শাহিন আলম আশিক
পুরো বাংলাদেশ আজ এক নিস্তব্ধ হাহাকারে স্তব্ধ। ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান হাদির শাহাদাত জাতিকে এক অপার্থিব শোকের সাগরে নিমজ্জিত করেছে। প্রতিটি জনপদ, প্রতিটি রাজপথ আজ বাকরুদ্ধ; দেশপ্রেমিক জনতার দীর্ঘশ্বাসে ভারী হয়ে আছে বাংলার আকাশ। কিন্তু এই শোক কি কেবলই চোখের জল ফেলার জন্য? না, এই শোক আসলে শোষণের শৃঙ্খল ভাঙার এক আগ্নেয়গিরির বিস্ফোরণ। হাদির এই আত্মত্যাগ আমাদের অস্তিত্বের মূলে এক প্রচণ্ড নাড়া দিয়ে আমাদের এক নতুন মুক্তির লড়াইয়ের সামনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে।
শহীদ শরীফ ওসমান হাদি শুধু একজন লড়াকু তরুণ ছিলেন না, তিনি ছিলেন ভারতীয় আধিপত্যবাদ ও হেজিমনি বিরোধী লড়াইয়ের এক অবিনাশী কণ্ঠস্বর। আজ যে গভীর শোক আমাদের আচ্ছন্ন করে আছে, তাকে স্থবিরতায় পর্যবসিত হতে দিলে চলবে না। এই শোকই হোক আমাদের শপথ। রাষ্ট্র যখন অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক চতুর্মাত্রিক সংকটে জর্জরিত, তখন প্রতিটি যুবককে হয়ে উঠতে হবে দেশ রক্ষার একেকটি অপরাজেয় হাতিয়ার। বিলাপ নয়, বরং ইস্পাতকঠিন সংকল্পই হোক আমাদের পথচলার শক্তি।
ইতিহাস সাক্ষী, এই বাংলার মাটি কখনো পরশক্তির দাসত্ব মেনে নেয়নি। ১৯৭১ সালে আমাদের পূর্বপুরুষরা আত্মমর্যাদা রক্ষায় যে সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন, তার মূল ভিত্তি ছিল সার্বভৌমত্ব।
যেকোনো পরাশক্তির নগ্ন হস্তক্ষেপ কিংবা কোনো আঞ্চলিক হেজমনি এ দেশের মাটিতে অতীতেও যেমন ধোপে টেকেনি, ভবিষ্যতেও টিকবে না। যারা বিদেশি প্রভুদের দালালি করে দেশমাতৃকার অখণ্ডতা নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে চায়, তাদের জেনে রাখা উচিত—বাংলার ইতিহাসে দালালের স্থান কখনো হয়নি, হবেও না।
আমরা আজ এক ঐতিহাসিক ক্রান্তিলগ্নে দাঁড়িয়ে। একদিকে সীমানার ওপার থেকে আসা আধিপত্যবাদী চোখ রাঙানি, অন্যদিকে দেশীয় ষড়যন্ত্রকারীদের কূটচাল। এই মহাসংকট উত্তরণের একমাত্র পথ হলো দেশপ্রেমিক জনতার ইস্পাতকঠিন ঐক্য। প্রতিটি যুবককে আজ হাদির মতো নির্ভীক চিত্তে দাঁড়িয়ে প্রমাণ করতে হবে যে, বাংলাদেশ কোনো শক্তির ক্রীড়ানক নয়। এই লড়াই আমাদের মর্যাদা রক্ষার লড়াই, এই লড়াই আমাদের বেঁচে থাকার লড়াই।
শহীদ শরীফ ওসমান হাদির রক্ত আমাদের ধমনিতে এক নতুন তেজ সঞ্চার করেছে। সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে কোনো আপস নেই—এই হোক আমাদের ইশতেহার। আসুন, এই শোককে আমরা দেশপ্রেমের অগ্নিমন্ত্রে রূপান্তর করি। প্রতিটি ঘরে ঘরে গড়ে উঠুক সার্বভৌমত্ব রক্ষার দুর্গ। আধিপত্যবাদের বিষদাঁত ভেঙে দিতে বাংলার তারুণ্য আবারও প্রমাণ করুক—বাংলাদেশ কখনো মাথা নত করতে জানে না এবং জানবে না।
শোক হোক শক্তি, মুক্তিই হোক লক্ষ্য।
সম্পাদক ও প্রকাশক: কামরুজ্জামান জনি
Copyright © 2025 Muktirlorai | মুক্তির লড়াই. All rights reserved.