওয়া উচিত? প্রতিটি দেশের একটি সীমা রয়েছে।
অবশ্যই, যদি কেউ চীনের স্বার্থ নষ্ট করে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করে, চীন নিশ্চয় পাল্টা ব্যবস্থা নেবে। নিঃসন্দেহে চীন নিজের স্বার্থ রক্ষায় সক্ষম।
সূত্র : শুয়েই-তৌহিদ-জিনিয়া,চায়না মিডিয়া গ্রুপ।
সম্পাদক ও প্রকাশক: কামরুজ্জামান জনি
Copyright © 2025 Muktirlorai | মুক্তির লড়াই. All rights reserved.