সোনালী অতীত
সেন্টু রঞ্জন চক্রবর্তী, আগরতলা
কি করে ভুলি?
তবুও ভুলেই থাকতে হয়,
মনের মাঝে কি রকম ক্ষত বয়ে বেড়াই
সেটি কেউ জানেনা,
শৈশব থেকে যাদের পরম স্পর্শ পেয়ে, মায়া, স্নেহ আদর ও শাসনে আমি বেড়ে উঠেছি
সে কথা আজ কেবলি অতীত হলেও
আমার স্মৃতিতে এখনো জীবন্ত উপাখ্যান।
সেই পুকুর পার ধরে ভয়ে ভয়ে স্কুলে যাওয়ার পথে
জুজু বুড়ির ভয় লাগিয়ে দেয়া ঠাকুম্মা মরে গেছেন অনেক আগেই,
সময়ে অসময়ে রাত বিরাতে পানের বাটার কর্কশ শব্দে ঘুম ভেঙে যাওয়া বিরক্তিটা আজ আর নেই,
কিন্তু,
পিতলের সেই বাটা আজো অযত্নে পরে আছে ঘরের কোনে
আজ ওর কোনো মর্যাদা নেই, কোনো শব্দও নেই তার, শান্ত হয়ে অসহায় হয়ে আছে
ঝকঝকে শরীরে মরচে ধরেছে তার।
বিকেল হলে গ্রামের পশ্চিমের খোলা মাঠে গোল্লাছুট, কানামাছি, দাঁড়িয়াবাধা,খর কিংবা জাম্বুরার বল খেলা
কি যে আনন্দময় সময় ছিলো,
মোহর আলী, সিরাজ, সুলতান, পদু, রাখালেরা ছিলো আমার উত্তম জুটি
শুনেছি ওদের অনেকেই নেই,
যে মাঠে দৌড়াতাম সেখানে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে প্রাসাদের সারি
অদ্ভুত এক উন্নতি আর পরিবর্তনে বিলীন হয়ে গেছে আমাদের সোনালী অতীত।
প্রতিভা'র কথা খুব মনে পরে
বনেদি পরিবারের মেয়ে হলেও সে ছিলো আমার পছন্দের সাথী,
শুনেছি
আজ সে শাশুড়ি হয়ে বিরাট সংসার সামলাচ্ছে,
ফোনে একবার কথা হয়েছিলো অনেকদিন আগে,
তারপর কেটে গেছে কতটা বছর
তার আর কোনো খবর নেই
আছে কি নেই জানতে চেয়ে সকল চেষ্টাই ব্যর্থ হয়েছে।
চৈত্রের দুপুরে ঘুড়ি উড়ানো
মগডাল হতে ঘুঘুর ছানা নিয়ে আসা
জেঠুর গাছে ঢিল ছুড়ে পালিয়ে লিচু খাওয়া
এই সব নৈমিত্যিক রুটিন ধরে নির্ভুল চালিয়ে যাওয়া দিনগুলি মাঝে মাঝে চোখের সামনে ভেসে উঠে,
আজো মনে আছে ঘরের কোনে লুকিয়ে রাখা বেত
যা দিয়ে নিয়ত সন্ধ্যায় ভিন্ন রকম কার্যক্রম চলতো গোপনে সেটা সরিয়ে নেয়ার গুধূলির কথা।
ঘরের কোনে চুড়ুই এর ব্যস্ততা
খোপের ভিতরে পায়রার বাকুমবাকুম
মাঠের মাঝখানে বটের ডালে বসে বাঁশের বাঁশির সুর, মাল্লাদের দরদী কণ্ঠে পল্লীগীতি, ভাওয়াইয়া
উঠানে জারি সারি, পুঁথিপাঠ কি এক বৈচিত্রময় অতীত আমাদের হারিয়ে গেছে কালের অতল অতলে,
শীতের সকালে পিঠেপুলি, খেজুরের রসের পায়েসের বাটি, রোদে বসে হাঁক দিয়ে পড়ার সে সকাল আজ আর নেই।
আমরা অনেকেই আজ যান্ত্রিক জীবনে অভ্যস্ত
নিয়ম করে সময় ভাগ করে নেওয়া
কিংবা
সবাইকে পরাজিত করে নিজে ফেফেফুলে উঠার দৌড়ে আমাদের প্রাণ আজ ওষ্ঠাগত,
বিরামহীন এ ছুটে চলার সময়ে পেছনের দিকে আমি মাঝে মাঝে তাকিয়ে দেখি
আর ভাবি
হে আমাদের বিপন্ন জীবন
অন্ততঃ একবারের জন্য হলেও ফিরিয়ে দাও আমাদের সোনালী অতীত।
সম্পাদক ও প্রকাশক: কামরুজ্জামান জনি
Copyright © 2025 Muktirlorai | মুক্তির লড়াই. All rights reserved.