ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে রাতের আধারে ফসলি জমির মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে আশুগঞ্জ উপজেলায়। এযেন দেখার কেউ নেই।
সরাইল-নাসিরনগর-লাখাই আঞ্চলিক সড়কের দু’পাশে নোয়াগাঁও কালীকচ্ছ মৌজার হাওরে রয়েছে সরকারী জায়গায় গোচারণ ভূমি। কৃষকরা সেখানে অস্থায়ী ঘর নির্মাণ করে ধান, খড় শুকায়।
আর সেখানকার মাটি ভেকু দিয়ে কেটে বিক্রি করছেন স্থানীয় এক শ্রেণির লোকজন। তারা ফসলি জমির মাটিও কেটে বিক্রি করছেন। প্রতি রাতের আধাঁরে ১৫-২০ টি অত্যাধুনিক বিশাল আকৃতির ট্রাক দিয়ে এই মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে পার্শ্ববর্তী আশুগঞ্জ উপজেলায়।
সরজমিনে অনুসন্ধান ও স্থানীয় কৃষক সূত্র জানায়, শনিবার রাত ১০ টায় সড়কের পাশের হাওরে বাতি জ্বলছে। ৩-৪ টি ভেকু মাটি কাটছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে লোড করছেন অত্যাধুনিক (ডাম্পিং) ট্রাক। মাটি নিয়ে হাওর থেকে একসাথে সড়কে ওঠছে ৩-৪ টি ট্রাক। চালক আলমগীর (ট্রাক নং-ঢাকা মেট্রো-ট-২২-৬৯৭৮) ও জুনায়েদ (ট্রাক নং- ঢাকা মেট্রো-ট-২২-৬৩৯০) বলেন, ফসলি জমির মাটি আশুগঞ্জের তালশহরে ইটভাটায় নিচ্ছি। সন্ধ্যার পর থেকে রাত ৩ টা-৪ টা পর্যন্ত মাটি বহন করি।ঘন্টায় দেড়শত টাকা পায়। এখানে মাটির ঠিকাদার উসমান মিয়া, আওয়াল ও কবির নামের কয়েকজন। উনারা মাটি বিক্রি করছেন। আমাদের কাছে কোন কাগজপত্র নেই। দিনে সড়কে জ্যামের কারণে রাতে মাটি টানছি।
শিবলু নামে আরেক চালক (ট্রাক নং- যশোর-ট-১১-৫৪৭৩) বলেন, সড়কের ফোরলেনের কাজে মাটি আশুগঞ্জ যাচ্ছে। আমরা কোম্পনীর কাজ করছি। এখানকার স্থানীয় কয়েকজন ঠিকাদার মাটি বিক্রি করছেন।
চালক রাজন (ট্রাক নং- ঢাকা মেট্রো-ট-১৫-৭৮৯৩) ও চালক রুবেল (ট্রাক নং- ঢাকা মেট্রো-ট-২৪-৪৫৯৭) বলেন, আশুগঞ্জের তালশহরে বাড়ির ভিটা ভরাটের জন্য মাটি নিচ্ছেন তারা। অনেকে এই মাটি নিয়ে পুকুরও ভরাট করছেন। সারা রাতই মাটি টানেন তারা, কাগজপত্রের কথা আমরা বলতে পারব না।
স্থানীয় একাধিক কৃষক বলেন, স্থানীয় কিছু লোক দীর্ঘদিন ধরে গোচারণ ভূমির মাটি বিক্রি করছেন। এ গুলি নাকি সরকারী জায়গা তাই কেউ বাধা দেয় না। তবে আমাদের অনেক ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে। মাঠে গরুর ঘাস খাওয়ার জায়গাও ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। বৈশাখ মাসে বাতান (কুড়ে ঘর) বানিয়ে এখানে ধান ছুড়ি। রোদে দিয়ে ধান শুকাই। বাতান গুলোও কেটে গর্ত করা হইতাছে। ফলে আগামীতে আমরা ধান নিয়ে বিপাকে পড়ব। জমির উর্বরতা শক্তিও কমে যাচ্ছে।
জনৈক এক পথচারী বলেন, রাতের বেলা ওই ট্রাক গুলো থেকে মাটি সড়কে পড়ে। এটেল মাটি হওয়ায় কূঁয়াশায় পিচ্ছিল হয়ে যায়। মানুষ ও যান চলাচলের ব্যাঘাত ঘটে। অনেক সময় দূর্ঘটনাও ঘটছে।
আওয়াল মিয়া ফসলি জমির মাটি কাটার কথা স্বীকার করে বলেন, জমির মূল মালিক ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নয়ন মিয়া, আমরা তদারকি করছি। তিনি জমি কেটে পুকুর করছেন। তাই সড়কের কাজে ইন্ডিয়ান কোম্পানীর কাছে মাটি বিক্রি করছেন। আমরা ইটভাটায় মাটি দেই না।
সরাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ সরওয়ার উদ্দীন বলেন, সরাইলের মাটি আশুগঞ্জে নেয়ার কোন অনুমতি আমি দেইনি। আমাকেও কেউ জানায়নি,ফসলি জমির মাটি কাটা বেআইনী।সরকারী জায়গার মাটিও কেউ কাটার অধিকার রাখেন না। আমি বিষয়টি দেখছি প্রয়োজনে ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সম্পাদক ও প্রকাশক: কামরুজ্জামান জনি
Copyright © 2025 Muktirlorai | মুক্তির লড়াই. All rights reserved.