শাহিনুর রহমান পিন্টু, ঝিনাইদহ
ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে মাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের হাতে শতভাগ সরকার প্রদত্ত বিনামূল্যের পাঠ্যবই না পৌঁছালেও স্কুলে স্কুলে পৌঁছে গেছে লেকচার পাবলিকেশন্স কোম্পানী কর্তৃক প্রদত্ত নোট গাইড বইয়ের তালিকা। শিক্ষার্থীদের হাতে অবৈধ নোট গাইডের এই তালিকা তুলে দেওয়ার কাজটি করছে অনিবন্ধিত কথিত নামধারী মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতি ও স্ব স্ব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা। গত ক বছর ধরে এ সমিতি বই কোম্পানীর নিকট থেকে মোটা অংকের টাকা নিয়ে নিজেদের মধ্যে ভাগবাটোরা, ভুড়িভোজ ও বার্ষিক বনভোজন করে আসছে।
* সরকারি বই সব না পেলেও নোট গাইডের তালিকা শিক্ষার্থীদের হাতে।
* মোটা অংকের টাকা নিয়ে শিক্ষক সমিতি চালাচ্ছে নিষিদ্ধ নোট গাইড।
* সমিতির নেতা এবং শিক্ষরা সরাসরি জড়িত।
* অভিভাবকদের চরম ক্ষোভ প্রকাশ।
সব জেনেও কর্তৃপক্ষ নিচ্ছে না কোনো ব্যবস্থা।
চলতি বছর মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি (ভারপ্রাপ্ত) মান্দারবাড়িয়া চাঁদপাড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কামরুজ্জামান কামাল ও সাধারণ সম্পাদক চাচড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক হারুন অর রশিদ বই কোম্পানীর নিকট থেকে মোটা অংকের টাকা গ্রহণের জন্য ৪ সদস্যের একটি যাচাই-বাছাই কমিটি গঠন করেন। এই চার জন সদস্য হলেন- মোবারক আলী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের লাইব্রেরিয়ান তরিকুল ইসলাম, রায়গ্রাম বাণীকান্ত মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের লাইব্রেরিয়ান পলাশ মুখার্জী, সুন্দরপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোস্তাফিজুর রহমান ও বিএইচএ বি মুন্দিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মহসিন আলী।এই কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী লেকচার পাবলিকেশন্স লিমিটেড কোম্পানির নোট গাইড এ বছর বিদ্যালয়সমূহে চালানোর সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।বর্তমান সরকার ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত বিনামূল্যে শিক্ষার্থীদের হাতে বই পৌঁছে দিচ্ছে।
প্রতিটি শ্রেণীর বাংলা ব্যাকরণ এবং ইংরেজী গ্রামার বইও বিনামূল্যে প্রদান করা হয়েছে। অথচ লেকচার কোম্পানীর বাংলা ব্যাকরণ ও ইংরেজী ব্যাকরণ এবং সহায়ক বইয়ের নামে নিষিদ্ধ নোট গাইড শিক্ষার্থীদের কেনার জন্য বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে লেকচার পাবলিকেশন্স কোম্পানীর প্রতিনিধি এবং শিক্ষকদের সহায়তায় শ্রেণিকক্ষে গিয়ে শিক্ষার্থীদের হাতে ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে বইয়ের তালিকা। এখনো পর্যন্ত সরকারি বিনামূল্যের বই পরিপূর্ণরূপে শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছায়নি। অথচ চড়া মূল্যের অবৈধ নোট গাইড শিক্ষার্থীদের কেনানোর জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে সমিতিভুক্ত শিক্ষকরা। আর ওই তালিকা ধরে বই কিনতে লাইব্রেরীগুলোতে ছুটছেন অভিভাবকরা। এতে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করছেন তারা।খোজ নিয়ে জানা যায়, শিক্ষক সমিতির সহায়তায় হাট বারোবাজার, বিএইচএবি মুন্দিয়া, একতারপুর, চাপরাইল, এবং বালিয়াডাঙ্গা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে বিভিন্ন শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের মাঝে বইয়ের তালিকা ইতিমধ্যে প্রদান করা হয়েছে।
পর্যায়ক্রমে বাকি স্কুলগুলোতেও করা হবে বলে জানা যায়। আর এসব দেখভাল করার দায়িত্বে থাকা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের একাডেমিক সুপারভাইজার আব্দুল আলিম যেন কিছু দেখেও দেখেন না।সমিতির নেতাদের সাথে তার রয়েছে দারুণ সখ্যতা। বার্ষিক পরীক্ষার সময় শিক্ষক সমিতি বই কোম্পানীর নিকট থেকে প্রশ্ন ক্রয় করে তা স্কুলে স্কুলে বিক্রি করে মোটা অংকের বাণিজ্য করেছিল। শিক্ষক সমিতির এসব দৌরত্বের ব্যাপারে উপজেলা আইন শৃঙ্খলা মিটিংয়ে বারবার বলা হলেও তা আমলে নেওয়া হয়নি। এমনকি এ নিয়ে গণমাধ্যমেও একাধিকবার সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। তবুও দায়িত্বশীলদের নীরব ভূমিকা প্রশ্ন তুলেছে সচেতন মহলে। বিধিবহির্ভূতভাবে নিষিদ্ধ নোট গাইড চালানো এসব শিক্ষকদের খুটির জোর আসলে কোথায়?
সাজিদুর রহমান নামের একজন অভিভাবক জানান, আমার সন্তান দশম শ্রেণীর একজন শিক্ষার্থী। তার স্কুল থেকে হলুদ রঙের একটি বইয়ের তালিকা দিয়েছে। ওই তালিকা অনুযায়ী বইগুলো কিনতে প্রায় ছয় হাজার টাকা খরচ হবে আমার। স্কুলে সরকারি বই না পড়িয়ে কেন নোট গাইড পড়ানো হবে? স্যারেরা তো ঠিকমতো ক্লাসই করায় না। ব্যবসা খুলে বসেছে। এসব কেউ দেখেও না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষক জানান, এবার নতুন সিলেবাস হওয়ায় নাকি প্রায় অর্ধ কোটি টাকা রয়েলিটির বিনিময়ে সমিতি ২০২৫ শিক্ষাবর্ষে লেকচারের গাইড ধরিয়েছে। এমনকি যাচাই-বাছাই কমিটিতে থাকা প্রতিজনকে নাকি এক লক্ষ করে টাকাও দেওয়া হয়েছে। শিক্ষকদের অনেকেই নোট গাইড চালানোর বিপক্ষে। কোম্পানী থেকে নেওয়া টাকা অতি সামান্য যোগ হয় সমিতিতে,বাকি সব ভাগ করে খেয়ে ফেলে। কিন্তু শিক্ষক সমিতির কতিপয় নেতার চাপাচাপিতে বই চালাতে বাধ্য হতে হয় আমাদের।
এবার বই ধরানোর জন্য জোরপূর্বক সভাপতি হয়েছেন কামরুজ্জামান কামাল সাহেব। তিনি কতিপয় অসৎ শিক্ষকদের সাথে নিয়ে মোটা টাকার লোভে এসব কাজ করে বেড়াচ্ছেন। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষরাও নীরব। হয়তো তাদেরকেও ম্যানেজ করেছে টাকা দিয়ে। নোট গাইড ধরানোর যাচাই-বাছাই কমিটিতে থাকা শিক্ষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়,আমরা কমিটিতে ছিলাম সত্য। কোম্পানীর বই যাচাই বাছাই করে সমিতিকে জানিয়েছি। তারা লেকচার কোম্পানির বই ধরিয়েছে। তবে কমিটির সদস্যরা কোম্পানি কর্তৃক টাকা পাওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন।
কালীগঞ্জ মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি (ভারপ্রাপ্ত) কামরুজ্জামান কামাল জানান,এখনো বই চূড়ান্ত হয়নি।কোম্পানির লোক স্কুলে বইয়ের তালিকা দিতে পারে।
মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে সমিতির মাধ্যমে নিষিদ্ধ নোট গাইড চালানোর বিষয়টি তিনি সম্পূর্ণ অস্বীকার করেন। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (অ.দা) দীনেশ চন্দ্র পালের নিকট অবৈধ নোট গাইড বইয়ের তালিকা স্কুলে স্কুলে দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে আমার জানা নেয়।সরকার বই দিচ্ছে যেখানে সেখানে নিষিদ্ধ নোট গাইড চালানোর কোনো নিয়ম নেই। আমি রবিবার বিষয়টি দেখছি। বর্তমানে অধিকাংশ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পরিচালনা পরিষদের সভাপতি এবং কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দেদারুল
সম্পাদক ও প্রকাশক: কামরুজ্জামান জনি
Copyright © 2025 Muktirlorai | মুক্তির লড়াই. All rights reserved.